সর্বশেষ সাতক্ষীরায় এসে যা বলেছিলেন দেশ বরেণ্য সাংবাদিক তোয়াব খান


167 বার দেখা হয়েছে
Print Friendly, PDF & Email
সর্বশেষ সাতক্ষীরায় এসে যা বলেছিলেন দেশ বরেণ্য সাংবাদিক তোয়াব খান
অক্টোবর ২, ২০২২ ফটো গ্যালারি সাতক্ষীরা সদর
Print Friendly, PDF & Email

২০১৬ সালের ডিসেম্বরে সর্বশেষ জন্মস্থান সাতক্ষীরায় এসেছিলেন বরেণ্য সাংবাদিক তোয়াব খান। সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের তৎকালীন সভাপতি এড. আবুল কালাম আজাদ ও সাধারণ সম্পাদক এম কামরুজ্জামানে আমন্ত্রণে তিনি ১৪ ডিসেম্বর রাতে প্রেসক্লাবে এলে তাঁকে সংবর্ধনা প্রদান করা হয় : ফাইল ছবি

ডেস্ক রিপোর্ট ::

দিন আসে দিন যায়। স্মৃতির খাতায় জমা হয় কত শত ঘটনা। স্মৃতির খাতায় ময়লা জমলেও অক্ষরগুলি একেবারে অস্পস্ট হয়ে মুছে যায় না। তাই কিছু স্মৃতি, কিছু প্রিয় মুখ মনের আয়নায় বারবার উঁকি দেয়। সদ্য প্রয়াত দৈনিক বাংলা’র সম্পাদক, সাতক্ষীরার কৃতি সন্তান, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রেস সচিব, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দ সৈনিক তোয়াব খানের স্মৃতির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা।

বাংলাদেশের সংবাদ জগতের প্রজ্জ্বলিত নক্ষত্র প্রথিতযশা সাংবাদিক তোয়াব খান সর্বশেষ সাতক্ষীরায় এসেছিলেন ২০১৬ সালের ১৪ ডিসেম্বর। দিনটি ছিল বুধবার। এদিন শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। তোয়াব খান তখন ছিলেন দৈনিক জনকন্ঠর উপদেষ্টা সম্পাদক।

সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সভাপতি ছিলেন আবুল কালাম আজাদ ও সাধারণ সম্পাদক এম কামরুজ্জামান । সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে এসে তোয়াব খান বলেছিলেন, সংবাদপত্রে যাবতীয় তথ্য উপাত্ত তুলে ধরে সংবাদটিকে প্রতিষ্ঠিত করা যাবে, তবে সাংবাদিক ও সংবাদপত্র কারও বিচার করার দায়িত্ব নিতে পারে না। একাজ সাংবাদিকের নয়, আদালতের। আজকাল বিভিন্ন প্রশ্ন করে সংবাদের প্রকৃতি অন্য দিকে ঘুরিয়ে বিশেষ জায়গায় নেওয়ার যে প্রবনতা দেখা যাচ্ছে তাও গ্রহণযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি। এ প্রসঙ্গে তিনি ১৯৭৬ সালের শেষ ভাগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নীহার বানু হত্যার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন।

তিনি আরও বলেছিলেন, চলমান প্রেক্ষাপট, মতাদর্শ ও দেশের অবস্থা যাই থাকুক না কেনো সত্য উদঘাটন, বিকাশ ও সংবাদ মাধ্যমে তা উপস্থাপন করাই দায়িত্ব একজন সাংবাদিকের। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন সংবাদপত্রে ‘ট্রুথ ইজ দ্য লাস্ট ওয়ার্ড’।

সাতক্ষীরার কৃতী সন্তান একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধকালে প্রবাসী সরকারের স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে পিন্ডির প্রলাপ’ এর উপস্থাপক বরেণ্য সাংবাদিক তোয়াব খানকে ২০১৬ সালের ১৪ ডিসেম্বর (বুধবার) সন্ধ্যায় সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে দেওয়া উষ্ণ সংবর্ধনার জবাবে তিনি এসব কথা বলেছিলেন।
তিনি আরও বলেছিলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে আমাদের পাঁচটি প্রত্যাশা স্বাধিকার রক্ষা, আমার ভাষা, আমার সংস্কৃতি, আমার কথা বলার অধিকার ও অসাম্প্রদায়িকতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ৩০ লাখ মানুষ জীবন দিয়েছে।

বর্তমান সময়ে সাংবাদিকতা পরিবর্তিত ও সম্প্রসারিত হয়েছে, লোক সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বিষয় বৈচিত্র্যে বিস্ফোরণ ঘটেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই পেশায় এখন অনেকেই আসছেন। কাগজ প্রকাশের সংখ্যাও বাড়ছে। সাংবাদিকদের দেশের স্বার্থ রক্ষার দায়িত্ব আছে, দেশের স্বার্থ বিরোধী কিছু করা সাংবাদিকের কাজ নয় বলে উল্লেখ করেন তিনি। তোয়াব খান এ প্রসঙ্গে জেফারসনের উক্তি তুলে ধরে বলেন, ‘স্টেটলেস নিউজ পেপার চাই, নাকি নিউজ পেপারলেস স্টেট চাই।’ তিনি সিন্ডিকেটেড নিউজ প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ‘বিশ্বখ্যাত কলামিস্ট ওয়াটার লিফটম্যানের লেখা ৭২টি সংবাদপত্রে প্রকাশিত হতো।

