
বিশেষ প্রতিনিধি :
ঘূর্ণিঝড় কোমেন ও জলোচ্ছাসের সম্ভাব্য আঘাতের আশংকায় সাতক্ষীরায় সব ধরনের আগাম প্রস্তুতি গ্রহন করা হয়েছে। এ ব্যাপারে বিশেষ নজর রাখা হয়েছে আইলা উপদ্রুত শ্যামনগর উপজেলার দুটি দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরা ও পদ্মপুকুর এবং আশাশুনির প্রতাপনগর ইউনিয়নের ওপর । সেখানে অধিকতর সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির এক জরুরি সভায় এ বিষয়ে ২২ টি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক লস্কার তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত সম্পর্কে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ( সার্বিক) এহতেশামুল হক বলেন পরিস্থিতি মোকাবেলায় চার হাজার স্বেচ্ছাসেবক , পর্যাপ্ত সংখ্যক ট্রলার ও নৌকা , ৭৪ টি সাইক্লোন শেল্টার , উদ্ধার কমিটি ,মেডিকেল টীম, শুকনো খাবার , পানি ও ওষুধপত্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তিনি জানান সিপিপি ( সাইক্লোন প্রিপেয়ার্ডনেস প্রোগ্রাম ) , রেড ক্রিসেন্ট টীম , স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের উদ্ধারকরী দল , আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্য ,রোটারি ক্লাব সদস্যদেরও প্রস্তুত রাখা হয়েছে । জেলা শহরসহ সাতটি উপজেলায় ৮টি নিয়ন্ত্রন কক্ষ এবং একটি মনিটরিং সেল গঠন করে পুরো বিষয়টি নিয়ন্ত্রন করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে ।
এদিকে, শ্যামনগর উপজেলার ভারপ্রাপ্ত ইউএনও আহসানউল্লাহ শরিফি জানান, তার এলাকার গাবুরা ও পদ্মপুকুরকে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ন ধরে নিয়ে ৩৯ টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে । এছাড়া বিভিন্ন স্কুল কলেজ ও মাদ্রাসাও ফাঁকা রাখা হয়েছে । এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জরুরিভাবে খুলে দেওয়ার আগাম ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। সব ইউনিয়ন পরিষদে লাল পতাকা তুলে সতর্কতা জারির পাশাপাশি মসজিদে মসজিদে এখনও জনগনকে সতর্ক থাকার আহবান জানানো হচ্ছে । নদী ও সাগরে অবস্থানরত জেলেদের দ্রুত নিরাপদ স্থানে চলে আসার কথা আগেই বলা হয়েছে বলে তিনি জানান ।
ঝুঁকিপূর্ন আইলা উপদ্রুত গাবুরা ও পদ্মপুকুরের ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদুল আলম ও আমজাদুল ইসলাম জানান, নদী ঘেরা এই দুই দ্বীপে সকাল থেকে কম বেশি ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাচ্ছে । মাঝে মাঝে বৃষ্টি হচ্ছে । আকাশে ঘন মেঘ থাকলেও দুপুরে বেশ কিছু সময় রোদও বেরিয়েছে ।
শ্যামনগর পানিউন্নয়ন বোর্ডের সেকশনাল অফিসার নিখিল কুমার জানান, গাবুরার নেবুবুনিয়া, নাপিতখালি ও গাবুরার কপোতাক্ষর দুর্বল বাঁধ ধসে পড়ার উপক্রম হয়েছে। আশাশুনির খোলপেটুয়া নদীর চাকলা, চুইবাড়িয়াও সুভদ্রাকাটি, পদ্মপুকুর ইউপির কপোতাক্ষর চাউলখোলা, কামালকাটি, পশ্চিম কামালকাটি, ,বন্যতলা পয়েন্ট ও বুড়িগোয়ালিনী ইউপির দুর্গাবাটি পাউবো বেড়ি বাঁধ মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এছাড়া দেবহাটার সুশীলগাতির ইছামতির ভাঙ্গন পয়েন্টের বেড়ি বাঁধ যে কোনো সময় বিলীন হয়ে যাবার আশংকা দেখা দিয়েছে। তিনি জানান পাউবোর এসব পয়েন্ট আইলায় ভাঙ্গার পর সংস্কার হলেও তা দফায় দফায় ভেঙ্গে যায় । এতে বেড়ি বাঁধগুলি খুবই দুর্বল অবস্থায় রয়েছে । এদিকে কপোতাক্ষ উপচে তালা ও কলারোয়া উপজেলার বিস্তীর্ন এলাকার কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে । রাড়িপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ অনেকগুলি স্কুল পানিতে সয়লাব হয়ে পড়ায় লেখাপড়ার ক্ষতি হচ্ছে বলে জানান প্রধান শিক্ষিকা শিখা চৌধুরী । এদিকে কয়েকদিন আগে কলারোয়ার দেয়াড়া কর্মকারপাড়া ও তালার কয়েকটি স্থানে ভাঙ্গনের ফলে কপোতাক্ষর পানি গ্রামে গ্রামে ঢুকে পড়েছে।