
বিশেষ প্রতিনিধি ::
———————
মো: জাহাঙ্গীর আলি পেশায় মাইক্রোবাস চালক। এখনও মাঝে মাঝে চালান মাইক্রোবাস। কিন্তু তিন থেকে চার বছরের মধ্যে কোটিপতি বনে গেছেন। ড্রাইভার জাহাঙ্গীরকে এখন সকলে চেনেন পাসপোর্ট জাহাঙ্গীর নামে। সাতক্ষীরা সদর উপজেলার লাবসা ইউনিয়নের মাগুরা গ্রামের মো. হযরত আলীর ছেলে জাহাঙ্গীর আলি।
অন্যের গাড়িতে ৩ হাজার টাকা মাসিক বেতনে চাকুরী করতেন জাহাঙ্গীর। সেই জাহাঙ্গীর এখন অঢেল ধন সম্পদের মালিক। কিনেছেন দুইটা মাইক্রোবাস, মটরসাইকেল, জমিজমাসহ অনেক ধন সম্পদ। করেছেন বিলাসবহুল বাড়ি।
তথ্যানুসন্ধ্যানে জানা গেছে, জাহাঙ্গীর প্রতিদিন সাতক্ষীরা থেকে খুলনা এবং সাতক্ষীরা থেকে যশোর যে সমস্ত যাত্রী ভিসা জমা এবং আনার জন্য যাওয়া আসা করেন তাদের আনা নেয়ার আড়ালে মানব পাচার সহায়তা, অবৈধ মাদকদ্রব্য ও বিভিন্ন প্রকার চোরাকারবারিকেও বহন করেন নিরাপদে। এতে তাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেন হাজার হাজার টাকা।
সাতক্ষীরা জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির অনুমতি আছে এমন কথা বলে কোনো ধরনের রুট পারমিট ছাড়া অবৈধভাবে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০টি মাইক্রোবাস যশোর এবং খুলনায় পাঠাচ্ছেন। কিন্তু যে সমস্ত মালিকদের মাইক্রোবাস নিচ্ছেন তাদেরকে দিচ্ছেন আর্ধেক ভাড়া। আর যাত্রীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অংকের টাকা। মালিকরা তাদেরকে এত কম টাকা দেয়ার কারন জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর বাসমালিক সমিতির কয়েক কর্তা ব্যক্তি, ট্রাফিক, পুলিশসহ বেশ কিছু জায়গায় মাসে মোটা অংকের টাকা দিতে হয় অজুহাত দেন।
কিন্তু এসব জায়গায় যে পরিমান টাকা ব্যায় করেন মাইক্রোবাস মালিকদের বলেন তার দ্বিগুন টাকা। এতে সাাধারণ মাইক্রোবাস মালিকগণ ভীষণ ক্ষুব্ধ।
এছাড়াও প্রতিদিন শতাধিক যাত্রীকে আনা নেওয়া করে তা সম্পূর্ণ অবৈধভাবে। বাসমালিকগণকে ফাঁকি দিয়ে এভাবে সে প্রতিদিন সাতক্ষীরা জেলা শহরের পোস্ট অফিস মোড় থেকে ভোর ৫টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত মিনিস্ট্যান্ড বানিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা অবৈধভাবে উপার্জন করে চলেছেন। বাসমালিকরা ১০/১৫ লাখ টাকা দিয়ে গাড়ি কিনে যে আয় করেন ড্রাইভার জাহাঙ্গীর মাইক্রোবাসে যাত্রী পাঠিয়ে প্রতিদিন আয় করেন তার কয়েকগুন টাকা। এসব নিয়ে তাকে কেউ কিছু বললে সে বাস মালিক সমিতি, প্রশাসনের নাম বলে ভয়ভীতি দেখান। এসব করে অপ্রতিরোধ্য জাহাঙ্গীর কোটিপতি বনে গেছেন।
কয়েকজন মাইক্রোবাস মালিক ও চালকের অভিযোগ জাহাঙ্গীর তাদের মাইক্রোবাস ব্যবহার করে জিম্মি করে নিজে প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা আয় করে নিয়ে যান। এসব বিষয়ে মাইক্রোবাস মালিক, চালক বিভিন্নভাবে প্রতিকার চেয়েও কোনো ফল পাচ্ছেন না। তারা বিষয়টি সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কতৃপক্ষের হস্তক্ষেপ করেছেন।
কয়েকজন যাত্রী অভিযোগ করে বলেন, নির্ধারিত হারের থেকে বেশি ভাড়া আদায় করলেও তাদের সাথে দুর্ব্যবহার, খারাপ গাড়ী দিয়ে যাত্রী হয়রানীসহ নানান অভিযোগ জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে। কিন্তু দেখার কেউ নেই।
অভিযোগ রয়েছে, ড্রাইভার জাহাঙ্গীর খুলনা ও যশোরে পাসপোর্ট যাত্রী বহনের আড়ালে দীর্ঘ দিন ধরে নারী ও শিশু পাঁচারসহ অবৈধ ব্যবসা করে আসছে। তার মাইক্রোবাস কখনো চেক করেনা ট্রাফিক পুলিশ। অন্যান্য আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা এতোদিন বিষয়টি আচ করতে পারেনি। তার ওই মাইক্রোবাসযোগে সোনা চোরাচালানী, নারী ও শিশু পাঁচারকারী, মাদক ব্যবসায়ী এমন কী অস্ত্র ব্যবসায়ীরা নিরাপদে চলাচল করছে দীর্ঘদিন ধরে। বিনিময়ে প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ড্রাইভার জাহাঙ্গীর। অল্প দিনেই সে আজ কোটিপতি বনে গেছে। তার অর্থের উৎস কোথায় তা খতিয়ে দেখা দরকার। তার এই অবৈধ কারবারের দিকে নজর দেওয়ার জন্য সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ সুপার, গোয়েন্দা কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট মহলের কাছে জোর দাবী জানিয়েছেন সাতক্ষীরার সচেতন নাগরিকরা।
এ ব্যাপারে ড্রাইভার জাহাঙ্গীর ভয়েস অব সাতক্ষীরাকে বলেন, একজন মাইক্রোবাস মালিকের গাড়ি আমার লাইনে ভাড়া খাটে। তার সাথে আমার বিরোধের কারণে এ ধরনের মিথ্যে অভিযোগ করা হচ্ছে। আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করা হয়েছে তা সবই মিথ্যে ও বানোয়াট।