
স্টাফ রিপোর্টার :
দেশ ব্যাপী আলোচিত দশ বছর বয়সী গৃহকর্মী শিশু বীথিকে শারীরিক ও মানষিক নির্যাতনের ঘটনায় সাতক্ষীরার বিচারিক হাকিম মো: নুরুল ইসলাম ও তার স্ত্রী নাতাশার বিরুদ্ধে সাতক্ষীরা থানায় মামলার জন্য লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়েছে। বীথির বাবা গোলাম রসুল বাদী হয়ে মঙ্গলবার গভীর রাতে মামলাটি থানায় জমা দেন। পুলিশ অভিযোগপত্র থানায় জমা দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করলেও বুধবার সকাল পর্যন্ত মামলাটি রেকর্ড হয়নি বলে জানান। সাতক্ষীরা সদর থানার ডিউটি অফিসার এএসআই আনসার আলী বুধবার সকালে ভয়েস অব সাতক্ষীরা ডটকমকে জানান, এ ব্যাপারে এখনও মামলা রেকর্ড হয়নি।
মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১ টা ১৫ মিনিটে বীথির বাবা মাগুরা জেলার শালিখা উপজেলার বড় আমিনিয়ার গ্রামের গোলাম রসুল বিশ্বাস সাতক্ষীরা থানায় যেয়ে মেয়ের উপর বর্বর নির্যাতনের বিচার চেয়ে লিখিত অভিযোগপত্র জমা দেন।
সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এমদাদ শেখ ভয়েস অব সাতক্ষীরা ডটকমকে জানান, অভিযোগপত্র মঙ্গলবার হাতে পেয়েছি। মামলা রেকর্ড করার ব্যাপারে পর্যালচনা চলছে। কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
লিখিত ওই অভিযোগে বাদি গোলাম রসুল উল্লেখ করেছেন, এক বছর দুই মাস আগে তার গ্রামের রুস্তম আলি বিশ্বাসের ছেলে,সাতক্ষীরা জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের কর্মচারি সোহরাব হোসেন ওরফে সাগর তার মেয়ে বীথিকে ভালকাজ ও পাশাপাশি লেখাপড়ার ব্যবস্থা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বাড়ি থেকে নিয়ে আসে। পরে সে বীথিকে সাতক্ষীরার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো: নুরুল ইসলামের পলাশপোলের ভাড়া বাড়িতে গৃহকর্মী হিসাবে রেখে দেয়। এর পর থেকে তার মেয়ের সাথে দেখ করতে দেয়া হয়নি। এমনকি ফোনে কথা বলার সুযোগও দেওয়া হয় নি। এক পর্যায়ে বাধ্য হয়ে তিনি গত ১৭/০৫/২০১৫ তারিখে স্বশরীরে সাতক্ষীরাতে এসে অনেক চেষ্টার পর সাতক্ষীরার তৎকালীন চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিতাই চন্দ্র সাহা’র রুমে তার মেয়েকে দেখতে পান। কিন্তু সেখানে তেমন কথা বলার সুযোগ পাননি তিনি।
গত ১৯ অগাস্ট তিনি জানতে পারেন যে তার মেয়ে বীথিকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেছেন সাতক্ষীরা আদালতের বিচারিক হাকিম নুরুল ইসলাম ও তার স্ত্রী নাতাশা। গুরুতর আহত এবং অসংখ্য ক্ষত চিহ্নসহ সাতক্ষীরার প্রধান বিচারিক হাকিম নিতাই চন্দ্র সাহা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সদর(সার্কেল) এএসপি, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং সাংবাদিক ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা তাকে উদ্ধার করে সাতক্ষীরা হাসপাতালে ভর্তি করেছেন।
খবর পেয়ে তিনি ওই দিন রাতেই তিনি সাতক্ষীরা হাসপাতালে এসে তার কঙ্কালসার হাড়জিরজিরে মেয়েকে দেখতে পান।
অভিযোগেপত্রে মামলার বাদী বিচারিক হাকিম নুরুল ইসলাম ও তার স্ত্রী নাতাশাসহ নির্যাতনের সাথে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে এজাহার গ্রহণের জন্য আবেদন করেছেন। গোলাম রসুল তার আবেদনটিকে এজাহার হিসাবে গণ্য করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অনুরোধ জানিয়েছেন। মেয়ের শারীরিক চিকিৎসা এবং পারিবারিক কারণে মামলা করতে বিলম্ব হয়েছে বলে অভিযোগপত্রে করেছেন।
প্রসঙ্গত, ১৯ অগাস্ট ১০ বছর বয়সী গৃহকর্মী বীথিকে বিচারিক হাকিম নুরুল ইসলাম ও তার স্ত্রী নাতাশার ভাড়া বাসা থেকে দেহে অসংখ্য ক্ষত চিহ্নসহ উদ্ধার করা হয়। এ সময় মুখ্য বিচারিক হাকিম নিতাই চন্দ্র সাহা, পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা ও সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন। পরে তাকে সাতক্ষীরা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বীথি এখনও সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।