ভয়েস অব সাতক্ষীরা ডেস্ক :
‘কারিগরিনির্ভর’ একটি ভর্তি পদ্ধতি প্রথমবারের মতো চালু করতে গেলেও কোনো ‘কারিগরি প্রস্তুতি’ই ছিল না ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের। এমনকি ভর্তিচ্ছুদের আবেদন বিবেচনা করার জন্য নিজেদের কোনো সফটওয়্যারও নেই বোর্ডের। ফলে ২০১৫-২০১৬ সেশনে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তির জন্য ‘স্মার্ট অ্যাডমিশন সিস্টেম’ চালু করলেও ১২ লাখ আবেদন সময়মতো নিষ্পত্তি করতে পারেনি বোর্ড। বোর্ডের নিজস্ব কোনো সফটওয়্যার নেই। এজন্য বুয়েটের ‘ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি’কে (আইআইসিটি) দায়িত্ব দেওয়া হয়।
ভর্তি প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত আইআইসিটির ছয় কর্মকর্তা প্রাথমিকভাবে ধারণা করেছিলেন, আবেদনকারীর সংখ্যা তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ হতে পারে। এ জন্য অনলাইন ও মোবাইল ফোনের এসএমএসের মাধ্যমে আবেদনও গ্রহণ করা হয়। তবে শেষ মুহূর্তে সারাদেশের সব কলেজকে এর সঙ্গে যুক্ত করায় আবেদনকারীর সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় ১১ লাখ ৫৬ হাজারে। এত বিপুল আবেদনকারীর তথ্য প্রক্রিয়াজাত করতে গিয়েই সার্ভার ডাউন হয়ে কারিগরি ত্রুটির কবলে পড়ে ভর্তি প্রক্রিয়া। সমকালের অনুসন্ধানে এ তথ্য জানা গেছে।
জানতে চাইলে ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু বক্কর ছিদ্দিক প্রকারান্তরে স্বীকার করে নেন বোর্ডের নিজস্ব কোনো কারিগরি প্রস্তুতি ছিল না। অন্যদিকে ভর্তি প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত বুয়েটের একজন কর্মকর্তা বলেন, বোর্ডের পক্ষ থেকে তাদের ধারণা দেওয়া হয়েছিল আবেদনকারীর সংখ্যা তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ হবে। তারা সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়েছেন। এত আবেদনকারীর তথ্য বিশ্লেষণ করতে হবে জানলে তারা আরও সময় চাইতেন। ঢাকা বোর্ডের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, তারা নিজেরাও ভেবেছিলেন আবেদনকারীর সংখ্যা কম হবে। কারণ, ৩০০-এর নিচে আসন থাকা কলেজগুলোতে অনলাইনে ভর্তির সিদ্ধান্ত ছিল না।
সভায় সব কলেজকে অনলাইন ভর্তি পদ্ধতির আওতায় আনার নির্দেশ দেওয়া হলে তারা আপত্তি তুলেছিলেন। তবে সে আপত্তিতে কর্ণপাত করা হয়নি। এই কর্মকর্তা জানান, এবার মোট ১১ লাখ ৫৬ হাজার শিক্ষার্থী একাদশ শ্রেণীতে ভর্তির আবেদন করেছে। তবে একাধিক আবেদন করার সুযোগ থাকায় তাদের আবেদন নিষ্পত্তি করতে হয়েছে মোট ৩৩ লাখ। তাছাড়া একেকজন শিক্ষার্থীর চয়েস বাছাইয়ের জন্য অনেক ‘চয়েস অপশন’ রয়েছে। সব তথ্য একসঙ্গে সমন্বয় করতে গিয়ে বুয়েটের তৈরি করা ওই প্রোগ্রামে জটিলতা দেখা দেয়। আর এতেই ধাক্কা খায় স্মার্ট ভর্তি পদ্ধতি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ভর্তি নিয়ে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সামাল দিতে রাজধানীর কয়েকটি কলেজে একাদশ শ্রেণীর আসন সংখ্যা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। লালমাটিয়া মহিলা কলেজে ৩০০ আসন বাড়ানো হচ্ছে। তেজগাঁওয়ে সরকারি বিজ্ঞান কলেজে বাণিজ্য শাখা খুলে আসন বাড়ানো হচ্ছে। আরও আটটি কলেজে আসন বাড়ানোর বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা চলছে।
