
ইব্রাহিম খলিল :
ছয় গ্রামের মানুষ একটি পুকুরের উপরের নির্ভরশীল। দিন-রাত এই পুকুর থেকেই পানি নিয়ে যান সবাই। এই পানি খেয়েই বেঁচে থাকে মানুষ। শুনতে অবাক লাগলেও সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার মুন্সীগঞ্জ ইউনিয়নের নেকজানিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডাকবাংলোর পুকুর থেকে শুধুমাত্র খাবার পানি সংগ্রহ করতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন কিশোর-কিশোরীসহ গ্রামের নারী-পুরুষরা। এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, মুন্সীগঞ্জ, চুনা, পানখালী, আবাদ চন্ডিপুর, কলবাড়ি, পার্শ্ববর্তী বুড়িগোয়ালিনীর মানুষ ডাকবাংলোর পুকুরের পানি খেয়ে জীবনধারণ করে।
এই পুকুর থেকেই কলস ভরে পানি নিয়ে যাওয়ার পথে কথা হয় নেকজানিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী শাহিদা খাতুনের সাথে। সে জানায়, তিন কিলোমিটার দূরে আবাদ চন্ডিপুর গ্রাম থেকে খাবার পানি নিতে এসেছে সে। প্রতিদিন সে, তার মা ও বাবা ভাগাভাগি করে খাওয়ার পানি নিয়ে যায় ডাক বাংলোর পুকুর থেকে।
কোলে বাচ্চা নিয়ে পানি নিতে এসেছিলেন পানখালীর গৃহবধূ সালেহা। কতদিন ধরে পুকুরের পানি খাচ্ছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, যুগ যুগ ধরে। এলাকার পানি লোনা। খাওয়া যায় না। এই পুকুরের পানিতেই জীবন বাঁচে তাদের। শুধু কিশোরী শাহিদা বা গৃহবধূ সালেহা নয়, ডাকবাংলোর সামনের সড়কে দাড়ালে দেখা মেলে এমন সারি সারি মানুষের।
এই এলাকার বৃদ্ধ আজিজুর রহমান জানান, এলাকার সব নলকূপে লবণ পানি ওঠে। সারাবছর পুকুরের পানি খেয়েই বাঁচতে হয় তাদের। আবার সব পুকুরে যে পানি আছে তা নয়, এবছর বৃষ্টি হয়নি। তাই মিষ্টি পানির আধারগুলো এখন শূন্য প্রায়। যা আছে, তা খাওয়া যায় না। কেবলমাত্র ডাকবাংলোর পুকুরে একটু ভাল পানি আছে। তাই সব চাপ এই পুকুরের উপরই। কিন্তু তাতেও নিশ্চিন্ত নয় তারা, সুন্দরবনে বনভোজনে এসে সবাই ডাকবাংলোর পুকুরের উপর অত্যাচার চালায় বলে অভিযোগ করেন আজিজুর রহমান। তবে, শুধু মুন্সীগঞ্জ বা বুড়িগোয়ালিনী নয়, গোটা সুন্দরবন উপকূলজুড়েই যেমন লবণাক্ততা, তেমনি খাবার পানির তীব্র সংকট বলে জানান কলবাড়ির প্রবীণ ব্যক্তি হেমন্ত। তিনি বলেন, শ্যামনগর উপজেলার দু’একটি ইউনিয়ন বাদে সব জায়গাতেই নলকূপে লোনা পানি ওঠে। সারাবছরই তাদের পুকুরের পানি খেয়ে বেচে থাকতে হয়। বর্তমানে বড় লোকেরা পানি কিনে খায় বলে জানান তিনি।
তবে, ছয় গ্রামে খাবার পানির পুকুর যে মাত্র একটি তা কিন্তু নয়। ২০০৯ সালে প্রলয়ংকারী জলোচ্ছ্বাস আইলায় নষ্ট হয়ে যায় এলাকার মিষ্টি পানির আধারগুলো। এরপর কিছু কিছু পুকুর সংস্কার করা হলেও শুষ্ক মৌসুমে পানি থাকে না। তাইতো একটি পুকুরের উপর নির্ভরশীলতা ছয় গ্রামের মানুষের।