
মোঃ আব্দুর রহমান :
আব্দুল মোতালেব শুধু একটি নাম নয়! তিনি একজন সাংবাদিক, একজন শিক্ষক, একজন গবেষক, একজন সমাজ সেবক, একজন লেখক, একজন রাজনীতিক, একজন সাহিত্যক এবং সর্বপরি একজন সম্পাদক। শুধু তাই নয়- একজন সংগঠকও বটে! ২০০২ সালের ২ জুন ঢাকার সিকদার মেডিকেল হাসপাতালে তিনি হার্ট স্টোকে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। এ পৃথিবীতে জন্ম গ্রহণ করলে তাকে মৃত্যু বরণ করতে হয়। কিন্তু কিছু কিছু মানুষের মৃত্যু আমাদের জীবনকে হিমালয়ের পর্বত্যের মতো ভারি করে দেয়। ঠিক তেমনি! তাঁর মৃত্যু আমাদের কাছে অত্যান্ত কষ্টকর। আমরা বিশ্বাস করতে পারিনা তিনি এ পৃথিবীতে নেই। শধু তাই নয়! সাতক্ষীরার প্রতিটি মানুষের মাঝে তিনি ছিলেন একজন অনুকরণীয় মানুষ হিসেবে।
তিনি আর কেউ নন, তিনি হলেন- সাতক্ষীরার প্রথম সংবাদপত্র দৈনিক কাফেলা’র প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ও সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মরহুম আব্দুল মোতালেব। ১৯৬৮ সাল থেকে নিজস্ব প্রেসের মাধ্যমে প্রকাশিত ‘সাপ্তাহিক কাফেলা’ পত্রিকাটি ১৯৯২সালে সাতক্ষীরার প্রথম দৈনিক পত্রিকা হিসাবে সমাজের মানুষের দর্পণ হিসাবে রুপান্তরিত হয়। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি, সাতক্ষীরা প্রেস ক্লাব, স্কাউটস, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, শিল্প কলা একাডেমি, সাংস্কৃতি পরিষদ, অন্ধ কল্যাণ সমিতিসহ বিভিন্ন সামাজিক, সংস্কৃতিক ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত ছিলেন। মরহুম আব্দুল মোতালেব ছিলেন বাংলাদেশ অবজারভার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের সাতক্ষীরা প্রতিনিধি। সর্বশেষ সাংবাদিকতায় তিনি ‘কেডিপিসিএফ পদক ২০১২’ পান। এছাড়া খুলনা অঞ্চলের বরেণ্য ১৬ জন সাংবাদিককে ‘কেডিপিসিএস পদক ২০১২’ প্রদান করা হয়। এঁরা হলেন, “মরণোত্তর কবি নাসির উদ্দীন আহমদ, লু.র জাহানগীর, আব্দুল মোতালেব, শহীদ স ম আলাউদ্দিন, আলী আশরাফ সিদ্দিক, শরীফ আব্দুল হাকিম ও কালীকিংকর বিশ্বাস মন্টু এবং শেখ হেমায়েত হোসেন, শওকত আকুঞ্জী, খান গোলাম মোস্তফা, মিয়া সাইদুর রহমান, নূরুজ্জামান মন্টু, আজাদ মালিতা, মাহতাব উদ্দিন, তোজাম্মেল আযম ও আশরাফুল ইসলাম।” আব্দুল মোতালেব শুধু সাংবাদিকতার দিকপাল ছিলেন না, বাংলাদেশের ইতিহাসে একজন শিক্ষানুরাগী ও সমাজ সংস্করক ছিলেন। খুলনা বিভাগের প্রায় ৩ শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে তিনি ইতিহাসের পাতায় অলংকিত হয়ে আছেন এবং থাকবেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানের মধ্যে- কুমিরা মহিলা কলেজ, সাতক্ষীরা দিবা নৈশ্য কলেজ, ছফুরন নেছা মহিলা কলেজ, আইনুদ্দীন মহিলা মাদ্রাসা, কুমিরা গালর্স হাইস্কুল, তালতলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, এ করিম মাধ্যমিক বিদ্যালয়, নবারুন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রাইমারী স্কুল, মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা। এছাড়া সাতক্ষীরা সিটি কলেজ, দাঁতভাঙ্গা কলেজ, ভালুকা চাঁদপুর কলেজ, সীমান্ত আদর্শ কলেজ, কলারোয়া সোনার বাংলা কলেজ, কারিমা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, শহীদ স্মৃতি ডিগ্রী কলেজসহ অসংখ্যা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি নানা ভাবে সহযোগিতা করেছিলেন। আজ ২ জুন ২০১৬ মরহুম আব্দুল মোতালেব সাহেবের ১৪ তম মৃত্যু বার্ষিকী। ১৯৩৯ সালে পশ্চিমবঙ্গের বসিরহাট জেলায় তিনি জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতা’র নাম আব্দুল হামিদ ও মাতা সফুন্নেসা বেগম। এই দিনে আমরা কি শুধু তাঁকে কাগজে-কলমে রাখবো? নাকি সাতক্ষীরা’র এই স্বপ্নদ্রষ্টার জীবন-আদর্শকে আমাদের চলার পথে সুষ্ঠু প্রয়োগের মাধ্যমে স্বদেশ ও জাতিকে রাহুমুক্ত করবো। আমি বিশ্বাস করি যদি সত্যিই আমরা চাই, তাহলে এই মহান মানুষটিকে স্মরণ করার মাধ্যমে আমরা নতুন পথের দিশা পাবো।
##
লেখক : সাংবাদিক ও সম্পাদক, মাসিক সাহিত্যপাতা।