
আসাদুজ্জামান ::
সাতক্ষীরা জেলা রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি নিয়ে দু’ পক্ষের মধ্যে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে। যে কোন সময় সেখানে বড় ধরনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশংকা করছেন সাতক্ষীরার সচেতন নাগরিক সমাজ। তাই দ্রুত বিষয়টি প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।
জানা গেছে, সংস্থাটির সাতক্ষীরা জেলা ইউনিট কর্মকর্তা আতিকুল হককে জোর করে ছুটিতে যেতে বলা হয়েছে এবং অফিস থেকে বের করে দেয়া হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেছেন। বৃহস্পতিবার পূর্বনির্ধারিত ২ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্মসূচি সেরে জেলা ইউনিট কার্যালয়ে আসলে তাকে পরবর্তী ১২ দিন অফিসে না আসার জন্য বলা হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য ঃ গত ১৮ জানুয়ারি বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির মহাসচিব বি.এম.এম মোজহারুল হক এনডিসি স্বাক্ষরিত এক পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি অর্ডার (পি.ও.২৬ অব ১৯৭৩) এর আর্টিকেল ৭.৩ অনুযায়ী নির্বাচিত জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানগণ পদাধিকার বলে স্ব-স্ব জেলা রেড ক্রিসেন্ট ইউনিটের চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করবেন।
সে হিসেবে সাতক্ষীরা রেড ক্রিসেন্ট ইউনিটের সভাপতির দায়িত্ব বুঝে নেয়ার কথা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো: নজরুল ইসলামের।
তিনি এ সংক্রান্ত চিঠি পাওয়ার পরপরই সাতক্ষীরা রেড ক্রিসেন্ট ইউনিটের কর্মকর্তা আতিকুল হককে সংশ্লিষ্ট সকলকে অবহিত করে দিনক্ষণ নির্দিষ্ট করে আনুষ্ঠানিকভাবে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণ করার ব্যবস্থা নিতে বলেন।
কিন্তু ৩ মাসের অধিক সময় অতিবাহিত হলেও নজরুল ইসলামকে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়া হচ্ছে না দেখে তিনি আতিকুল হককে জানান, বৃহস্পতিবার তিনি অফিসে আসতে চান। তিনি আরও বলেন, সংশ্লিষ্ট সকলকে যেন জানানো হয় যে, সবাইকে নিয়ে চেয়ারম্যান মহোদয় চা খেতে চান।
আতিকুল হক আরো বলেন, চেয়ারম্যান মহোদয় আমাকে বিষয়টি বলার পর বুধবার আমি কমিটির সকল সদস্যকে ফোনে বিষয়টি জানাই।
রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সাতক্ষীরা জেলা ইউনিটের ভাইস চেয়ারম্যান ও সাতক্ষীরা-০২ আসনের সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ রবি ফোনে সবকিছু শুনে আমাকে বলেন, আপনাকে আমি ১২ দিনের জন্য ছুটি দিলাম। আপনাকে কাল থেকে ১২ দিন অফিস করতে হবে না।
বিষয়টি আমি কেন্দ্রের মহসচিব এবং চেয়ারম্যান মহোদয়কে জানিয়ে রাখি। এরপর বৃহস্পতিবার সকালে আমি ও জেলা ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক শেখ নুরুল হক সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ ও সাতক্ষীরা দিবা-নৈশ কলেজে রেড ক্রিসেন্ট যুব ইউনিটের দু’টি অনুষ্ঠান সেরে অফিসে ফিরে এলে এমপি
সাহেবের ভাই মহি আলম কয়েকজন লোক নিয়ে এসে আমাকে অফিস থেকে চলে যেতে বাধ্য করেন এবং বলেন, এমপি সাহেব ছুটিতে যেতে বলার পরও আপনি কেন অফিসে এসেছেন? আপনি এখনই অফিস থেকে চলে যান এবং আগামী ১২ দিন অফিসে আসবেন না।
এমপি সাহেব সাতক্ষীরায় এলে তবেই আপনি অফিস করবেন। আতিকুল হক বলেন, তাদের আচরণে বাধ্য হয়েই আমি অফিস ত্যাগ করে চলে আসি। আমির পেটের দায়ে চাকরি করি। সাতক্ষীরায় না হলে অন্য কোথাও আমার পোস্টিং হবে। কিন্তু এভাবে হুমকি-ধামকির মধ্যে আমি কিভাবে চাকরি করব। আমি আতঙ্কিত হয়ে অফিস থেকে চলে আসি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সদর এমপির ভাই মাহি আলম জানান, আমরা তাকে কিছু বলিনি। তিনি নিজেই ছুটিতে গেছেন।
এদিকে, বৃহস্পতিবার বিকাল ৫ টার দিকে সাতক্ষীরা পৌর আ.লীগের যুগ্ম-সম্পাদক রাশেদুজ্জামান রাশিসহ কয়েকজন আজীবন সদস্য সাতক্ষীরা রেড ক্রিসেন্ট অফিসের সামনে উপস্থিত হয়ে অফিস তালাবন্ধ পান। উপস্থিত গণমাধ্যম কর্মীদের উপস্থিতিতে রাশি বলেন, “আমি সাংবাদিকদের মাধ্যমে
সকলকে জানাতে চাই, আপনারা দেখুন রাষ্ট্রপতির আদেশবলে দায়িত্ববলে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব বুঝে নিতে চান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম। কিন্তু পরিকল্পিতভাবে রেডক্রিসেন্ট কার্যালয় আজ তালাবন্ধ করে রাখা হয়েছে। যাতে করে বৈধ চেয়ারম্যান তার দায়িত্ব বুঝে নিতে না পারেন। বক্তব্য দিয়েই রাশি নেতাকর্মীদের নিয়ে সেখান থেকে চলে যান।
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম জানান, সাতক্ষীরা রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির জেলা ইউনিট কর্মকর্তা আতিকুল হককে আমি গত বুধবার বলেছিলাম উনি যেন রেড ক্রিসেন্ট ইউনিটের সকলকে জানিয়ে রাখেন আমি বৃহস্পতিবার বিকালে সবাইকে নিয়ে অফিসে বসে একটু চা খেতে চাই।
সে অনুযায়ী রেড ক্রিসেন্টের কিছু আজীবন সদস্য সেখানে গিয়েছিলেন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে। তারা আমাকে জানান, অফিসের তলাবন্ধ করে রাখা হয়েছে। তালা বন্ধ থাকায় আমি সেখানে যাইনি। তবে আতিক সাহেব আমাকে জানিয়েছেন তাকে (আতিকুলকে) অফিসে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক।
এ বিষয়ে জানার জন্য সাতক্ষীরা জেলা রেড ক্রিসেন্ট ইউনিটের সাধরণ সম্পাদক শেখ নুরুল হকের মোবাইলে উপর্যুপরি ফোন দিলেও তার ফোনের সংযোগটি পাওয়া যায়নি।
এদিকে, বিষয়টি দ্রুত নিষ্পত্তি করার জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন জেলার সচেতন নাগরিক সমাজ।
##