
ডেস্ক রিপোর্ট ::
‘তোমার হাতপাখার বাতাসে, প্রাণ জুড়িয়ে আসে, কিছু সময় আরও তুমি থাকো আমার পাশে…’ শিল্পী আকবরের গাওয়া এ গানটি কথা স্মরণ করিয়ে দেয় হাতপাখার কথা। শুধু তাই নয়, ‘আমার বাড়ির তালের পাখা, শীতকালেতে যায় না দেখা, আমার পাখার এমন গুন, বাতাস খেলে আসে ঘুম’ গ্রাম বাংলা হারাতে বসা এমন ছন্দও এখন সামনে এসেছে। লোডশেডিং আর ভ্যাপসা গরমের কারণে গ্রামাঞ্চলে বেড়েছে হাতপাখার কদর।
২৪ ঘন্টায় নির্ধাতি সময় লোডশেডিং থাকার কথা বলা হলেও জ্বালানী সংকটের কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। দেশব্যাপী বিদ্যুৎ চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম হওয়ায় দেখা দিয়েছে বিদ্যুৎ সংকট। এ কারণেই চলছে অধিক সময় লোডশেডিং। ষড়ঋতুর বাংলাদেশে আষাঢ়-শ্রাবণ বর্ষাকাল। গ্রীষ্মের কষ্টের কান্না হয়ে প্রকৃতির ঋতুমঞ্চে আসে বর্ষা। আষাঢ়ের আগমনে কবিমনে কত কথা, কত ছন্দ, কত সুর যে উকি দেয় তার ইয়ত্তা নেই। ঘনকালি মাখা আষাঢ়ের রূপ এবার দেখেনি বাংলার মানুষ। আষাঢ় বিদায় নিয়েছে বৃষ্টিহীন অবস্থায়। এলো শ্রাবণ। শ্রাবণের বারিধারায় বিশুদ্ধ হবার কথা ছিল প্রকৃতির। তাও হলো না। শ্রাবণের শেষ মুহূর্তেও কাক্সিক্ষত বৃষ্টির দেখা মেলেনি। ভাদ্রের আগমনে তালপাকা গরমের জানান দিচ্ছে প্রকৃতি। সেই সাথে বেড়েছে অনির্ধারিত লোডশেডিং। আর একারণে ভ্যাপসা গরমে বেড়েছে তালপাখার কদর।
সাতক্ষীরার তালা উপজেলা কৃষি স্বনির্ভর একটি এলাকা। কালের বিবর্তনে কপোতাক্ষ ও বেতনা নদী হারিয়ে ফেলেছে তার নাব্যতা। বর্তমানে বেতনা নদী খননের কাজ চলমান। তবে কপোতাক্ষ নদীর খনন কাজ করা হলেও খুব ভাল সুফল পাওয়া যায় নি। ভরাবর্ষা মৌসুমে দেখা দিয়েছে বৃষ্টির স্বল্পতা।
রোদ-মেঘের খেলায় বৃষ্টি না হওয়ায় আবহাওয়ার বিরুপ প্রতিক্রিয়ায় এলাকায় বেড়েছে গরমের তীব্রতা। সেই সঙ্গে দেখো দিয়েছে লোডশেডিং। এ অবস্থায় তীব্র গরমের কারণে বেড়েছে তালপাতার তৈরি হাতপাখার কদর। নিয়ম অনুযায়ী লোডশেডিংয়ের কথা থাকলেও দিনে রাতে একাধিক বার হচ্ছে লোডশেডিং। দিনের বেলা লোডশেডিং হওয়াতে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে ব্যবসায়ীরা। সন্ধ্যায় লোডশেডিংয়ে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ক্ষতি আর রাতের বেলায় তীব্র গরমে কোমলমতি শিশুরা শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। গরমের কবল থেকে স্বস্তি পেতে রাতভোর চলছে হাত পাখার ব্যবহার। মা-বাবা না ঘুমিয়ে সন্তানের ঘুম নিশ্চিত করতে ব্যস্ত।
সম্প্রতি সময়ে সোলার ও ব্যাটারিচালিত চার্জিং ফ্যানের কারণে পাতপাখার প্রচলন প্রায় বিলুপ্ত। লোডশেডিংয়ের সুযোগ কাজে লাগিয়ে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী এসকল ইলেক্ট্রনিক পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে বলে জানান একাধিক ক্রেতা। তাই স্বল্প মূল্যে প্রচন্ড গরমে স্নিগ্ধ শীতল বাতাসের পরশ পেতে এলাকার মানুষ কিনছেন হাতপাখা। সম্প্রতি সময়ে হাট-বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা মেলে।
নগরঘাটা এলাকার আনারুল ইসলাম নামের এক ক্রেতা বলেন, গরম ও লোডশেডিং থেকে একটু শান্তি পেতে দুটো তালপাতার তৈরি হাতপাখা ক্রয় করলাম। দ্রব্য মূল্যের উর্ধগতির এই সময়ে হাতপাখার দাম মোটামুটি ঠিক আছে। তবে শিডিউল মেনে লোডশেডিং দিলে সবার জন্য ভালো হয়।
গাবতলা গ্রামের হাতপাখা তৈরির কারিগর কওসার আলিকে মাঝে হাট বাজারে পাখা বিক্রয় করতে দেখা যায়। তিনি জানান, আগে আমার গ্রামের অনেকেই হাতপাখা তৈরি ও বিক্রয়ের কাজ করতো। এখন হাতে গোনা দু-একজন করে। অধিকাংশ পাখা বাজারের দোকানগুলোতে পাইকারি দামে বিক্রয় করা হয়। সেখান থেকে ক্রেতা নেন।
তালা উপজেলার পোড়ার বাজারের ব্যবসায়ী মো: ছমির জানান, লোডশেডিংয়ের কারণে এবার পাখার চাহিদা বেড়েছে। পিস প্রতি ১৫ থেকে ৩০ টাকা দরে বিক্রয় করছি। শিডিউল মেনে লোডশেডিং দেওয়া হলে আমরা সকলেও উপক্রিত হবো।