প্রথম মেধা তালিকার সংকট এখনও কাটেনি: প্রথম মেধা তালিকার ভর্তিচ্ছুদের ফাঁড়া এখনও কাটেনি। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২৮ জুন রাতে মেধা তালিকা প্রকাশের পর ভর্তির জন্য দুই দিন মাত্র সময় দেওয়া হয়। তবে ওই দুই দিনে বেশিরভাগ কলেজেই মেধা তালিকা পেঁৗছেনি। পরদিন ১ জুলাই ‘ব্যাংক জুন ক্লোজিং’ হওয়ায় ভর্তিচ্ছুরা টাকা জমা দিতে পারেনি। এরপর বোর্ডের পক্ষ থেকে শুক্র ও গতকাল শনিবার দু’দিন সময় বাড়িয়ে দেওয়া হলেও গত দু’দিন ব্যাংকগুলোতে ছিল সাপ্তাহিক ছুটি। ফলে ভর্তি হতে পারেনি অনেকে। আবার, ভর্তিচ্ছুদের দুর্ভোগকে বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে কিছু কলেজ কর্তৃপক্ষ। অভিভাবকদের কাছ থেকে গলাকাটা ফি আদায় করছে তারা। অন্যদিকে, রাজধানীর সরকারি কবি নজরুল কলেজ ও সোহরাওয়ার্দী কলেজে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে ভর্তিচ্ছুদের কাছ থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ভর্তি বাবদ নির্ধারিত ফি ছাড়াও ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত বাড়তি টাকা আদায় করা হচ্ছে তাদের কাছ থেকে।
শিক্ষামন্ত্রীর বাসায় বৈঠক, আজ ব্রিফিং: এদিকে, ভর্তি নিয়ে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির উত্তরণ নিয়ে গতকাল শনিবার সকালে হেয়ার রোডে শিক্ষামন্ত্রীর বাসায় এক দীর্ঘ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। মন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সভাপতিত্বে সকাল ১০টায় শুরু হয়ে এ বৈঠক চলে দুপুর প্রায় আড়াইটা পর্যন্ত। এতে শিক্ষা সচিবসহ ঢাকা, কারিগরি ও মাদ্রাসা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত ও যুগ্ম সচিব পর্যায়ের ছয় কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। সভায় কী কারণে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হলো তা নিয়ে আলোচনা হয়। সভা সূত্র জানায়, আলোচনার এক পর্যায়ে শিক্ষা সচিব নজরুল ইসলাম খান বলেন, স্মার্ট ভর্তি পদ্ধতির উদ্দেশ্য ভালো ছিল।
কাজ করতে গেলে কিছু ভুল-ত্রুটি হতেই পারে। কিন্তু ভর্তি নিয়ে ঢাকা বোর্ডের এক শ্রেণীর কর্মকর্তা তাকে সহায়তা করেননি। উল্টো তার বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের কাছে তথ্য দিয়ে ওই কর্মকর্তারা খবর তৈরি করিয়েছেন। বলা হচ্ছে, মন্ত্রী-সচিব দ্বন্দ্ব হচ্ছে। সচিব বলেন, মন্ত্রণালয়ের নথি কীভাবে সাংবাদিকদের হাতে গেল? কারা তা দিল? তিনি আরও বলেন, বোর্ড থেকে মন্ত্রণালয়ে দেওয়া অনেক তথ্যও ভুল ছিল। ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে আসন সংখ্যা দুই হাজার হলেও বোর্ড মন্ত্রণালয়ে তথ্য পাঠিয়েছে, সেখানে মাত্র আড়াইশ’ আসন রয়েছে। শিক্ষা সচিবের এ বক্তব্যের জবাবে ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু বক্কর ছিদ্দিক বলেন, ভিকারুননিসা কলেজ কর্তৃপক্ষই বোর্ডে এ তথ্য দিয়েছে।
সভায় নানা আলোচনা শেষে সিদ্ধান্ত হয়, আজ রোববার সকাল ১০টায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক প্রেস ব্রিফিং করে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ভর্তি নিয়ে মন্ত্রণালয়ের অবস্থান তুলে ধরবেন।
নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, শুক্রবার রাতে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ নিজেই শিক্ষা সচিবের ৩৮ মিন্টো রোডের বাসায় যান। সেখানে ভর্তি নিয়ে তারা দু’জন একান্তে দীর্ঘ আলাপ করেন।