শিশু-কিশোরদের গভীরভাবে দেশকে ভালোবাসতে বললেন প্রধানমন্ত্রী


392 বার দেখা হয়েছে
Print Friendly, PDF & Email
শিশু-কিশোরদের গভীরভাবে দেশকে ভালোবাসতে বললেন প্রধানমন্ত্রী
মার্চ ২৬, ২০১৮ জাতীয় ফটো গ্যালারি
Print Friendly, PDF & Email

অনলাইন ডেস্ক ::
শিশু-কিশোরদের দেশের প্রতি গভীর ভালবাসা ও মমত্ববোধ নিয়ে বেড়ে উঠে বিজয়ী জাতি হিসেবে বিশ্বে আত্মমর্যাদা নিয়ে চলার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস-২০১৮ উপলক্ষে সোমবার সকালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ঢাকা জেলা প্রশাসন আয়োজিত শিশু-কিশোর সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ আহ্বান জানিয়ে শিশু-কিশোরদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘সবসময় নিজেদের বিজয়ী জাতি হিসেবে চিন্তা করে আত্মপ্রত্যয় নিয়ে চলবে, তোমরাই এ দেশকে গড়ে তুলবে, এগিয়ে নিয়ে যাবে।’ খবর বাসসের

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই দেশকে গভীরভাবে ভালোবাসবে। আগামী দিনে এই দেশকে তোমরা গড়ে তুলবে। আমরা যেখানে রেখে যাবো সেখান থেকে তোমরাই দেশকে আরো উন্নতির পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে।’

তিনি শিশু-কিশোরদের লেখাপড়া শিখে মানুষের মতো মানুষ হয়ে বাবা-মায়ের মুখ উজ্জ্বল করার এবং শিক্ষকদের কথা মেনে চলারও আহ্বান জানান।

সরকার শিক্ষার্থীদের আধুনিক প্রযুক্তি শিক্ষায় দক্ষ করে গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ‘আজকের শিশু তোমরা, যারা এখানে উপস্থিত এবং যারা সারাদেশে রয়েছে— সবাইকে আমি এটাই বলবো, আজকের শিশুইতো আগামীর দিনের ভবিষ্যৎ।’

তিনি বলেন, তার মতো প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে বড়-বড় বিজ্ঞানী, খেলোয়াড়, সংস্কৃতি কর্মী— অনেক কিছুই এই শিশুরা হতে পারবে।

আজকের শিশু-কিশোরদের ভবিষ্যৎ যাতে সুন্দর হয় ও উজ্জ্বল হয় সেই কামনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠারও অন্যতম লক্ষ্য ছিল।

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘জাতির পিতা আমাদেরকে স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন, এখন আমাদের লক্ষ্য এই বাংলাদেশকে বিশ্ব সভায় মর্যাদার আসনে নিয়ে আসা। ইতোমধ্যে আমরা স্বল্পন্নোত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হতে পেরেছি। কারো কাছে হাত পেতে নয়, কারো কাছে মাথানত করে নয়, আমরা মর্যাদার সঙ্গে বিশ্বে চলবো। কারণ, আমরা মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী জাতি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের স্বাধীনতার লক্ষ্য ছিল, যেটা জাতির পিতা চেয়েছিলেন- বাংলাদেশের সকল মানুষ উন্নত জীবন পাবে। সুন্দর জীবন পাবে এবং ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়ে উঠবে।

জাতির পিতা মাত্র সাড়ে ৩ বছর সময় হাতে পেয়েছিলেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই সময়ের মধ্যে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে দেশকে তিনি স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা দিয়ে যান।

শেখ হাসিনা পঁচাত্তরের বিয়োগান্তক অধ্যায় স্মরণ করে বলেন, ‘আমাদের দুঃখের বিষয় পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি এবং তার ছোট বোন শেখ রেহানা বিদেশে অবস্থান করায় সে সময় প্রাণে বেঁচে যান এবং ৬ বছর রিফিউজি হিসেবে বিদেশে কাটাতে হয়। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তাকে (শেখ হাসিনা) ১৯৮১ সালে দলের সভাপতি নির্বাচিত করায় তিনি বাংলাদেশে ফিরে আসেন।