সিন্ডিকেটেড নিউজ বিপজ্জানক অবস্থার সৃষ্টি করে। তিনি বলেন, সংবাদ মাধ্যমটি যেমন, ভাষা ও গঠন তেমন হবে। এক্ষেত্রে ভাষার তফাৎ আছে বলে জানান তিনি। সাংবাদিকদের নির্দেশনা দিয়ে তিনি আরও বলেন, একই খবরের সকাল সন্ধ্যা নানা পরিবর্তন হতে পারে। সাংবাদিকের দায়িত্ব সমান গুরুত্ব দিয়ে তা তুলে ধরা। না হলে পাঠক প্রথম খবরটিই মনের মধ্যে ধারন করে রাখবেন। তিনি ম্যাক লোনের উদ্ধৃতি তুলে ধরে আরও বলেন, ‘মিডিয়া ইজ দ্য মেসেজ।’ অর্থাৎ গণমাধ্যমই বিষয়বস্তু। সাংবাদিকতা এখন আস্তে আস্তে ইলেকট্রনিক মাধ্যমে পরিণত হচ্ছে।

পাওয়ারফুল ক্যামেরার ছবি যেমন সমুদ্র তীরে পড়ে থাকা মৃত প্রেমিকের মৃত্যুর ভ্রান্তি যেমন দুর করে দিয়েছিল, তেমনি একজন সাংবাদিক তার সংবাদ নির্মাণের পাওয়ার কীভাবে ব্যবহার করছেন সেটাই বড় কথা বলে মন্তব্য করেন তিনি। এখন সংবাদ মাধ্যমে অনেকেই সংযুক্ত হচ্ছেন জানিয়ে তোয়াব খান বলেনবর্তমান আইনে যে কেউ সংবাদপত্র প্রকাশ করতে পারেন। তিনি বলেন পত্রিকা যিনিই বের করুন তিনি যেনো সাংবাদিকদের ন্যুনতম বেতন ভাতা নিশ্চিত করেন। তা না হলে তাদের অসাধু পথে চলে যাবার সম্ভাবনা থেকে যায়। তিনি প্রত্যেক সংবাদকর্মীকে আত্ম সচেতন হওয়া, দায়িত্ববোধ ধারন করা এবং পেশার বাহনকে বিপথে না নিয়ে যাবার নির্দশনা দেন।

তোয়াব খান তার দীর্ঘ বক্তৃতায় ১৯৪৭ পূর্ব সাংবাদিকতায় বৃটিশ বিরোধী দৃষ্টিভঙ্গী এবং ১৯৪৭ পরবর্তী সময়ে পাকিস্তানের ঔপনিবেশিক শাসন বিরোধীতার উল্লেখ করে বলেন, মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সাংবাদিকতায় গণতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গির বিকাশ ঘটেছে। তিনি বলেন, ইউরোপে সভ্যতার বিকাশের সাথে সাথে সংবাপত্রের বিকাশ ঘটেছে। আর আমাদের এ অঞ্চলে পুঁজির বিকাশের সাথে সাথে সংবাদ মাধ্যমের সম্প্রসারন ঘটেছে। সাংবাদিকতার অতীত বর্তমান ও ভবিষ্যত সম্পর্কে বলতে গিয়ে তোয়াব খান বলেন, বিজ্ঞাপন এখন একটি বড় ফ্যাকটর হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন মিডিয়ায় অনেক বিনিয়োগ প্রয়োজন।

১৯৭০ সালে ওয়েজ বোর্ড বিশেষজ্ঞ এআর খান তার রিপোর্টে উল্লেখ করেন যে, সুগার বার্নে ১৯ ভাগ মুনুাফা হলেও সংবাদপত্রে মুনুাফা হতো ৩৫ ভাগ। মানুষের সেবা করাই সাংবাদিকতার মূল উদ্দেশ্য উল্লেখ করে তোয়াব খান বলেন আজকের দিনে তথ্যের বিস্ফোরণ ঘটেছে। তথ্যের বিকাশ ঘটছে। মানুষ হয়ে মানুষের মতো কাজ করতে হবে উল্লেখ করে ৮৪ বছর বয়সের এই প্রবীন সাংবাদিক বলেন মানুষের সেবা করার জন্যই এই পেশা।

এর আগে একুশে পদকপ্রাপ্ত গুনী সাংবাদিক তোয়াব খান সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে এসে পৌছালে তাকে স্বাগত জানান প্রেসক্লাবের সভাপতি এড. আবুল কালাম আজাদ ও সাধারণ সম্পাদক এম কামরুজ্জামানের নেতৃত্বাধীন কমিটিসহ প্রেসক্লাবের সদস্য ও সাংবাদিকবৃন্দ। তারা তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো ছাড়াও ক্রেস্ট দিয়ে সম্মানিত করেন।

প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সভাপতি এড. আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে তাকে ঘিরে অনুষ্ঠিত স্মৃতিচারণ আসরে আরও বক্তব্য রাখেন তোয়াব খানের সহোদর বীর মুক্তিযোদ্ধা ওবায়দুল কবির খান বাচ্চু, দৈনিক কালের চিত্র সম্পাদক ও প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ আবু আহমেদ, সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ আনিসুর রহিম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম কামরুজ্জামান, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আবুল কাসেম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক জনকন্ঠ প্রতিনিধি মিজানুর রহমান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান উজ্জ্বল প্রমুখ সাংবাদিক। অনাড়ম্বর এই অনুষ্ঠানে প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি (সদ্য প্রয়াত) সুভাষ চৌধুরী তোয়াব খানের আত্মকথার খুঁটিনাটি এবং ২০০১ সালে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে এসে তিনি যে স্মৃতিচারণমূলক বক্তব্য দিয়েছিলেন তা তুলে ধরেন। এসময় প্রেসক্লাবের নবীন প্রবীন সকল সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন।

#