সাতক্ষীরায় নতুন পে-স্কেলে বেতন উত্তোলণ নিয়ে সরকারি শিক্ষকদের কাছে চাঁদাবাজি !


534 বার দেখা হয়েছে
Print Friendly, PDF & Email
সাতক্ষীরায় নতুন পে-স্কেলে বেতন উত্তোলণ নিয়ে সরকারি শিক্ষকদের কাছে চাঁদাবাজি !
মার্চ ১৯, ২০১৬ ফটো গ্যালারি শিক্ষা সাতক্ষীরা সদর
Print Friendly, PDF & Email

নাজমুল হক :
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা নতুন স্কেলে বেতন পাওয়ার ক্ষেত্রে চরম হয়রানির শিকার হচ্ছেন। চলতি মাসের ১০ তারিখের মধ্যে নতুন পে-স্কেলে বেতন (এরিয়ার টাকাসহ) দেওয়ার জন্য শিক্ষা মন্ত্রনালয় থেকে আদেশ দিলেও মন্ত্রনালয়ের সেই আদেশ মানেনি সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ও সাতক্ষীরা জেলা হিসাবরক্ষণ অফিস। শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের আদেশ গত ১০ দিন অতিবাহিত হলেও নতুন স্কেলে বেতন পায়নি সরকারি শিক্ষকরা।

জানাগেছে, সাতক্ষীরা সদর শিক্ষা অফিস ও জেলা হিসাবরক্ষণ অফিসে বেতন ছাড় করানোর কথা বলে সদর উপজেলার ২০১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১২২৩ জন শিক্ষকের প্রত্যেকের কাছ থেকে ৪০০ টাকা করে সর্বমোট ৪ লাখ ৮৯ হাজার ২০০ টাকা উৎকোচ আদায় করা হয়েছে। কতিপয় শিক্ষক নেতারাই ওই টাকা তুলেছেন বলে অভিযোগ। সাধারণ শিক্ষকদের জিজ্ঞাসা ঘুষ দেওয়ার পরেও কি কারণে তারা গত ১০ দিনেও তাদের বেতন তুলতে পারলো না।

তথ্যানুসন্ধানে জানাগেছে, সাতক্ষীরা সদর উপজেলা শিক্ষা অফিস ও জেলা হিসাবরক্ষণ অফিসে অর্থ না দেওয়ায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশনার পরেও এরিয়ার বিলসহ বেতন পাচ্ছে না সহকারি শিক্ষকরা।

শিক্ষা মন্ত্রনালয় থেকে ১০ মার্চের মধ্যে বিল উত্তোলনের নির্দেশনা দিলেও শিক্ষকরা বিল পাননি। অভিযোগ রয়েছে, দুই অফিসের দাবীকৃত অর্থ পরিশোধ না করায় বিল দেওয়া হচ্ছে না।

সূত্র জানায়, সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ২০১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। এসব প্রতিষ্ঠানে মোট শিক্ষকের সংখ্যা ১২২৩ জন।

সহকারী শিক্ষকদের এরিয়ার বিল ২০১৫ সালের জুলাই থেকে বাকী ছিলো। যা জানুয়ারি মাসে পাওয়ার দাবীদার ছিলো। বিল পাওয়ার জন্য সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তা ও জেলা হিসাবরক্ষণ অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তা শিক্ষকদের নিকট মোটা অংকের অর্থ দাবী করে। দাবীকৃত অর্থ তোলেন সদর উপজেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি রেজাউল ইসলামের নেতৃত্বে কয়েকজন শিক্ষক।

তবে সদর উপজেলা প্রাইমারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি রেজাউল ইসলাম অর্থ গ্রহণের কথা অস্বীকার করেন। আর উপজেলা প্রাইমারী শিক্ষা কর্মকর্তা ওবায়দুল্লাহিল আসলাম জানান, বেশ কিছু শিক্ষককের কাগজে ভুল থাকায় বিল দিতে বিলম্ব হয়েছে। তবে আগামী রোববার বিল ছাড়া হবে।

সূত্র আরো জানায়, সমিতির পক্ষ থেকে সমিতির সহ-সভাপতি এস এম আব্দুস সবুর, পাঁচআলী সরকারি প্রাইমারী স্কুলের সহকারী শিক্ষক পঙ্কজ কুমার বর্মন, বকচর প্রাইমারী স্কুলের সহকারী শিক্ষক সঞ্জীব ব্যানার্জি, সহকারী শিক্ষক কামরুজ্জামান অন্তত ১ হাজার ২২৩ জন সহকারী শিক্ষককের নিকট থেকে ৪০০ টাকা করে উত্তোলন করেছেন। এসব টাকা সিংহভাগই এসব শিক্ষক নেতাদের পকেটে বলে জানাগেছে।

