
মনজুর কাদীর :
সাতক্ষীরায় সরকারী মোরগ-মুরগী পালন কেন্দ্রটি কর্তৃপক্ষের যথাযত তদারকির অভাবে গত ৫ বছর ধরে পতিত পড়ে রয়েছে। ফলে খামারের ভিতর আবর্জনা ও আগাছায় ছেয়ে গেছে। নষ্ট হচ্ছে মূল্যবান একাধিক ইনকিউবেটর মেশিন, অধীক ক্ষমতাসম্পন্ন জেনারেটর,এসি,ফ্রিজসহ মূল্যবান সব জিনিসপত্র। সন্ধ্যা নামলেই মোরগ , মুরগী পালন কেন্দ্রটি চলে যাচ্ছে মাদকাসক্তদের দখলে।
জানাগেছে, খামারটিতে বর্তমানে কোন ধরনের কার্যক্রম নেই, অথচ ৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী বসেবসে প্রতিমাসে সরকারী বেতন-ভাতা উত্তলন করছেন।
সাতক্ষীরার মোরগ-মুরগী পালন কেন্দ্রের সার্বিক তদারকির দায়িত্বে নিয়োজিত জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা: শশংক কুমার মন্ডল অবশ্য দাবী করেছেন, চলতি বছর পর পর দুই চালানে ৪ হাজার মুরগির বাচ্চা তুলে তা বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে বলে শুনেছি। বর্তমানে ওই পালন কেন্দ্রে কোন মরগির বাচচা নেই।
তিনি বৃহস্পতিবার (৫ নভেম্বর) সকালে ভয়েস অব সাতক্ষীরা ডটকমকে বলেন, বেশ কিছুদিন আগে যশোর সরকারী হাঁস-মুরগী পালন কন্দ্রের একজন কর্মকর্তাকে সাতক্ষীরা হাঁস-মুরগী পালন কেন্দ্রের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে তিনি ওই কর্মকর্তার নাম বলতে পারেননি। ওই কর্মকর্তার একটি মোবাইল নম্বর দিলেও সে-টি ছিল বন্ধ। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯ টা থেকে সাড়ে ১০ টা পর্যন্ত চেষ্টা করেও তাকে মোবাইলে তাকে পাওয়া যায়নি।
সাতক্ষীরা জেলা প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানাগেছে, ১৯৮৫ সালে সাতক্ষীরা-যশোর মহাসড়কের (সাতক্ষীরা শহরের) রসুলপুর এলাকায় ৩ একর জমির ওপর স্থাপীত হয় সাতক্ষীরা সরকারী মোরগ ও মুরগী পালন কেন্দ্র। ১৯৮৬ সালে মুরগী প্রতিপালন কেন্দ্র হিসেবে এর কার্যক্রম শুরু হয়। শুরু থেকে যশোর সরকারী মুরগীর হ্যাচারী থেকে ১ দিনের মুরগীর বাচ্চা এনে ২ মাস পালন করে সাধারন মানুষের মঝে তা সল্পমূল্যে বিতরণ করা হতো। উদ্দেশ্য ছিল এলাকায় বেকারত্ব দূরকরা।
সরেজমিন গিয়ে জানাগেছে, ২০১০ সাল পর্যন্ত ধীর গতিতে এই খামারের কার্যক্রম চললেও ২০১১ সাল থেকে খামারের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ফলে এখানে কর্মরত ৭ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী অলস সময় কাটাচ্ছেন। অভিযোগ রয়েছে, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা নিয়মিত অফিসেও আসেন না। অথচ মাস গেলেই তারা সরকারী বেতন-ভাতাসহ সব ধরনের সুযোগ সুবিধা ভোগ করছেন।
সম্প্রতি সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে খামারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অফিসে নেই। বাকী ৬ জন কর্মচারীর মধ্যে উপস্থিত রয়েছেন মাত্র ২ জন। এদের মধ্যে ১জন অফিসের বারান্দায় বিছানা পেতে ঘুমাচ্ছিলেন।
——————————————–
ব্যারাক নির্মাণ নিয়ে রয়েছে লুটপাটের অভিযোগ :
——————————————–
২০১১ সালের শুরুতে তৎকালীন প্রাণীসম্পদ মন্ত্রী সাতক্ষীরায় সফরে এসে সরকারী মোরগ ও মুরগী প্রতিপালন কেন্দ্রের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়ে কেন্দ্রটি পূর্নাঙ্গ হ্যাচারিতে রুপান্তরিত করার উদ্যোগ নেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী সেখানে প্রায় ৬৫ লাখ টাকা ব্যায়ে তিনটি ব্যারাকও তৈরী করা হয়। ২০১৩ সালের জুন মাসে নির্মান কাজ শেষ হয়। কিন্তু ব্যারাক নির্মান কাজ নিয়ে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেও সংশ্লিষ্ট তিন জন ( সাতক্ষীরার রাফিত ইন্টারপ্রাইজ, ঢাকার মমতাজ ইন্টারপ্রাইজ ও সিরাজগঞ্জের চৌধুরী ইন্টারপ্রাইজ ) ঠিকাদারই তৎকালীন মন্ত্রীর খুব কাছের মানুষ হওয়ায় তারা পারপেয়ে যায়। জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট বিভাগে সে সময় কাজের গুনগত মান নিয়ে অভিযোগ করে কোন ফল হয়নি বলে তারা জানান।
জানাগেছে, অবকাঠামগত উন্নয়ন কাজ শেষ হলেও প্রয়োজনীয় জনবল না থাকার অজুহাতে আজও এই খামারটি চালু হয়নি। ফলে সরকারী এই খামারটি বর্তমানে পতিত পড়ে রয়েছে।
ময়লা,আবর্জনা আর আগাছায় ভরে গেছে পুরো খামারটি। নষ্ট হচ্ছে মূল্যবান একাধিক ইনকিউবেটর মেশিন, অধীক ক্ষমতাসম্পন্ন জেনারেটর,এসি,ফ্রিজসহ মূল্যবান সব জিনিসপত্র। সন্ধ্যা নামলেই মোরগ ও মুরগী পালন কেন্দ্র চত্রে বসে মাদকের আসর।
সাতক্ষীরা বাসীর প্রত্যাশা, সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অবিলম্বে সরকারী মোরগ ও মুরগী পালন কেন্দ্রটি চালু করে এলাকার বেকারত্ব দূরীকরণে ব্যবস্থা করবে।
এ ব্যাপারে জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা: শশংক কুমার মন্ডল জানান, ২০১৩ সালে নির্মিত ব্যারাক আজও চালু করা সম্ভব হয়নি। মাঝেমধ্যে যেসব মুরগীর বাচ্চা খামারে উঠানো হচ্ছে তা পুরাতন ব্যারাকেই রাখা হচ্ছে। কি কারণে নতুন ব্যারাক এখনও চালু করা সম্ভব হয়নি জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি মাত্র দেড় মাস আগে সাতক্ষীরাতে যোগদান করেছি। এখনও সব কিছু খোঁজ-খবর নিতে পারেনি।