গোলাম সরোয়ার ::
ভালো উৎপাদন করেও লোকসানে সাতক্ষীরার সাদা মাছ চাষিরা। গত বছরে এই সময় ১ কেজি ওজনের রুই মাছ বাজারে দাম ছিলো ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা, দেড় থেকে ২ কেজি ওজনের কাতলা মাছের দর ছিলো ২৫০ টাকা এবং ১ কেজি ওজনের মৃগেল মাছ বিক্রি হয়েছে ১৬০ টাকা। চলতি মৌসুমে সেই একই সাইজের রুই মাছ বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১১০ টাকা, কাতলা ১৩০ টাকা এবং মৃগেল মাছ বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ৭৫ থেকে ৮০ টাকা দরে। ফলে বাজারে ন্যায্য দাম না থাকায় জেলার ৫০ থেকে ৬০ হাজার মৎস্য চাষি চরম লোকসানে পড়েছেন সাদা মাছ উৎপাদন করে।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বদ্দিপুর গ্রামের সাদা মাছ চাষি আব্দুল গফুর জানান, চলতি মৌসুমে ৮০ বিঘা পরিমান জমির একটি ঘেরে মাদা মাছ চাষ করেছেন। চারা মাছ অবমুক্ত, খাদ্য সরবরাহ, পরিচর্যা ও জমি লীজের টাকা দিয়ে প্রতি কেজি সাদা মাছ উৎপাদন খরচ পড়েছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা। কিন্ত বাজারে মাছের দাম পাওয়া যাচ্ছে তাতে করে প্রতি কেজি সাদা মাছে কমপক্ষে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা লোকসান হয়েছে। ফলে চলতি মৌসুমে ৮০ বিঘা জমির মাছ চাষে ১৪ থেকে ১৫ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে তার।
সাতক্ষীরার ভাড়–খালী গ্রামের মাছ চাষি রাজিব হোসেন জানান, ৬০ বিঘা জমিতে মিশ্র কার্প জাতীয় মাছ চাষ করেছেন। উৎপাদন মৌসুমের শুরুতে প্রথম দফায় বাজারে মাছ বিক্রি করে ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন তিনি। তাই ঘেরের প্রায় ৫০ শতাংশ মাছ রেখে দিয়েছেন বাজারে দাম বাড়ার আশায়। তিনি বলেন, এখন বাজারে সাদা মাছের যে দর যাচ্ছে তাতে করে ঘেরের সমস্ত মাছ বিক্রি করলে ৬ থেকে ৭ লাখ টাকা লোকসান যাবে। তাই কোনো রকম উৎপাদন খরচটা উঠিয়ে আনার জন্য ঘেরে মাছ মজুত করে রেখেছেন বলে জানান তিনি।
সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দুর রব ভয়েস অব সাতক্ষীরাকে জানান, চলতি মৌসুমের শুরু থেকে বাজারে বিপুল পরিমান সাদা মাছ উঠছে। সেই তুলনায় ক্রেতার সংখ্যা কম। চাহিদার চেয়ে কয়েকগুনে সরবরাহ বেশি হওয়ায় মৎস্য চাষিরা সাদা মাছের দাম পাচ্ছে না। তাছাড়া অনেক সাদা মাছের ঘেরে বোরো চাষ হয়ে থাকে। এসব চাষিরা প্রায় একই সময়ে ঘের শুকিয়ে বাজারে মাছ বিক্রি করতে আসে।
এদিকে সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী জেলার সাতটি উপজেলাতে প্রায় ১ লাখ মেট্রিকটন সাদা মাছ উৎপাদন হয়ে থাকে। তবে বেসরকারী হিসেবে এই পরিমানের চেয়ে আরো বেশি। এসব মাছের মধ্যে রয়েছে রুই, কাতলা, মৃগেল, সিলভারকার্প, ব্লাককার্প,র্ গ্লাসকার্প, পাঙ্গাশ, কই, মাগুর, মনোসেক্স ও তেলাপিয়া উল্লেখযোগ্য।
সুত্রটি জানায়, চলতি ২০১৭-১৮ মৌসুমে সাতক্ষীরার সাতটি উপজেলাতে নিবন্ধিত ৪৯ হাজার ১৬৩টি ঘেরে সাদা চাষ করা হয়েছে। এরমধ্যে সাতক্ষীরা সদর উপজেলাতে ২ হাজার ১০৫টি, তালায় ১ হাজার ২৯৫টি, দেবহাটায় ২ হাজার ৮২৯টি, আশাশুনিতে ১৩ হাজার ২১৭টি, কালিগঞ্জে ১৪ হাজার ৫৫৯টি ও শ্যামনগরে ১৩ হাজার ১৫৮ এবং কলারোয়াতে ২ হাজার টি। সুত্রটি আরো জানায়, চলতি মৌসুমে এই ৭ টি উপজেলায় ৬১ হাজার হেক্টর জমিতে মাছ করা হয়েছে। সরকারী হিসাব অনুযায়ী চলতি মৌসুমে জেলায় ৯১ হাজার ৮০০ মেট্রিকটন সাদা মাছ উৎপাদন লক্ষ্য নির্ধারন করা হয়েছে। যা গত মৌসুমের তুলনায় ৫ হাজার টন। সুত্রটি আরো জানায়, গেল মৌসুমে জেলায় সাদা মাছ উৎপাদন হয়েছিলো ৮৬ হাজার মেট্রিকটন।
সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য অফিসার মো. শহীদুল ইসলাম ভয়েস অব সাতক্ষীরাকে জানান, এখানকার মাটি ও আবহাওয়ার কারনে সবধনের মাছ উৎপাদন হয়ে থাকে। তবে গত কয়েক বছর যাবত চিংড়ি ঘেরের সাথেও সাদা মাছ চাষ করছেন চাষিরা। তাছাড়াও পৃথক ভাবেও সাদা মাছ উৎপাদন হচ্ছে সাতক্ষীরাতে। চলতি মৌসুমে সাদা মাছের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে উৎপাদন তার অনেক বেশি। ফলে চাহিদার তুলনায় বাজারে সরবরাহ বেশি হওয়ায় ন্যায্য দাম পাচ্ছে না চাষিরা।
###
