
বি.এম জুলফিকার রায়হান ::
সাতক্ষীরায় পাঁচ বছরের শিশু আফসানা খাতুনকে পুকুরে চুবিয়ে হত্যা করার ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাটি ঘটেছে তালা উপজেলার তেতুলিয়া ইউনিয়নের লাউতারা গ্রামে। আর এ হত্যা কান্ডের সাথে জড়িত থাকার কারণে পুলিশ তার সৎ মা রোকেয়া খাতুনকে গ্রেফতার করেছে।
গ্রেফতারের পর ওই পাষন্ড মা বুধবার বিকালে সাতক্ষীরা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩ এর বিচারক রাকিবুল ইসলামের কাছে হত্যার ঘটনাটি তিনি নিজেই ঘটিয়েছেন বলে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এর আগে মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) গভীর রাতে তালা থানা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।
তালা থানা সুত্রে জানা যায়, বিগত ২০২১ সালের ৩০ এপ্রিল
বাড়ির পাশের একটি পুকুর থেকে ওই গ্রামের আব্দুল কাদিরের মেয়ে আফসানা খাতুনের (০৫) মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সেসময় আফসানা খাতুনের মরদেহ থানা পুলিশ ময়না তদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে এবং এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়।
পরে পুলিশ দীর্ঘ অনুসন্ধানে জানতে পারে আব্দুল কাদির মোড়লের প্রথম স্ত্রী নার্গিস খাতুনের সঙ্গে দাম্পত্য কলহের জের ধরে একমাত্র কন্যা সন্তান আফসানা খাতুন থাকা সত্ত্বেও ২০২০ সালে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। পরবর্তীতে কাদির মোড়ল ২০২০ সালের ২৬ অক্টোবর একই উপজেলার জেয়ালা গ্রামের রোকেয়া খাতুনকে বিয়ে করেন। কিন্তু দ্বিতীয় স্ত্রী রোকেয়া খাতুন প্রথমপক্ষের মেয়ে আফসানাকে সহ্য করতে পারতেন না। এমনকি রোকেয়া খাতুন ওই শিশু সন্তানটিকে মারপিটও করতেন।
এ নিয়ে প্রায়ই রোকেয়া খাতুন তার স্বামী ও শাশুড়ির সঙ্গে
ঝগড়ায় লিপ্ত হতেন। এক পর্যায়ে রোকেয়া খাতুন (২৩)
প্রতিশোধ পরায়ন হয়ে ওঠেন এবং আফসানা খাতুনকে হত্যা করার পরিকল্পনা করেন। এরই ধারাবাহিকতায় সৎ মা রোকেয়া খাতুন আফসানা খাতুনকে ২০২১ সালের ৩০ এপ্রিল বাড়ির পাশের পুকুরে গোসল করার নাম করে নিয়ে যান এবং পানিতে চুবিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। পরে পুকুরে ডুবে শিশু আফসানা খাতুনের মৃত্যু হয়েছে বলে প্রচার করা হয়।
এই ঘটনার কিছুদিন পর রোকেয়া খাতুন নিজেই তার স্বামীর
কাছে শিশুটিকে হত্যার কথা স্বীকার করেন। ঘটনাটি জানতে পেরে কাদির মোড়ল প্রথমে আদালতে একটি সিআর মামলা দায়ের করেন।
তদন্তকারী কর্মকর্তা ভিকটিমের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পর্যালোচনা এবং রাবেয়া খাতুনের স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক
বক্তব্য শোনেন এবং নিশ্চিত হন।
সর্বশেষ আব্দুল কাদির মোড়ল মঙ্গলবার (২০২২ সালের ১৮ জানুয়ারি) তালা থানায় তার দ্বিতীয় স্ত্রী রোকেয়া খাতুনের (২৩) বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন এবং ওই রাতে তাকে পুলিশ গ্রেফতার করেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তালা থানার পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) প্রীতিশ রায় বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, বুধবার আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারা মোতাবেক আসামির জবানবন্দি প্রদানের পর বিজ্ঞ আদালত তাকে কারাগারে পাঠিয়েছেন।