
নাজমুল হক :
সাতক্ষীরায় ‘অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পল্লী অবকাঠাম উন্নয়ন প্রকল্প (আইআরআইডিপি)’ বাস্তবায়ন নিয়ে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্র্নীতির অভিযোগ উঠেছে। সাতক্ষীরার ৪টি নির্বাচনী আসনে সংসদ সদস্যদের নামে বরাদ্দকৃত (প্রত্যেক এমপির নামে ১৫ কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দ) প্রায় সাড়ে ৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে যে ১৫৮টি প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ চরছে তার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আইআরআইডিপি প্রকল্পের আওতায় জেলায় সব চেয়ে বড় প্রকল্প সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বেতনা নদীর উপর নির্মিত সুপারিঘাটা ব্রীজ। এই প্রকল্পের চুক্তিমূল নির্ধারন করা হয় ৪ কোটি ৯২ লাখ টাকা।সুপারিঘাটা ব্রীজের নির্মান কাজ নিয়ে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। অজ্ঞাত কারণে নির্মান কাজ শেষ হওয়ার আগেই তড়িঘড়ি করে সাতক্ষীরা সদর আসনের এমপি মীর মোস্তাক আহমেদ রবিকে দিয়ে তা উেেদ্বাধন ঘোষনা করা হয়েছে। ব্রীজ উদ্বোধনের পর এক মাস যেতে না যেতেই ব্রীজের দুইধারে নির্মিত সংযোগ সড়ক ধসে পড়েছে। ফলে সদ্য নির্মিত এই ব্রীজ দিয়ে চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এলাকায় এ নিয়ে সাধারন মানুষের মধ্যে চমর ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
সাতক্ষীরা এলজিইডি অধিদপ্ত সূত্রে জানাগেছে, ২০১২-১৩ অর্থবছরে আইআরআইডিপি প্রকল্পে সাতক্ষীরার ৪টি নির্বাচনী আসনে ৬৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৫৮টি প্রকল্প হাতে নেয়া হয় (প্রত্যেক এমপির নামে যে ১৫ কোটি টাকা করে বরাদ্দ দেয়া হয় তা দিয়ে গৃহিত প্রকল্প) । এসব প্রকল্পের মধ্যে সবচেয়ে ব্যয়বহুল প্রকল্প সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বেতনা নদীর উপর সুপারিঘাটা ব্রীজ নির্মান প্রকল্প। ৯৯ মিটার দৈঘ্য, ৪.৩ মিটার প্রস্থ এবং দুই ধারে ৩০০ মিটার করে সংযোগ সড়ক নির্মানের (প্রকল্পের) চুক্তিমূল্য নির্ধারন করা হয় ৪ কোটি ৯২ লাখ টাকা। জেবিটি-জেডকে (জেভি) নামের সাতক্ষীরার একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এই কাজের টেন্ডার পান। নির্মান কাজের তদারকির দায়িত্বে ছিল এলজিইডি। ব্রীজ নির্মানের ওয়ার্ক ওয়ার্ডার দেয়া হয় ২০১৩ সালের ২ জুলাই। নির্মান শেষে ব্রীজটি উদ্বোধন করা হয়েছে (চলতি বছর) গত ৩ জুলাই। সাতক্ষীরা সদর আসনের সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ রবি আনুষ্ঠানিক ভাবে ব্রীজটি উদ্বোধন ঘোষনা করেন। কিন্তু উদ্বোধনের মাত্র এক মাস যেতে না যেতেই ব্রীজের দুই প্রান্তের সংযোগ সড়ক ধ্বসে পড়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিন গিয়ে দেখাগেছে, ব্রীজের দুই ধারে যে সংযোগ সড়ক তৈরী করা হয়েছে (ইটের সোলিং) তা ধ্বসে ধ্বসে পড়েছে। ব্রীজের দুই ধারে ১৮০টি খুঁটি (পোস্ট) নির্মান করার কথা থাকলেও তা আদৌ করা হয়নি। ব্রীজের দুই ধারের রেলিং আজও রঙ করা হয়নি।
স্থানীয় তেঁতুলডাঙ্গা গ্রামের বিপ্লব মন্ডল (৪০), বয়েরবাতান গ্রামের কেরামত আলী (৬৫), ধুলিহরের মনিরুজ্জামান জয়নাল (৪৮), যুগিপোতার হানিফ (৫০)সহ একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন, মাত্র ১৫ দিন যেতে না যেতেই ব্রীজের ঢালায়ের চটনা উঠতে শুরু করেছে। অত্যন্ত নিম্মমানের ইট,পাথর, খোয়া,বালু দিয়ে ব্রীজ ও দুই ধারের সংযোগ সড়ক তৈরী করা হয়েছে। সিডিউল অনুযায়ি কোন কাজ করা হয়নি। কত টাকার কাজ বা কি কি কাজ করা হবে তা সাইনবোর্ডে টানিয়ে দেয়ার কথা থাকলেও আদৌ তা দেয়া হয়নি। অত্যন্ত নিম্মমানের পাথর ,বালি ও রড ব্যবহার করা হয়েছে। এনিয়ে স্থানীয় লোকজন বার বার অভিযোগ দিয়েও কোন কাজ হয়নি। যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ব্রীজটি নির্মান করেছে তিনি স্থানীয় প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ জোরালো প্রতিবাদ করতে সাহস পায়নি। প্রতিবাদ করলে তার নামে চাঁদাবাজি মামলা দেয়ার হুমকী দেয়া হয়েছে বলে তাদের অভিযোগ।
এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিকের সাথে যোগাযোগ করে তাকে পাওয়া যায়নি।
সাতক্ষীরা এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী এ এস এম সাহেদুর রহিম ভয়েস অব সাতক্ষীরা ডটকমকে জানান, স্থানীয় মানুষের দাবিরমুখে ব্রীজের কাজ পুরোপুরি শেষ হওয়ার আগেই তা উদ্বোধন করা হয়েছে। এখনও প্রায় ৩০ লাখ টাকা ঠিকাদারের পাওনা রয়েছে। ফাইনাল বিল দেয়ার আগে সিডিউল অনুযায়ি সব কাজ বুঝে নেয়া হবে। ব্রীজের দুই প্রান্তে সংযোগ সড়ক ধ্বসে পড়ার বিষয়টি তিনি জানার পর সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে জরুরী ভিত্তিতে তা সংস্কারের জন্য বলেছেন।
সাতক্ষীরা সদর আসনের এমপি মীর মোস্তাক আহমেদ রবি ভয়েস অব সাতক্ষীরা ডটকমকে বলেন, বরাদ্দটি গত সরকারের আমলের। ব্রীজটি উদ্বোধন করতে গিয়ে জানতে পারি কাজটি এখনও পুরোপুরি শেষ হয়নি। তবে কাজ সিডিউল অনুযায়ি বুঝে নিয়ে ফাইনাল বিল দেয়ার জন্য এলজিইডি কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ব্রীজটি নির্মানে দুর্র্নীতি বা অনিয়মের যে অভিযোগ উঠেছে তাও খতিয়ে দেখা হবে বলে তিনি জানান।