
আব্দুর রহমান মিন্টু :
ডাইয়ের বিলে ছয় হাজার বিঘা জমিতে নোনা পানির চিংড়ি চাষ, না ধান চাষ হবে তা নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। চিংড়ি চাষের লক্ষ্যে স্থানীয় প্রভাবশালীদের দেওয়া বেড়িবাঁধ থাকবে, না কি তা অপসারন করা হবে এবং সরকারী খাস খাল দখলমুক্ত করা হবে কিনা এসব বিষয় সিদ্ধান্ত নিতে গঠন করা হয়েছে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি।
রোববার দুপুরে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আলোচিত ডাইয়ের বিলে চিংড়ি চাষের লক্ষ্যে বাঁধ দেওয়াকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট বিরোধ নিষ্পত্তিতে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত বিভিন্নজন তাদের মতামত তুলে ধরেন। এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসতে ১৫ দিনের সময় বেধে দিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করেই বিষয়টি নিষ্পত্তি করা হবে বলে অনুষ্ঠিত এই মতবিনিময় সভায় সিদ্ধান্ত দিয়েছেন সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক নাজমুল আহসান।
সমাবেশে জেলা প্রশাসক নাজমুল আহসান বলেন ‘জনস্বার্থ রক্ষাই বড় বিষয়। মানুষ যাতে জলাবদ্ধতার শিকার না হয় অথচ মিঠা পানির মাছ ও ধান চাষ করতে পারেন সেটিই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হবে। আমি কোন অবস্থাতেই মিঠা মাটিকে নোনা পানি ঢুকিয়ে নোনা মাটি করতে দেব না। জমির শ্রেণী পরিবর্তন করা দন্ডনীয় অপরাধ এ কথা স্বরন করিয়ে দিয়েই তিনি বলেন, গঠিত ৫ সদস্যের কমিটি আগামি ১৫ দিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট দেয়ার পর এ বিষয়ে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হবে।
জানা গেছে, গত এক মাসের কিছু বেশি সময় ধরে সাতক্ষীরা পৌরসভা সংলগ্ন ডাইয়ের বিলে একটি প্রভাবশালী মহল সরকারি নীতিমালাকে লংঘন করেই সুউচ্চ বেড়িবাঁধ দিয়েছে। নোনা পানি ঢুকিয়ে চিংড়ি চাষের লক্ষ্যে তারা ঘিরে ফেলেছে পুরো বিলটি। একই সাথে তারা দখল করে নিয়েছে সরকারী খাস খাল (ডায়েরের খাল)। বন্ধ করে দিয়েছে নয়টিরও বেশী কালভার্ট। এর ফলে সাতক্ষীরা পৌরসভা, ধুলিহর, ব্রক্ষ্মরাজপুর, লাবসা, বল্লী ও ঝাউডাঙা ইউনিয়নের বহু গ্রামের পানি নিষ্কাশন পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। এসব এলাকার সাড়ে তিন লাখ জনগোষ্ঠী জলাবদ্ধতার আশংকায় দিন কাটাচ্ছেন।
এদিকে এই বিলে বাঁধ দিয়ে নোনা পানির চিংড়ি চাষের পক্ষ নিয়ে সরকারদলীয় নেতা আওয়ামী লীগের আবু সাঈদকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠিত হয়েছে । অপরদিকে ভুক্তভোগী সাধারন জনগোষ্ঠীর চিংড়ি নয় ধান চাষের তত্ত্ব নিয়ে পক্ষ অবস্থান নিয়েছে মুক্তিােদ্ধা কাজী রিয়াজের নেতৃত্বাধীন নাগরিক উদ্যোগ কমিটি। জেলা প্রশাসকের কাছে দুই পক্ষ থেকেই স্মারকলিপি দিয়ে তাদের নিজ নিজ অবস্থান ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মত বিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন নাগরিক উদ্যোগের কাজী রিয়াজ ও বিল রক্ষা কমিটির সভাপতি আবু সাঈদ। এসময় আরও বক্তব্য রাখেন সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহ আব্দুল সাদী, পৌর মেয়র এমএ জলিল, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব সভাপতি অধ্যাপক আবু আহমেদ, নারী নেত্রী এ্যাড. শাহনাজ পারভিন মিলি, পৌর কাউন্সিলর ওসমান গনি মিন্টু, নোনা পানির চিংড়ি চাষ বিরোধী আন্দোলনের নেতা মুনমুন বাহার বুলবুল, ডে-নাইট কলেজ অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান,জিল্লুর রহমান, ।এছাড়া মিডিয়া কর্মীদের পক্ষে পর্যবেক্ষনমূলক বক্তব্য তুলে ধরেন এনটিভি ও যুগান্তরের জেলা প্রতিনিধি সুভাষ চৌধুরী,এটিএন বাংলা ও দৈনিক সমকাল নিজস্ব প্রতিনিধি,ভয়েস অব সাতক্ষীরা ডটকমের সম্পাদক এম কামরুজ্জামান, ৭১ টেলিভিশনের জেলা বরুন ব্যানার্জি প্রমুখ।
মতবিনিময় সভায় জানানো হয়, নোনা পানির চিংড়ি চাষের ফলে শত শত কৃষক কর্মহীন হয়ে পড়ছেন। এলাকাজুড়ে দেখা দিয়েছে পরিবেশগত বিপর্যয়। গবাদি পশু চারন থেমে যাওয়ায় মাংস ও দুধের সংকট দেখা দিয়েছে। ধান ও কাজ না পেয়ে মানুষ হয়ে উঠছে অসহায়। এছাড়াও ডাইয়ের বিলের পানি সাতক্ষীরা পৌর এলাকা সহ কয়েকটি স্থানে উল্টো ধাওয়া করবে।এতে মারাত্মক জলাবদ্ধতার আশংকা দেখা দিয়েছে। একই সাথে যে খাল বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছিল তা বাতিলকরা ।
অপরদিকে চিংড়ি চাষের পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে প্রতিপক্ষের লোকজন বলেছেন, ধান চাষ অপেক্ষা চিংড়ি চাষে লাভ বেশী। এছাড়া চিংড়িতে লোকসানের সম্ভাবনা কম থাকলেও ধান চাষে ক্ষতির আশংকা রয়েছে। তবে সরকারি খাস খাল লীজ বাতিল করে উন্মুক্ত করে দেওয়ার পক্ষে মতামত দিয়েছেন তারাও। এছাড়া অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করার পক্ষে তারা মতাতম দেন।
মতবিনিময় সভার সভাপতি জেলা প্রশাসক জনস্বার্থের কথা বিবেচনা করে ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। সাতক্ষীরা সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসারের নেতৃত্বে কমিটিতে আরও রয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড( বিভাগ ২), মৎস্য বিভাগ, কৃষি বিভাগ, পৌরসভার প্রতিনিধি ।সরেজমিনে যেয়ে তদন্ত করে ও জনগনের মতামত নিয়ে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে তাদের তদন্ত রিপোর্ট ও সুপারিশ জেলা প্রশাসকের কাছে দেয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছে জেলা প্রশাসক নাজমুল আহসান।