সরকার প্রধান বলেন, বাংলাদেশে আসার পর বাংলাদেশের জনগণের দুঃখ-দুর্দশা ঘোচানো আর এদশের ছোট্ট ছোট্ট শিশু-কিশোরদের জন্য একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে তোলাই ছিল তার লক্ষ্য। যে লক্ষ্য বাস্তবায়নেই কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।

২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে আসলে অনেক উন্নয়নমূলক কাজ হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, আর ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হবার পরই দিনবদলের সনদ বাস্তবায়নের মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার ঘোষণা দেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, আজকের বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ। আজকে বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার কমেছে।

এ সময় শিশুদের বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ, ২ কোটি ৩ লাখ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি-উপবৃত্তি প্রদান, প্রাইমারি পর্যায়ে ১ কোটি ৩০ লাখ শিক্ষার্থীর বৃত্তির টাকা মায়েদের মোবাইল ফোনে পাঠিয়ে দেওয়া, সারাদেশে নতুন-নতুন স্কুল কলেজ স্থাপন এবং পুরনোগুলোর সংস্কার ও আধুনিকায়ন, কম্পিউটার ল্যাব ও মাল্টিমিডিয়া ক্লাস রুম স্থাপনসহ শিক্ষার সম্প্রসারণ ও মানোন্নয়নে সরকারের নানা উদ্যোগ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ প্রশ্নে তাঁর সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির পুনরুল্লেখ করে বলেন, যারা অভিভাবক, শিক্ষক এবং মসজিদের ইমামরা আছেন তারা সবসময় একটা বিষয় রক্ষ্য রাখবেন- আপনাদের সন্তানেরা কোনভাবেই যেনো সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ এবং মাদকাসক্তিতে আসক্ত না হয়। তারা যেন মন দিয়ে লেখাপড়া শেখে। মানুষের মতো মানুষ হয়। এই প্রচেষ্টা প্রত্যেকটি অভিভাবক-পিতা-মাতাকেই করতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, ২০২১ সালে যখন আমরা স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তী পালন করবো তখন বাংলাদেশ হবে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত দেশ। ২০২০ সালে আমরা আমাদের মহান নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী পালন করবো, আর ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে দক্ষিণ এশিয়ায় উন্নত- সমৃদ্ধ দেশ। আর সেই দেশ আমরা ইনশাল্লাহ গড়ে তুলবো।

তিনি শিশু-কিশোর সমাবেশে অংশগ্রহণকারীদের আদর, দোয়া এবং আশির্বাদ জানিয়ে সকলের সুস্থ ও সুন্দর জীবন প্রত্যাশা করেন এবং দেশকে উন্নত সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলতে সকলের সহযোগিতাও কামনা করেন।

প্রধানমন্ত্রীকে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ থেকে রাষ্ট্রীয় সালাম জানানো হয়। প্রধানমন্ত্রী সালাম গ্রহণ করেন এবং কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন। এ সময় গ্যালারিতে মনোমুগ্ধকর ডিসপ্লে প্রদর্শিত হয়।

মঞ্চে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক উপস্থিত ছিলেন। ঢাকার জেলা প্রশাসক আবু সালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উদ্যোগে সারাদেশের স্কুল-কলেজ এবং মাদ্রাসা পর্যায়ে শুদ্ধসুরে জাতীয় সংঙ্গীত গাওয়া প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যেও পুরস্কার বিতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে আন্তঃশ্রেণি প্রতিযোগিতা থেকে শুরু করে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, জেলা এবং জাতীয় পর্যায়ে অনুষ্ঠিত এই প্রতিযোগিতায় প্রতিযোগীর সংখ্যা ছিল প্রায় ১ কোটি ৫০ লাখ।

তিনটি ক্যাটাগরিতে বিজয়ী ১১০ জন শিক্ষার্থীর মাঝে প্রধানমন্ত্রী দলগতভাবে স্বর্ণ, রোপ্য ও ব্রোঞ্জপদক প্রদান করেন।

অনুষ্ঠানে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এবং প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন নিয়ে একটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শিত হয়।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে শিশু-কিশোর সমাবেশের উদ্বোধন করেন। এরপরই সমবেত কণ্ঠে শুদ্ধসুরে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশিত হয়।

অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাবৃন্দ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত এবং কূটনীতিকবৃন্দ, সরকারের পদস্থ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।