
বিশেষ প্রতিনিধি :
কৃষিতে স্বনির্ভরতা অর্জনে সরকারি নানা উদ্যোগ থাকলেও তা কাজে আসছে না দেশের সীমান্ত জেলা সাতক্ষীরায়। এ জেলায় বাফার কোন গোডাউন না থাকায় কৃষকদের দোরগোড়ায় ন্যায্য মূল্যে মানসম্মত সার পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। এমন কি অধিক মুনাফার আশায় বাড়তি পরিবহন খরচ এড়াতে অবৈধ ডিও বেচা-কেনায় ঝুঁকে পড়েছেন সাতক্ষীরার প্রত্যন্ত অঞ্চলের ডিলাররা। ফলে সার ব্যবস্থাপনায় বিরূপ প্রভাব পড়ছে। যার বোঝা টানতে হচ্ছে এই এলাকার সাধারণ কৃষকদের।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, সাতক্ষীরা জেলার ইউরিয়া সার সরবরাহ করা হয় বিসিআইসির খুলনা জেলার শিরোমনিস্থ বাফার গোডাউন থেকে। শিরোমনি থেকে খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলার বরাদ্দকৃত সার সরবরাহ করা হয়। চলতি ১৫-১৬ অর্থ বছরের মোট বরাদ্দ ইউরিয়া সারের পরিমান প্রায় ৮১ হাজার মেট্রিক টন। যার মধ্যে শুধু সাতক্ষীরা জেলায় চাহিদা বিবেচনায় বরাদ্দ ৪০ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন। যা মোট বরাদ্দের অর্ধেক। শিরোমনি থেকে সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর, কালীগঞ্জ উপজেলার দূরত্ব ১৫০ কিলোমিটারের বেশী হওয়ায় সীমান্ত উপজেলার ডিলারদের বরাদ্দকৃত সার উত্তোলন করে নিজস্ব গুদামে পৌঁছাতে পরিবহন ব্যয় বেশী হওয়ায় কৌশলী ডিলারগণ উল্লেখযোগ্য পরিমান ডিও কেনা-বেচায় উৎসাহী হন। ফলে সাধারণ কৃষকরা ন্যায্য মূল্যের সার থেকে বঞ্চিত হন। নাম প্রকাশ না করা শর্তে বাফার এক কর্মকর্তা অবৈধ ডিও বেচা-কেনা সত্যতা স্বীকার করে বলেন, অধিক দূরত্বের ডিলারগণ বাড়তি লাভের আশায় এমনটি করে থাকেন। তবে এ ধরনের কার্যক্রমে সরকারের মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি সুষ্ঠু সার ব্যবস্থাপনায় মারাত্মক বিরূপ প্রভাব পড়েছে। সূত্রমতে, সাতক্ষীরা জেলার বরাদ্দকৃত সার ৮৫ জন ডিলার এবং প্রায় সমসংখ্যক সাব ডিলারের মাধ্যমে প্রান্তিক কৃষকের নিকট ইউরিয়া সার সরবরাহ করা হয়। সরকারের বেঁধে দেওয়া ১৪ হাজার টাকা দরে ডিলারগণ প্রতি মেট্রিক টন ইউরিয়া সার ক্রয় করেন। যার প্রতি বস্তা ইউরিয়া মূল্য পড়ে ৭০০ টাকা। কৃষকের অভিযোগ, ইউরিয়া সারের চাহিদা বাড়লে প্রান্তিক কৃষককে স্থান ভেদে ৯০০ থেকে ১০০০ টাকায় প্রতি বস্তা ইউরিয়া কিনতে হয়।
শ্যামনগরের কৃষক জাহাঙ্গীর জানান, বোরো মৌসুমে সরকারের বেঁধে দেওয়া দাম থেকে অনেক বেশী মূল্যে আমাদের ইউরিয়া সার কিনতে হয়। এমন অভিযোগ তালা উপজেলার সাহাপুর গ্রামের কৃষক নাসির উদ্দিনের। সীমান্ত উপজেলার একাধিক কৃষক অভিযোগ করেন, বোরো মৌসুমে ইউরিয়া অধিক দামে বিক্রি হওয়ায় সীমান্তের ওপার থেকে আসা নিম্মমানের সার কম মূল্যে পাওয়া যায়। অনেক কৃষক ভারতীয় এসব সার জমিতে ব্যবহার করেন। তবে বিশেষজ্ঞদের ধারনা, সীমান্তের ওপার থেকে আসা নিম্নমানের সার জমিতে ব্যবহারের ফলে জমির উর্বরতা শক্তি হ্রাস পাচ্ছে। সার্বিক বিবেচনায় সাতক্ষীরার কেন্দ্রে এবং জেলার একমাত্র স্থলবন্দর ভোমারার নিকটবর্তী স্থানে একটি সার গোডাউন স্থাপন এখন সময়ের দাবি।
সূত্রমতে, সরকার দেশে ১৩ টি জেলাতে ১৩ টি নতুন গোডাউন স্থাপনের কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। স্থানীয়দের দাবি, সাতক্ষীরা জেলার দূরত্ব ও চাহিদা বিবেচনা করে সরকারের গৃহিত কার্যক্রমের সাথে সাতক্ষীরা জেলাকে এই আওতায় আনা হোক।
সংশ্লিষ্ট দপ্তরের এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা মনে করেন, দেশের উত্তরাঞ্চলের আদলে বিসিআইসি পরিচালিত ইউরিয়া সার এবং বিএডিসি পরিচালিত টিএসপি, ড্যাপ ও এমওপি সার সংরক্ষণ ও বিতরণ ব্যবস্থাকে একত্রে করেও আলাদা আলাদা করে ২টি বাফার গোডাউন তৈরী করা হলে এ অঞ্চলে সরকারের কৃষিতে স্বনির্ভরতা অর্জনের কার্যক্রমে গতিবৃদ্ধি হবে।