
স্টাফ রিপোর্টার :
সাতক্ষীরা জেলা শহরের বুকচিরে প্রবাহিত প্রাণ সায়ের খাল পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমের উদ্বোধন করলেন সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক নাজমুল আহসান। রোববার সকাল সাড়ে ৮ টায় সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় সংলগ্ন ব্রীজ এলাকায় কোদাল ও দা দিয়ে খালপাড়ের আগাছা কেটে এই কার্যক্রমের শুভ উদ্বোধন ঘোষনা করেন তিনি।
উদ্বোধন কালে জেলা প্রশাসক নাজমুল আহসান বলেন, প্রাণ সায়েরের খালটি সাতক্ষীরা জেলা শহরবাসীর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি রক্ষানাবেক্ষনের দায়িত্ব শুধু স্থানীয় প্রশাসন, পৌরসভা বা এনজিওদের নয়। জেলা শহরের প্রত্যেক মানুষের দায়িত্ব রয়েছে এই খালের পরিবেশ সু-রক্ষার। ময়লা-আবর্জনা ফেলার স্থানে এটি যাতে পরিনত না হয় সে বিষয়টি শহরবাসিকেই নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, প্রাণ সায়ের খালটি আজ পরিস্কার করার উদ্যোগ গ্রহন করা হলো। সংরক্ষনের কাজটি শুরু হলো মাত্র। এর পর এই খালের দু’ধারের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের কার্যক্রম শুরু করা হবে। খালের ধারে কেউ যাতে ময়লা আবর্জ না ফেলে সে বিষয়টি দেখভাল করার জন্য তিনি পৌরসভার মেয়রকে অনুরোধ জানান। এছাড়া সাতক্ষীরা পাকাপুল সংলগ্ন খালপাড়ের রাস্তার ধারে ময়লা-আবর্জনা ফেরার জন্য যে ডাষ্টবিনটি তৈরী করা হয়েছে সে-টি পরিবেশ দুষন ঘটাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য পৌরসভা কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
জানাগেছে, সাতক্ষীরার কদমতলা বাজার এলাকা থেকে সাতক্ষীরা সুলতানপুর বড় বাজার পর্যন্ত ২.৮ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে খালের পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান চলবে। এ জন্য প্রায় ৭’শ শ্রমিক কাজ করবে। বেসরকারি সংস্থা সুশীলন ও ডব্লিউএফপি কাজটি বাস্তবায়ন করবে।প্রথম দিনেই দেড়’শ শ্রমিক কাজ শুরু করেছে।
প্রাণ সায়ের খাল পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম উদ্বোধন কালে বক্তব্য রাখেন সাতক্ষীরা পৌর মেয়র এম এ জলিল, সিভিল সার্জন ডা: সালেহ আহমেদ, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ্ মোহাম্মদ সাদী, প্রথম আলোর স্টাফ পিরোর্টার কল্যান ব্যানার্জি, এটিএন বাংলার স্টাফ রিপোর্টার, ভয়েস অব সাতক্ষীরা ডটকম সম্পাদক এম.কামরুজ্জামান ও পৌর সভার প্যানেল মেয়র শফিক-উদ-দৌলা সাগর।
সাতক্ষীরা শহরের বুক চিরে প্রবাহিত প্রাণসায়ের খাল। জমিদার প্রাণ নাথ রায় চৌধুরী সাতক্ষীরার মানুষের যোগাযোগ ও যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়নে এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারে খালটি খনন করেছিলেন। খালটি খননের ফলে জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষা পায় সাতক্ষীরা শহর। কোলকাতার সাথে নৌ-পথে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হয়। ব্যবসা-বাণিজ্যে বিকশিত হতে থাকে সাতক্ষীরা শহর। স্টিমার, লঞ্চ আর সারি সারি পাল তোলা নৌকা এসে ভিড়তে থাকে সাতক্ষীরা শহরে। কিন্তু সে সব আজ শুধুই স্মৃতি। কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে প্রাণসায়ের খাল। খালের বুক আজ কচুরিপানায় ভরা। দখল করতে করতে খালের অস্তিত্ব আজ চরম হুমকির মুখে। বর্জ্য আর আবর্জনা ফেলে খালের পরিবেশ বিনষ্ট করা হয়েছে। পচা দুর্গন্ধে খাল পাড় দিয়ে হাটা যায় না। খালের জমি দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে অবৈধ স্থাপনা। সাতক্ষীরা সুলতানপুর বড় বাজারের যাবতীয় আবর্জনা ফেলা হয় খালে। এছাড়া শহরের অন্যান্য স্থানের আবর্জনাও এ খালে এনে ফেলা হয়। এমন পরিস্থিতিতে প্রাণসায়ের খালের প্রাণ নিয়ে টানাটানি পড়ে যায়। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুম আসলেই খালের গুরুত্ব বাড়ে। পানি নিষ্কাশনের একমাত্র পথ এ খালটি হয়ে ওঠে শহরবাসির দু:খ। খালটি সংস্কারের দাবিতে মানববন্ধন, স্মারকলিপি প্রদান, মিছিল, মিটিং কত কিছুই হয়। কিন্তু খালটি সংস্কার হয় না। খাল খননের নামে চলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অর্থ লুট। প্রতিবাদ হয় বটে, কাজ হয় না। এমন পরিস্থিতিতে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন আপাতত: পানি নিষ্কাশনের লক্ষ্যে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করার উদ্যোগ নেয়ায় শহরবাসির মধ্যে জ্বলে উঠেছে আশার প্রদীপ।