এছাড়া নবজাতীয়করণকৃত সদর উপজেলার ৫৭টি স্কুলের ১৭৪ জন শিক্ষক আছে। এ সব শিক্ষকের নিকট থেকে বেতন সমন্বয় ও এরিয়ার বিল প্রদান বাবদ ১ হাজার টাকা করে আদায় করা হয়েছে। তাদের নিকট থেকে টাকা আদায়ে নেতৃত্ব দেন বারুইবাইশা প্রাইমারী স্কুলের জাকির হোসেন, সোনারডাঙ্গা প্রাইমারী স্কুলের আব্দুল আওয়াল, পূর্ব দহাকুলা স্কুলের শওকাত হোসেন। উত্তোলনকৃত টাকার একটি অংশ জেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা ও উপজেলা শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তাদের প্রদান করে। বাকী অর্থ সমিতির কতিপয় কর্মকর্তার পকেটে যায়। ফলে এরিয়ার বিল পেতে হয়রানির শিকার হচ্ছে শিক্ষকরা।

সূত্র আরো জানায়, বিল তৈরি করতে সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসে ১০ জন শিক্ষককে ডেপুটেশনে আনা হয়েছে। তারা বিল তৈরি করলেও শিক্ষা কর্মকর্তা ও হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার কারণে শিক্ষকরা বিল পাচ্ছে না।শিকার হচ্ছে হয়রানির।

সূত্র আরো জানায়, সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসের অফিস সহকারী সাইফুল ইসলাম ও আব্দুল ওয়াদুদ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কথা বলে অর্থ উত্তোলন করছেন। তাদের অর্থ না দিলে তারা কোন কাজ করেনা বলে শিক্ষকরা জানান।

বকচর প্রাইমারী স্কুলের সহকারী শিক্ষক সঞ্জীব ব্যানার্জি জানান, টাকা উত্তোলন শিক্ষক সমিতির ব্যাপার। তারা এটা উত্তোলন করেছে। তিনি টাকা উত্তোলনের সাথে জড়িত নন দাবী করে বলেন, কেউ বলতে পারবে না আমার কাছে টাকা দিয়েছে। সদর উপজেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও ইন্দ্রিরা প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক রেজাউল ইসলাম জানান, কোন শিক্ষককের নিকট থেকে অর্থ আদায় করা হয়নি। প্রত্যেক শিক্ষক নিজ উদ্যোগে এরিয়ার বিল করেছে। তিনি আরো বলেন, কাজ শেষ হয়নি বলে বিল দেওয়া হয়নি। হিসাবরক্ষণ অফিস ও উপজেলা শিক্ষা অফিসে টাকা কিভাবে দেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা প্রত্যেক শিক্ষকের ব্যাপার। ১২ জন শিক্ষকদের ১৩ রকম মত। তারা তাদের মতো করে ম্যানেজ করেছে। তবে উপজেলা প্রাইমারী শিক্ষা অফিসার ওবায়দুল্লাহিল আসলাম জানান, শিক্ষা অফিসের কেউ টাকা চায়নি। আমাদের টাকা দেওয়ার প্রশ্নই আসে না।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, উপরোক্ত এসব দুর্নীতিবাজ শিক্ষক নেতারা বিভিন্ন অজুহাতে সহকারী শিক্ষকদের কাছ থেকে প্রায় উৎকোচ আদায় করে থাকেন। এটা তাদের ব্যবসায় পরিনত হয়েছে। নতুন পে-স্কেলের বেতন উত্তোলনের জন্য প্রত্যেক শিক্ষকের কাছ থেকে ৪০০ টাকা করে আদায় করা হয়েছে। এর মধ্যে কিছু টাকা জেলা হিসাবরক্ষণ অফিসে দিয়েছে বলে জানাগেছে। কিন্তু সদর শিক্ষা অফিসারের চাহিদা মতো টাকা না দেওয়ায় এখনও সদর শিক্ষা অফিসার বেতন ছাড়েননি। বেতন ছাড় করা নিয়ে তিনি নানা অজুহাত দেখাচ্ছেন। অথচ অন্যান্য উপজেলার শিক্ষকরা মন্ত্রনালয়ের নির্দেশ মোতাবেক ১০ মার্চের মধ্যেই এরিয়াসহ বেতন উত্তোলণ করেছেন।
এ ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী , শিক্ষা সচিব , সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট মহলের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন শিক্ষকরা। একই সাথে বেতন উত্তোলনের নামে উৎকোচ আদায়কারী শিক্ষক নেতা, সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ও জেলা হিসাবরক্ষণ অফিসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহনের জোর দাবি জানিয়েছেন তারা।