
আসাদুজ্জামান :
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ভোমরা স্থল বন্দর সংলগ্ন খাটালে গরু ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জোর পূর্বক গরুপ্রতি তিন হাজার টাকা করে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে বলে অবিযোগ পাওয়া গেছে। চাহিদা মত চাঁদার টাকা না দিলে খাটাল মালিক ও তার লোকজন গরু ব্যবসায়ীদের উপর নানা ভাবে নির্যাতন করছে। খাটাল মালিকের হয়রানির প্রতিকার চেয়ে স্থানীয় গরু ব্যবসায়ীদের পক্ষে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার সীমান্তবর্তী লক্ষীদাড়ি গ্রামের রেজাউল ইসলামের ছেলে মো: মাসুদ হোসেন মঙ্গলবার স্বরাষ্টমন্ত্রী বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন।
লিখিত অভিযোগে জানা যায়, সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী গরু ব্যবসায়ী মাসুদ হোসেন ভোমরা করিডোরে গরু প্রতি ৫’শ টাকা হারে রাজস্ব দিয়ে খাটালে গরু আনতে গেলে খাটাল মালিক লিয়াকত ও ম্যানেজার রবিউল তার কাছে তিন হাজার টাকা দাবি করে। বিষয়টি সিও বিজিবি’কে জানালে তিনি স্থানীয় ভোমরা ক্যাম্প কমান্ডারের সাথে দেখা করতে বলেন। পরে ক্যাম্প কমান্ডারের কথা মত খাটালে গরু আনতে গেলে ম্যানেজার রবিউল ও তার লোকজন তাকে বেদম মারিপট করে। একপর্যায়ে তিনি পালিয়ে চলে আসেন। পরে স্থানীয় জনগণের চাপের মুখে তার গরু ও করিডোরের কাগজ ফেরত দেয়া হয়। তিনি বলেন, মৃত লুৎফার রহমানের ছেলে লিয়াকত ও তার সহযোগি মোহন্ত রায়ের ছেলে চঞ্চল ভোমরা খাটালের দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে গরু ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জোর পূর্বক মোটা অংকের চাঁদা আদায় করা শুরু করে। সরকারি রাজস্ব ফি ৫’শ ও অনান্য খরচ বাবদ আরো ২ থেকে ৩’শ টাকা দেয়ার কথা থাকলেও খাটাল মালিকরা গরু ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জোর পূর্বক তিন হাজার টাকা আদায় করে থাকে। টাকা না দিলে তাদেরকে নানা ভাবে নির্যাতন করা হয়। লিয়াকত ও চঞ্চলের অত্যাচারের কারনে ভোমরা সীমান্ত পথে ভারতীয় গরু আসা প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। ফলে সরকার মোটা অংকের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
মাসুদ হোসেন তার অভিযোগে আরও বলেন, খাটাল মালিক হওয়ার পর থেকে গরু ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জোর পূর্বক চাঁদাবাজি করে ও চোরাচালানের মাধ্যমে সামান্য একজন পরিবহন শ্রমিক থেকে কোটিপতি বনে গেছেন লিয়াকত ও তার সহযোগি ভোমরা সিএন্ডএফ কর্মচারী চঞ্চল রায়। বর্তমানে তারা শহরে বিলাসবহল জীবন যাপন করছেন। লিয়াকতের স্ত্রী শহরের রাস্তায় ২৫ লাখ টাকা দামের গাড়ী চড়ে বেড়ায়। সামান্য সিএন্ডএফ কর্মচারী চঞ্চল রায় সাতক্ষীরা শহরের ইটাগাছা এলাকায় বুশরা হাসপাতালের পিছনে ৬ কাঠা জমি ক্রয় করেছেন। তিনি শহরের মুজতিপুর জুবলি স্কুল মোড় এলাকায় ভাড়া বাড়িতে এসি লাগিয়ে বিলাসবহুল জীবন যাপন করছেন। লিয়াকত ও চঞ্চল সর্ম্পকে তদন্ত করলে তাদের অবৈধ অর্থ উপার্জনের আসল রহস্য বেরিয়ে আসবে। তিনি খাটাল মালিক লিয়াকত ও চঞ্চলের অত্যাচার থেকে গরু ব্যবসায়ীদের রক্ষা ও তদন্তপূর্বক তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের পাশাপাশি নিয়ম মাফিক গরুর খাটাল পরিচালনার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেন। একই সাথে দরখাস্তের অনুলিপি খুলনা পুলিশ কমিশনার, বিজিবি খুলনা সেক্টর কমান্ডার, সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও সিও বিজিবিকে অনুলিপি প্রদান করা হয়েছে।
এ ব্যাপরে ভোমরার খাটাল মালিক লিয়াকত ভয়েস অব সাতক্ষীরা ডটকমকে বলেন, তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সঠিক নয়। তিনি বলেন, খাটাল নবায়ন করার সময় হয়েছে বিধায় তিনি নিজে স্বরাষ্ট মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন। তিনি যাতে এবার খাটালের ইজারা না পান সেজন্য প্রতিপক্ষরা তার বিরুদ্ধে এই মিথ্যে অভিযোগ করেছে। তাছাড়া এখন গরু আসছে সংখ্যায় খুব কম। তার স্ত্রীর ব্যবহৃত ২৫ লাখ টাকার গাড়ীর কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, গাড়িটির প্রকৃত মালিক সদর উপজেলা পরিষদের ভাইচ চেয়ারম্যান গোলাম মোরশেদ। শহরের স্কুলে বাচ্চাদের আনা নেয়ার জন্য তার স্ত্রী ওই গাড়িটি ব্যবহার করেন। এদিকে, অপর খাটাল মালিক চঞ্চল ভারতে থাকায় তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।