
অনলাইন ডেস্ক ::
অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ নিহতের ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার রিটায়ার্ড আর্মড ফোর্সেস অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন (রাওয়া) ও পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দলের মধ্যে বৈঠক হয়েছে। সিনহার ইস্যুতে সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে এ ধরনের বৈঠক এই প্রথম। মহাখালীতে রাওয়ার কার্যালয়ে দুই ঘণ্টাব্যাপী এ বৈঠক চলে। সেখানে উভয়পক্ষ একমত হয়েছে- এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি কেউ চায় না। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তৃতীয় কোনো পক্ষ যাতে সুযোগ না নিতে পারে, সে ব্যাপারেও সবাইকে সজাগ থাকতে বলা হয়েছে। সাবেক সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যে কেউ কেউ বলেছেন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ করা দরকার। সিনহার ঘটনার বিচার যেন ন্যায়বিচারের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকে। এ ঘটনায় কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেনকে প্রত্যাহার করা উচিত ছিল বলে সাবেক সেনা কর্মকর্তাদের কেউ কেউ অভিমত দেন। আবার পুলিশের কিছু ওসি পদে বিসিএস ক্যাডার কর্মকর্তা হিসেবে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদায়ন করা সময়ের দাবি বলে মন্তব্য করেন সাবেক সেনা কর্মকর্তারা। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, রাওয়ার সভাপতি মেজর (অব.) খন্দকার নুরুল আফসারের নেতৃত্বে সাবেক সেনা কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। তাদের মধ্যে ছিলেন সেনাবাহিনীর সাবেক চিফ অব জেনারেল স্টাফ ও বিজিবির প্রধান লে. জেনারেল (অব.) মইনুল ইসলাম, মেজর জেনারেল (অব.) রফিকুল ইসলাম, মেজর জেনারেল (অব.) মোজাম্মেল, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন প্রমুখ। অন্যদিকে পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলে ছিলেন অতিরিক্ত ডিআইজি আসাদুজ্জামান, অতিরিক্ত ডিআইজি আখতারুজ্জামান, অতিরিক্ত ডিআইজি মোল্যা নজরুল ইসলাম, তেজগাঁও বিভাগের ডিসি হারুন অর রশিদ ও নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার জায়েদুল ইসলাম।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে লে. জেনারেল (অব.) মইনুল ইসলাম বলেন, খুব ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। খোলামনে সবাই কথা বলেছেন। এতে অনেক কিছু উঠে আসে। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না হয়, এটা আমরা বলেছি। তদন্ত ও বিচারের গতি যেন শ্নথ না হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমান বলেন, অত্যন্ত হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশে আলোচনা হয়েছে। পুলিশ যে বিষয়টি সাংগঠনিক নয়, ব্যক্তির দায় হিসেবে দেখছে, এটা তারা বুঝতে পেরেছেন। তদন্ত কমিটি হয়েছে। কমিটি যে রিপোর্ট দেবে সে অনুযায়ী দোষীদের বিচার হবে। পুলিশ মহাপরিদর্শকও চান, দুই বাহিনীর মধ্যে যে পারস্পরিক সম্পর্ক ও আস্থা, তা উত্তরোত্তর আরও বাড়ুক। আমাদের পক্ষ থেকে এটাও বলা হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের ডিসি হারুন অর রশিদ বলেন, সিনহার ঘটনাকে কেন্দ্র করে যাতে অন্য কোনো পক্ষ সুযোগ নিতে না পারে, সেটাও আলোচনা হয়েছে।
বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সাবেক সেনা ও পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিনহার ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিপ্রা দেবনাথের ব্যক্তিগত বিষয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে যেন তাকে হেয় করা না হয়, সে ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে। দায়িত্বশীল পদে থেকে কেউ যাতে কারও এ ধরনের ব্যক্তিগত বিষয় তাদের ফেসবুক আইডি থেকে শেয়ার না করেন, সে বিষয়ে জোরালোভাবে ব্যবস্থা নিতে হবে। আলোচনায় সাতক্ষীরার এসপির বিষয়টিও আসে। শিপ্রার ঘটনায় তার ভূমিকা ভালোভাবে নেননি অনেকে।
সাবেক এক সেনা কর্মকর্তা বলেন, সবক্ষেত্রে যাতে একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা যায়, পুলিশ বাহিনীকে সেভাবে গড়ে তুলতে হবে। ফরেনসিক তদন্তের ওপর বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। ডিজিটালি যে কোনো ঘটনার তদন্ত কতটুকু এগিয়ে নেওয়া যায়, সে ব্যাপারে আরও মনোযোগী হওয়া দরকার। ‘বন্দুকযুদ্ধ’ সব সমস্যার সমাধান নয়। নতুনভাবে অপরাধ ও মাদক নিয়ন্ত্রণের কথা ভাবতে হবে। কোনো পক্ষ থেকে সিনহার নিহতের ঘটনায় করা মামলার তদন্ত ও বিচার যেন শ্নথ না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা দরকার। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার হওয়া দরকার, যাতে এটা একটা মানদণ্ড হয়ে থাকে।
বৈঠকে গত কয়েক বছরে নানা ক্ষেত্রে পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়টিও উঠে আসে। বলা হয়, পুলিশ অনেকদূর এগিয়েছে। তবে কিছু কিছু জায়গায় ওসির পদে বিশেষ করে মেট্রোপলিটন এলাকায় এ পদে এএসপি পদায়নের বিষয়টি নিয়ে ভাবা উচিত। যে কোনো ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য রাজনৈতিক নেতাদের সদিচ্ছাটা জরুরি বলেও আলোচনায় উঠে আসে।
পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, দীর্ঘদিনের যে কোনো সিস্টেম বদলের জন্য সমাজের চাপও জরুরি। সমাজ বদলে গেলে তার পাশাপাশি অনেক কিছু বদলে যেতে বাধ্য। অতীতে নুসরাত, ইয়াসমিন, জালাল ও রুবেল হত্যার আসামিদের বিচার হয়েছে। নারায়ণগঞ্জে সাত খুনে জড়িতদের বিচার হয়েছে। এসি আকরামের বিচার হয়েছে। ডিআইজি মিজানের বিচার হচ্ছে। এসব ঘটনায় ব্যক্তির দায় পুলিশ বাহিনী নেয়নি। কক্সবাজারের ঘটনায় ব্যক্তির দায় পুলিশ নেবে না। তদন্তে দোষী সাব্যস্ত যে যার ভূমিকার ফল ভোগ করবে।