শিশু-কিশোরদের হার্ণিয়া ও প্রতিকার : ডা: শেখ আবু সাঈদ শুভ


3198 বার দেখা হয়েছে
Print Friendly, PDF & Email
শিশু-কিশোরদের হার্ণিয়া ও প্রতিকার : ডা: শেখ আবু সাঈদ শুভ
নভেম্বর ১১, ২০১৫ ফটো গ্যালারি স্বাস্থ্য
Print Friendly, PDF & Email

হার্ণিয়া কি ?
পেটের প্রাচীরের মধ্যে কোন দুর্বল অংশের মধ্যে দিয়ে পেটের ভেতরের কোন অংশ পেটের বাইরে চামড়ার নীচে একটি ফোলা অংশের মত অবস্থান করে (যেমনঃ ইনগুইনাল হার্নিয়ার ক্ষেত্রে কুচকির গোড়ায় ফোলা বা অন্ডকোষ ফোলা)।
এটি একটি অতি সাধারন রোগ। ১-৪% শিশু এ রোগ নিয়ে জন্মাতে পারে। অপরিনত বয়সের বাচ্চাদের ক্ষেত্রে তা ৩০% পর্যন্ত্য হতে পারে।
বাচ্চাদের বিভিন্ন ধরনের হার্ণিয়া হতে পারে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশী দেখা যায় ইনগুইনাল হার্নিয়া (ওহমঁরহধষ ঐবৎহরধ) । এছাডা আমবিলিক্যাল হার্ণিয়া, প্যারা-আমবিলিক্যাল হার্ণিয়া, এপিগ্যাস্ট্রিক হার্ণিয়া উল্লেখযোগ্য। এখানে সবচেয়ে কমন ইনগুইনাল হার্নিয়া নিয়ে আলাপ করব।

কিভাবে বুঝবেন যে আপনার বাচ্চার হার্ণিয়া আছে?
গোছল করাতে গিয়ে দেখলেন আপনার বাচ্চার কুচকির গোড়া অথবা অন্ডকোষের থলি ফুলে আছে। কান্নাকাটি করলে ফোলাটা বেশী হচ্ছে সেক্ষেত্রে আপনি ধরে নিতে পারেন আপনার বাচ্চার জন্মগত হার্ণিয়া আছে। অনেক ক্ষেত্রে প্রথম অবস্থায় বোঝা না গেলেও বাচ্চা বড় হলে এ সমস্যা ধরা পড়তে পারে। সেক্ষেত্রে কাশি দিলে বা হাটাচলা করলে বাড়ে আর ঘুমিয়ে পড়লে কমে যায়, এমনকি একেবারেই স্বাভাবিক মনে হতে পারে। সাধারনতঃ এতে কোন ব্যথা বেদনা থাকেনা।

কেন হয়?
মায়ের পেটে থাকাকালীন সময়ে বাচ্চার পেটের ভেতরের সাথে অন্ডকোষের বাইরে কিন্তু থলির ভিতরে একটি ফাকা যায়গার যোগাযোগ থাকে একটি নালীর মাধ্যমে। জন্মের সাথে সাথেই এটি বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু কারো কারো ক্ষেত্রে এ নালীটি বন্ধ হয়না। তখন এ নালীর মাধ্যমে পেটের নাড়ী কুচকির চামড়ার নীচে বা অন্ডকোষের থলিতে প্রবেশ করে।

জটিলতাঃ
হার্নিয়া যে কোন সময়ে আটকে যেতে পারে। অর্থাৎ নাড়ীর যে অংশ পেটের বাইরে ছিল সেটি আর ভেতরে যাবেনা, চেষ্টা করলেও না। এটা একটা খুবই খারাপ অবস্থা। এ  অবস্থার নাম অবস্ট্রাক্টেড হার্ণিয়া (ঙনংঃৎঁপঃবফ ঐবৎহরধ) এ অবস্থায় সাথে সাথেই রোগীকে শিশু সার্জনের সাথে যোগাযোগ করতে হবে জরুরী ভিত্তিতে অপারেশান করার জন্য। অপারেশান করতে বেশী দেরী হলে নাড়ীতে পচন ধরতে পারে।

কিভাবে বুঝবেন যে আপনার বাচ্চার হার্ণিয়াতে জটিলতা হয়েছে?
১. এতদিন যেটা সহজে ভেতরে চলে যেত এখন তা চাপ দিয়ে ধরলেও যাবেনা।
২. পেটে ব্যথা
৩. বমি হওয়া
৪. ফোলা স্থান লাল হয়ে যাওয়া
৫. পেট ফুলে যাওয়া

চিকিৎসাঃ
১. স্বাভাবিক অপারেশন ঃরোগ নির্ণয হবার পর সুবিধা জনক সময়ে অপারেশান। তবে বেশী দেরী না করাই ভাল। সেটা যদি ১ মাস বয়সের বাচ্চাও হয়।
২. জরুরী অপারেশন ঃ জটিলতার ক্ষেত্রে (পুর্বে বর্ণিত)। এক্ষেত্রে রোগ নির্ণয়ের সাথে সাথে অপারেশন।

অভিভাবকদের কিছু সাধারণ প্রশ্নের উত্তর ঃ
১. কেন আমার বাচ্চার অপারেশন লাগবে, যেখানে তার কোন ব্যথা বা অন্য কোন সমস্যা নেই?
– এ ধরনের বাচ্চাদের যে কোন সময় জটিলতা হতে পারে। আগেই বলেছি এ সম্পর্কে। এক্ষেত্রে অপারেশন খরচ অনেক বেড়ে যায়। তার চেয়েও বড় কথা হল অপারেশনের সময় যদি দেখা যায় যে নাড়ীতে পচন ধরেছে তখন একজন শিশু সার্জন ঐ পচনকৃত অংশকে কেটে জোড়া লাগিয়ে দেন। কোন কোন ক্ষেত্রে সেটাও সম্ভব হয়না। তখন পেট দিয়ে সাময়িক পায়খানার রাস্তা করে দেন। পরে আরেকটি অপারেশান করে সেটি বন্ধ করে দেন। তারপরও অপারেশন পরবর্তী জটিলতা হতে পারে এমনকি বেশী দেরীতে অপারেশন করলে মৃত্যুর ঝুঁকিও থাকে।
২. বাচ্চা একটু বড় হলে অপারেশন করলে কোন সমস্যা হতে পারে?
– আমার পেশাগত জীবনে সর্বনিন্ম ৪২ দিন বয়সে হার্ণিয়া আটকানোর (ঙনংঃৎঁপঃরড়হ) রোগী অপারেশন করেছি।
###

লেখক-

ডাঃ শেখ আবু সাঈদ শুভ
এমবিবিএস, এমএস (শিশু সার্জারী)
নবজাতক, শিশু-কিশোর বিশেষজ্ঞ সার্জন
সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সাতক্ষীরা
মোবাইল- ০১৭২৯-৫৭৬ ৫৭৬