সুন্দরবনে বিষ প্রয়োগে মাছ ধরা কমানো যাচ্ছে না


141 বার দেখা হয়েছে
Print Friendly, PDF & Email
সুন্দরবনে বিষ প্রয়োগে মাছ ধরা কমানো যাচ্ছে না
মার্চ ২৭, ২০২৩ ফটো গ্যালারি সুন্দরবন
Print Friendly, PDF & Email

ডেস্ক রিপোর্ট ::

সুন্দরবনের নদ-নদী-খাল-নালা থেকে সেখানকার বাসিন্দাদের একটি অংশ মাছ ও কাঁকড়া শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন। বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে এই কাজ করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, স্বল্প সময়ে বেশি মাছ শিকার করতে তাঁদের অনেকে বিষ প্রয়োগ করছেন। শিকারিদের বক্তব্য, মাছ কমে যাওয়ায় ধরা পড়ছে কম। এ কারণে খরচ পোষাতে বিষ প্রয়োগ করতে হচ্ছে। অন্যদিকে বনের পরিবেশ রক্ষায় বন বিভাগের দায়িত্বশীলরা এই শিকারিদের গ্রেপ্তার করলেও বিষ প্রয়োগ থামানো যাচ্ছে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বনজসম্পদ আহরণের সঙ্গে যাঁরা যুক্ত তাঁদের বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা না গেলে এই সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়।

সুন্দরবন সংলগ্ন ১৯ উপজেলার বাসিন্দাদের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ মাছ ও কাঁকড়া শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন। সেখানকার নদ-নদী-খাল-নালা থেকে মাছ ও কাঁকড়া শিকারের অনুমতি রয়েছে। তবে এই অনুমতি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। মাছ ও কাঁকড়ার প্রজণনকালে এই অনুমতি দেওয়া হয় না। এ কারণে সব সময় মাছ ও কাঁকড়া শিকার করা যায় না বলে এই লোকদের জীবিকা নির্বাহ কষ্টকর হয়।

শ্যামনগর উপজেলার মথুরাপুর জেলেপল্লীর বাসিন্দা নটবর মালো (৪৫) বলেন, ‘আমরা সাত দিন শিকারে যাই। আবার সাত দিন বাড়িতে থাকি। এ হিসাবে এক মাসে মাত্র ১৫ দিন আমাদের রোজগারের উপায় আছে। পূর্ণিমা ও অমাবস্যার সময় ছাড়া সুন্দরবনের নদ-নদী-খাল-নালায় মাছ ও কাঁকড়া পাওয়া যায় না। ওই সময়ে আমরা বনে থাকি।’

সাধারণত একটি নৌকায় সাত দিনে যে মাছ বা কাঁকড়া পাওয়া যায়, তা ছয় থেকে আট হাজার টাকা বিক্রি করা যায়। প্রতিবার যাত্রায় খরচ হয় দুই হাজার টাকা। বন বিভাগের অনুমতি নিতে রাজস্ব দিতে হয়। ফলে যে পরিমাণ মাছ ও কাঁকড়া আহরণ করা যায় তা দিয়ে জীবিকা চলে না।

শ্যামনগর উপজেলা, শরণখোলা-মঠবাড়িয়া উপজেলায় বনসংলগ্ন এলাকায় বসবাসকারীদের যে অংশ মাছ ও কাঁকড়া শিকার করেন, অতিরিক্ত মাছ আহরণে তাঁরা সুন্দরবনের খালে বিষ প্রয়োগ করেন। এতে অল্প সময়ে বেশি মাছ ধরা পড়ে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জেলে বিষ প্রয়োগের কথা স্বীকার করে জানান, বনের খালে আগের মতো আর মাছ পাওয়া যায় না। খালে বিষ দিলে অনেক মাছ একসঙ্গে পাওয়া যায়।

সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের করমজল স্টেশন কর্মকর্তা মো. আজাদ কবীর বলেন, ‘সুন্দরবনে মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা প্রয়োজন। এ ছাড়া বিষ প্রয়োগে মাছ শিকার বন্ধ করা সম্ভব না।’

তিনি বলেন, ‘কোনো একটি খালে যদি কেউ বিষ প্রয়োগে মাছ শিকার করে, তবে পরের ১৫ দিন ওই খালে আর মাছ পাওয়া যায় না।’

সুন্দরবন একাডেমির নির্বাহী পরিচালক আনোয়ারুল কাদির বলেন, ‘নিয়ম মেনে সুন্দরবন থেকে সম্পদ আহরণ করা না হলে ইকোসিস্টেমের ক্ষতি হবে। বিষ অত্যন্ত ক্ষতিকর। বিষের ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া শুধুমাত্র মাছ নয়, জলজ অন্যান্য প্রাণী, এমনকি উদ্ভিদের ওপরও পড়বে।’

সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবু নাসের মহসিন হোসেন বলেন, ‘সুন্দরবন থেকে সরাসরি সম্পদ আহরণ করেন দুই থেকে তিন লাখ লোক। তাঁদের বিকল্প জীবিকার ব্যবস্থার বিষয়টি সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করা হচ্ছে।’