
শাহিদুর রহমান ::
—————————
সাতক্ষীরার এক নিভৃত পল্লীতে জম্ম সন্ধ্যাকণ্ঠি হিসেবে খ্যাত চৈতালী মুখার্জীর। হার্ট-এ ছিদ্র নিয়ে যে মেয়েটির জম্ম হয়েছিল জেলার আশাশুনি উপজেলার বুধহাটা ইউনিয়নের বেউলা গ্রামে সেই মেয়েটি আজ ভারত ও বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তার কণ্ঠের যাদু দিয়ে সাতক্ষীরার জন্য বয়ে আনছেন একের পর এক সম্মাননা। এটা চৈতালী মুখার্জীর একার গর্ব নয়, এ গর্ব সাতক্ষীরার ২৪ লক্ষ মানুষের।
মঙ্গলবার ( ২৭ মার্চ ) সন্ধ্যায় সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার নলতায় আহ্ছানিয়া দরবেশ আলী মেমো: ক্যাডেট স্কুল ও অগ্নিবীণা-সাতক্ষীরা জেলা সংসদ যৌথভাবে গুণিজন সংবর্ধনার আয়োজন করে। সেখানে দেশের সঙ্গীত অঙ্গনে অসামান্য অবদান রাখায় কণ্ঠশিল্পী চৈতালী মুখার্জীকে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়।
সাতক্ষীরা-৩ আসনের সংসদ সদস্য , সাবেক সফল স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আ.ফ.ম রুহুল হক ও সাতক্ষীরা-৪ আসনের সংসদ সদস্য এস.এম জগলুল হায়দার কণ্ঠশিল্পী চৈতালী মুখার্জীর হাতে সম্মাননা ক্রেস তুলে দেন।
এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক অবসরপ্রাপ্ত কলেজ শিক্ষক গাজী আজিজুর রহমান, বিশিষ্ট নজরুল গবেষক এইচ.এম সিরাজসহ স্থানীয় অতিথিবৃন্দ।
সাতক্ষীরার গর্ব চৈতালী মুখার্জী এর আগে একাধিক বার ভারত ও বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পেয়েছেন সংবর্ধনা।
——————————————————-
নিভৃত পল্লী থেকে উঠে আসা চৈতালী মুখার্জীর ::
——————————————————–
সুরের যাদুকর চৈতালী মুখার্জী ১৯৮৬ সালের ১৩ ডিসেম্বর আশাশুনি উপজেলার বেউলা গ্রামের কাত্তিক মুখার্জী ও গীতা রাণী মুখার্জীর ঘরে জম্মগ্রহন করেন। দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট তিনি।
জম্ম থেকেই তার হার্টে ছিদ্র ছিল। দেহে কঠিক রোগ বহন করেও তিনি পিছু ফেরেননি। জয় করেছেন সঙ্গীতকে। ছোট বেলা থেকেই গানের সাথে তার নাড়ির সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ছোট বেলা থেকেই নিভৃত সেই পল্লী থেকে প্রতিনিয়ত অসুস্থ শরীর নিয়ে সাতক্ষীরায় ছুটে আসতেন গানের প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে। আজও থেমে নেই তার সেই ছুটেচলা। এখন ছুটছেন ভারত-বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গানের মঞ্চ তামাতে।
সেই ২০০০ সালের কথা । সাতক্ষীরার পাবলিক লাইব্রেরীতে সন্ধ্যায় চলছিলো জমসজমাট গানের আসর। সঙ্গীত পরিবেশ করার সময় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন ( সে সময় শিশু কণ্ঠশিল্পী ) চৈতালী মুখার্জী। তাৎক্ষনিক ভাবে তাকে নেওয়া হয় স্থানীয় হাসপাতালে। চিকিৎসকেরা পরামর্শ দেন তাকে দ্রুত ওপেন হার্ট সার্জারী করাতে। সে সময় সাতক্ষীরা সর্বস্তরের শিল্পী ও সঙ্গীত অঙ্গনের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ঝাপিয়ে পড়েছিলেন শিশু কণ্ঠশিল্পী চৈতালী মুখার্জীকে বাঁচাতে।
সবার সহযোগিতায় ২০০১ সালে চৈতালীকে ভর্তি করা হয় ভারতের প্রখ্যাত হ্নদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা: দেবী শেঠির হাসপাতাল “ নারায়না হ্নদয়ালয় ” এ। সেখানে করা হয় ওপেন হার্ট সার্জারী। ওপের হার্ট সার্জারীর পর থেকে শিল্পী চৈতালী মুখার্জী সুস্থ আছেন। দেশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত ছুটে বেড়াচ্ছেন তার মধুর কণ্ঠ ছড়িয়ে দিয়ে মানুষের হ্নদয় জয় করতে। শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারতেও তার অবিরাম ছুটেচলা। এপার বাংলা-ওপার বাংলায় আজ তার ভক্তের তালিকা দীর্ঘ, যে তালিকা যেনো শেষ হবার নয়।
কথা হচ্ছিলো সুরের জাদুকর চৈতালী মুখার্জীর সাঙ্গে। তিনি ভয়েস অব সাতক্ষীরাকে বলেন, জীবনে অনেক ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে আমার উঠে আসা। জম্ম থেকেই হার্ট ছিদ্রের মতো ব্যাধি শরীরে বহন করে আমি সঙ্গীত অঙ্গনে হাঁটতে শুরু করেছি সেই ছোট থেকে। আজও থেমে নেই। সকলের দোয়ায় এগিয়ে যাচ্ছি।
তিনি আবেগঘন কণ্ঠে বলেন, আমাকে সেই নিভৃত পল্লী থেকে যারা টেনে সাতক্ষীরায় নিয়ে এসেছেন, যারা আমাকে সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে ওপেন হার্ট সার্জারীর মতো রোগের চিকিৎসা করিয়েছেন, সর্বপরি যারা আমাকে ‘কণ্ঠশিল্পী চৈতালী মুখার্জী’ বানিয়েছেন তাদের কথা আমার মনে পড়লে চোখে জল ধরে রাখতে পারিনা। বিধাতার পরেই প্রতিটি মুহুত্বে আমি তাদেরকে স্বরণ করি। কারো নাম উল্লেখ করে ছোট করতে চাইনে। হ্নদয়বান সেই মানুষ গুলোর সহযোগিতার কথা আমি কখনো ভূলতে পারবো না। তাদের ঋণ আমি কখনও পরিশোধ করতে পারবো না। আমি ওই হ্নদবান মানুষ গুলোরকাছে চিরকৃতজ্ঞ।