সাতক্ষীরায় ৫ কারণে ১২০ হাজার বিঘা জমিতে জলাবদ্ধতা


732 বার দেখা হয়েছে
Print Friendly, PDF & Email
সাতক্ষীরায় ৫ কারণে ১২০ হাজার বিঘা জমিতে জলাবদ্ধতা
জুলাই ২৭, ২০১৫ ফটো গ্যালারি সাতক্ষীরা সদর
Print Friendly, PDF & Email

নাজমুল হক:
খাল জবরদখল, বিলে লোনা পানি উত্তোলন, স্লুইচ গেটের মুখে পলিজমা , পানি নিষ্কাশনের পথ না থাকা ও খাল ও নদী ঠিকমত খনন না এই ৫ কারণে জেলায় প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। জলাবদ্ধতার কারণে প্রত্যেক বছর অন্তত ১২০ হাজার বিঘা জমিতে ফসল আবাদ করতে পারেনা কৃষকরা। অন্যদিকে জেলার বিভন্ন এলাকার মানুষ বাড়ি-ঘর ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছে স্কুল-কলেজে। প্রতি বছর এমন অবস্থা চললেও জলাবদ্ধতা নিরসনে কার্যকর কোন ব্যবস্থা গ্রহন করতে পারছে না পানি উন্নয়ন বোর্ড। পাউবো কর্মকর্তারা জানান, জলাবদ্ধতার সমস্যার সমাধান করতে একটি প্রকল্প প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হচ্ছে।
সূত্র জানায়, জেলার সবচেয়ে বেশি জলাবদ্ধতার শিকার হয় সাতক্ষীরা সদর উপজেলা। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের প্রত্যেকটিতে বিলে জলাবদ্ধতা থাকে। জলাবদ্ধতার কারণে অন্তত ৪৫ হাজার বিঘা জমির ফসল চাষের আওতায় আসে না। এ উপজেলার বল্লী, ঝাউডাঙ্গা, লাবসা, ফিংড়ি ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।
কলারোয়া উপজেলায় জয়নগর, দেয়াড়াসহ কয়েকটি ইউনিয়নের অন্তত ৩৫ হাজার বিঘা জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।
তালা উপজেলার পাটকেলঘাটা, ধানদিয়া, সরুলিয়া, ইসলামকাটি,কুমিরাসহ কয়েকটি ইউনিয়নে ২৬ হাজার বিঘা জমিতে জলাবদ্ধতা হচ্ছে। দেবহাটা উপজেলায় ৫ হাজার বিঘা, কালিগঞ্জ উপজেলার সাড়ে ৪ হাজার, আশাশুনি উপজেলার ৩ হাজার বিঘা এবং শ্যামনগর উপহেলার দেড় হাজার বিঘা জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।
সূত্র জানায়, জেলার বিভিন্ন বিলে বর্তমানে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে মৎস্য ঘের। কোন কোন বিলে মৎস্য ঘের গড়ে উঠার কারণে গ্রাম ও বিলের পানি নিষ্কাশনের কোন পথ নেই। অন্যদিকে বিলে ভিতর সরকারি খাল দখল করে স্থানীয় প্রভাবশালীরা নেট-পাটা দিয়ে মাছ চাষ করছে। ফলে পানি ঠিকমত নিস্কাশন হতে পারছে না।
সূত্র জানায়, চলতি মাসের শুরুতে সদর উপজেলার লাবসা ইউনিয়নের খেজুরডাঙ্গা, কুন্দুরানীসহ কয়েকটি স্লুইচ গেট দিয়ে মৎস্য ঘেরে লোনা পানি উঠানো হয়। এ পানি বল্লী ও ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের বিভিন্ন বিলে প্রবেশ করে। সম্প্রতি বৃষ্টির পানি এ পানির সাথে যোগ হওয়ায় তিন ইউনিয়নের প্রত্যেটি বিলে কানায় কানায় টইটম্বুর হতে থাকে। এই অবস্থা জেলার প্রতিটি বিলে হওয়ায় এর সাথে বর্ষার পানি যোগ হয়ে পানি কানায় কানায় বরে গেছে।
সূত্র আরো জানায়, পানি উন্নয়ন বোর্ড -২ এর আওতায় জেলার ৭টি উপজেলায় ১৩০টি স্লুইচ গেট আছে। আর পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ এ আছে শতাধিক। এ সব স্লুইচ গেটের মুখ উঁচু থাকায় পানি ঠিকমত নিষ্কাশন হয়না। অন্যদিকে এসব গেটের মধ্যে অর্ধশত গেটের পাখা ভাঙ্গা থাকায় নদীর জেয়ারের পানি হু হু করে বিলে প্রবেশ করছে। ফলে পানি বাড়ছে।
সূত্র আরো জানায়, জেলার বিলগুলোতে অপরিকল্পিতভাবে মৎস্য ঘের গড়ে উঠেছে। এসব মৎস্য ঘেরের পাশে কোন পানি নিষ্কাশনের পথ না থাকায় বিলের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড -২ এর আওতায় জেলার ৭টি উপজেলায় ৫১৮ কিলোমিটার। আর পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ এ অন্তত ৪০০ কিলোমিটার খাল রয়েছে। এসব খালের তলদেশ পলি জমে উঁচু হওয়ায় পানি ঠিকমত নিষ্কাশন হয় না।
অন্যদিকে বেতনা, কপোতাক্ষ, মরিচ্চাপ নদীর নাব্যতা না থাকা ও নদীর তলদেশ উঁচু থাকায় পানি ঠিকমত নিষ্কাশন হয় না। ফলে জেলার বিস্তিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে।
লাবসা ইউনিয়নের রাজনগর গ্রামের রুহুল আমীন জানান, বেতনা নদীর নাব্যতা না থাকায় পানি টানছে না। মাঠের থেকে নদীর পারি আরো বেশি।
ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম জানান, লাবসা ইউনিয়নের কিছু ঘের মালিকের কারণে আমাদের প্রতি বছর ডুবে থাকতে হয়। তারা প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমের আগে মৎস্য ঘেরে লোনা পানি উত্তোলন করে। যা ঝাউডাঙ্গা-বল্লী ইউনিয়নের বিলগুলোতে আসে। বর্ষার আগেই এক রাতে জোয়ারের নদীর পানিতে বিলে হাঁটু পানি পর্যন্ত উঠে।
সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মো. আসাদুজ্জামান বাবু ভয়েস অব সাতক্ষীরা ডটকমকে জানান, জলাবদ্ধতা আমাদের প্রধান সমস্যা। এটা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুল মালেক ভয়েস অব সাতক্ষীরা ডটকমকে জানান, জেলার প্রধান সমস্যা জলাবদ্ধতা। জলাবদ্ধতা দূর করতে হলে বিভিন্ন খালে অবৈধ নেট-পাটা অপসারণ করতে হবে। নদী ও খালগুলো ড্রেজার দিয়ে কাটতে হবে। এ জন্য একটি প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে। দ্রুত তা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।