শ্যামনগরে পর্যটনের মূল বাধা বেহাল সড়কপথ


425 বার দেখা হয়েছে
Print Friendly, PDF & Email
শ্যামনগরে পর্যটনের মূল বাধা বেহাল সড়কপথ
মার্চ ১৫, ২০১৮ ফটো গ্যালারি শ্যামনগর
Print Friendly, PDF & Email

বিজয় মন্ডল ::
পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ব-দীপ বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের ৬০১৭ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে রয়েছে সুন্দরবন। সুন্দরবন নিয়ে সারা বিশ্বের মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই। সুন্দরবন বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের জন্য অপার সম্ভাবনাময় একটি নিদর্শন। এই সুন্দরবন বঙ্গোপোসাগর তীরবর্তী বাংলাদেশের দক্ষিণাংশের মোট পাঁচ জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, বরগুনা এবং পটুয়াখালী জেলা জুড়ে বিস্তৃত। সুন্দরবন বিস্তৃত জেলা গুলোর মধ্যে সাতক্ষীরা অংশের রয়েছে আলাদা বৈশিষ্ট্য। তা হলো এই জেলার উপজেলা গুলোর মধ্যে একটি মাত্র উপজেলা শ্যামনগরে রয়েছে সুন্দরবনের একটি বৃহৎ অংশের অবস্থান। সে কারনেই হয়তো শ্যামনগর উপজেলা হয়েছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উপজেলা। এই শ্যামনগরে প্রবেশের সাথে সাথেই অনেক পর্যটকের কৌতূহল মিটতে শুরু করে কারন এখানে খুব কাছ থেকে সড়ক পথ থেকেই সুন্দরবনের সন্দর্য উপভোগ করা যায়। এই অংশে সুন্দরবনে প্রবেশের জন্য রয়েছে বড় নদী, ছোট ছোট নদী, রয়েছে অনেক ছোট বড় খাল, এখানে সরকারী বেসরকারি উদ্দোগে সুন্দরবনের ভিতরে বাইরে অনেক দর্শনীয় স্থান গড়ে তোলা হয়েছে। তাছাড়া শ্যামনগরের মানুষ এখানে আগত পর্যটকদের নিয়ে কখনও বিরূপ অবস্থার সৃষ্টি করেছে এরকম নজির নেই। বলা যায় এখানকার মানুষ অন্য এলাকার চেয়ে একটু বেশি অতিথিপরায়ন। এরকম অনেক বৈশিষ্ট্যই রয়েছে। কিন্তু তারপরও সুন্দরবনের অন্য অঞ্চল গুলোর তুলনায় এই অঞ্চলে তুলনামূলক ভাবে কম পর্যটক এসে থাকেন। তার কারন হলো এই এলাকায় আসার মূল মাধ্যম সড়ক পথের যুগের পর যুগ ধরে বেহাল অবস্থায় পড়ে থাকা। অবস্থা এমন যে কেউ একবার এখানে এলে, শুধু সড়কপথের বেহাল অবস্থার কারণেই দ্বিতীয়বার আসার কথা ভুলেই যান। স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত কেউ সাতক্ষীরা জেলা শহর থেকে সুন্দরবন অদুরের শ্যামনগর মুন্সিগঞ্জ পর্যন্ত প্রধান সড়কটি পুরোপুরি ভালো দেখতে পেরেছে বলে মনে হয়না। কিছু জায়গায় দায়সারা সংস্কার় হয়তো, কিছু জায়গায় নতুন করে খানা খন্দক দেখা দিয়েছে। তাছাড়া রাস্তার অপ্রসস্ততা তো রয়েছেই। সামগ্রিক কারণে এখানে দূর্ঘটনা নিত্য রীতিতে পরিনত হয়েছে। তারপরেও তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে সাথে সুন্দরবনও নানা ভাবে মানুষের সামনে আসতে থাকে। মানুষের কৌতূহল- আগ্রহের সীমাটাও বাড়তে থাকে। সে কারণে দিন দিন সুন্দরবনের সাতক্ষীরার শ্যামনগর অংশে পর্যটকদের সংখ্যা বাড়ছে। তার আলাদা বৈশিষ্ট্যের কারনে। পর্যটকদের সংখ্যা বাড়ার সাথে সরকারের রাজস্ব বাড়তে শুরু করেছে এই খাত থেকে, এই শিল্পকে ঘিরে এখানকার মানুষের জীবনমানও পাল্টাতে শুরু করেছে। অনেক বিনিয়োগ হচ্ছে এখন এই এলাকায়। একসময় এখানকার মানুষ সুন্দরবন বা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এই ‘ম্যানগ্রোভ ফরেষ্ট্র’ কে বাদা বা জঙ্গল হিসেবে অবিহিত করতো। আর এই বাদা বা জঙ্গলই তাদের উপার্জনের সবচেয়ে বড় মাধ্যম বলে মনে করতো। তারা সুন্দরবনকে নিজেদের প্রযোজন মতো ব্যবহার করতো। বিনষ্ট করতো সুন্দরবনকে, কোন সচেতনতা কাজ করতো না তাদের মধ্যে। শুধু নিজেদের প্রয়োজনের বিষয়টাই ছিল মূখ্য। সময়ের সাথে সাথে এই এলাকার মানুষের মধ্যে পরিবর্তন এলো। তারা বুঝতে পারলো সুন্দরবন তাদের বিভিন্ন দূর্যোগ থেকে রক্ষা করছে, তারা দেখতে শুরু করলো তারা যাকে শুধু নিজেদের উপার্জনের ক্ষেত্র ভাবে তা দেখতে দূর দেশ থেকেও মানুষ বিশাল অর্থ ব্যায়ে এখানে আসছে, বিনিয়োগকারিরা এই এলাকায় বিনিয়োগের জন্য আসছেন, নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে। এরকম বিষয়গুলো এ এলাকার মানুষদের মধ্যে আমূল পরিবর্তন এনেছে। এখানকার বেশিরভাগ মানুষ এখন সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল না হয়ে, পৃথিবী বাসির জন্য তা উৎসর্গ করছে এবং বিকল্প পথে কর্মসংস্থানের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করছে। বহু বছরের পরিক্রমায় হলেও এই এলাকার মানুষ গুলো পাল্টালো। কিন্তু পাল্টালো না এই এলাকায় প্রবেশের সড়কপথের দৃশ্যপট।