সাহসী মেয়েকে শেষ বিদায়


509 বার দেখা হয়েছে
Print Friendly, PDF & Email
সাহসী মেয়েকে শেষ বিদায়
মার্চ ১৯, ২০১৮ জাতীয় ফটো গ্যালারি
Print Friendly, PDF & Email

অনলাইন ডেস্ক ::
জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে নিজের দায়িত্ব পালন করেছেন পৃথুলা রশীদ। যাত্রীদের ফেলে ককপিট ছেড়ে যাননি জীবনের অন্তিম মুহূর্তেও। সেই সাহসী মেয়েকে সোমবার শেষ বিদায় জানাল স্বজন ও পরিবার।

সোমবার বিকেলে আর্মি স্টেডিয়ামে পৃথুলার মরদেহ গ্রহণ করে তার গর্বিত পরিবার। মা রাফেজা বেগম আগেই বলেছিলেন, মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছেন তার মেয়ে। মেয়ের আত্মাহুতিতে তিনি শোকে মুহ্যমান নন, বরং গর্বিত। তবে গর্ভধারিণী মা তো। কাল আর আবেগ ধরে রাখতে পারলেন না, মেয়ের কফিন জড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

গত ১২ মার্চ নেপালের রাজধানীতে বিধ্বস্ত ইউএস-বাংলার উড়োজাহাজের কো-পাইলট ছিলেন পৃথুলা রশীদ। ওই দুর্ঘটনায় ৫১ জন নিহত হন। তাদের মধ্যে ২৬ জন বাংলাদেশি। গতকাল ২৩ জনের লাশ দেশে আনা হয়। নিহতদের স্বজনদের মধ্যে সবার আগে আর্মি স্টেডিয়ামে আসেন পৃথুলা মা রাফেজা বেগম, বাবা আমিনুর রশীদ, মামা সাইফুর রশীদ।
সাংবাদিকদের কখনও কখনও নিষ্ঠুর হতে হয়। কাল আবার হতে হলো। পাষাণ হয়ে শোকার্ত স্বজনদের আবেগ অনুভূতি জানতে হলো।

পৃথুলার বাবা আমিনুর রশীদ বললেন, মেয়ের স্বপ্ন ছিল বৈমানিক হবে। ককপিটে বসে বিমান চালানোর স্বপ্ন পূরণ করেছে নিজের শ্রমঘামে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিমান দুর্ঘটনার কারণে বাবা-মা’র শঙ্কায় থাকতে কখন কী হয়। কিন্তু মেয়ের স্বপ্ন বলে কথা, তাই বাধা দেননি। কিন্তু ধারণাই করতে পারেননি একদিন এমন কিছু হবে।

পৃথুলার শোকার্ত মা রাফেজা বেগম কথাই বলতে পারলেন না। যতবার তার মেয়ের নাম ঘোষণা করা হলো, ততবারই আহাজারিতে ভেঙে পড়েন। স্টেডিয়ামের পরিবেশ আর্দ্র হয় সন্তানহারা মায়ের আহাজারিতে। মরদেহ হস্তান্তরের পর শ্যামলীতে তৃতীয় জানাজা শেষে সাহসী মেয়ে পৃথুলাকে দাফন করা হয় মিরপুর বুদ্ধিজীবী করবস্থানে।

১৯৯২ সালের ১৮ জুলাই ঢাকায় জন্ম বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান পৃথুলার। ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের প্রথম নারী পাইলট। ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সে পাইলট/ফার্স্ট অফিসার হিসেবে যোগ দেন ২০১৬ সালের জুলাইতে। তিনি প্রশিক্ষণ নেন আরিরাং ফ্লাইং স্কুল থেকে। ২০১২ সালে পৃথুলা আরিরাংয়ের তৃতীয় ব্যাচের প্রশিক্ষণার্থী ছিলেন। দুই বছরের কমার্শিয়াল পাইলট লাইসেন্স কোর্স শেষ করেছিলেন তিনি। বাংলাদেশের বেসরকারি বিমান সংস্থার পাইলটরা বেনারকে জানান, বাংলাদেশের তিনটি বেসরকারি বিমান পরিবহন সংস্থায় কমপক্ষে আড়াইশ’ বৈমানিক কাজ করেন। এর মধ্যে নারী ১৫ জনের বেশি নন।

আর সরকারি সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের এক কর্মকর্তা জানান, তাদের ১৯৩ পাইলটের মধ্যে নারী আছেন বড়জোর ১০ জন।