
নলতা প্রতিনিধি:
দেশকে স্বাধীন করতে মহান মুক্তিযুদ্ধে জীবন বাজি রেখে অসামান্য অবদান রেখেছেন মুক্তিযোদ্ধারা। ৭১’র রণাঙ্গনে তাদের সেই আত্মত্যাগের কথা বাঙালী কখনো ভুলতে পারে না। আজ বাংলার শ্রেষ্ঠ সন্তান তাঁরা। একমাত্র তাদের অবদানের প্রেক্ষিতে
বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় জাতির সেই শ্রেষ্ঠ সন্তানদের মধ্যে আজও অনেকে সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে আছেন। যেখানে অভিযোগ আছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চোখ ফাঁকি দিয়ে অনেক ভুয়া
মুক্তিযোদ্ধাও সুবিধা লুটে নিচ্ছে। আর বঞ্চিত হচ্ছে রণাঙ্গনের সৈনিক প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা।
এমনই বঞ্চিত ৪জন মুক্তিযোদ্ধার চিত্র পাওয়া গেছে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জে। তাঁরা দীর্ঘদিন উপজেলা কমান্ড অফিসে হাটাহাটি
করেও সুফল পায়নি। গেজেটে অন্তর্ভুক্ত হতে মোটা অংকের টাকার প্রয়োজন বলেও অভিযোগ তাদের। সে অর্থ অসহায় মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে যোগানদেওয়া কোনভাবেই সম্ভব না।
মন্ত্রণালয়ে লিখিত আবেদনে বঞ্চিতদের অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, কালিগঞ্জের বন্দকাটি গ্রামের মৃত: আছিম মোড়লের ছেলে আলিমুদ্দীন মোড়ল (৭০), শ্রীরামপুর গ্রামের মৃত: জাফর মোল্লার ছেলে মোকসেদুর রহমান (৬২), কালিকাপুর-রামনগর গ্রামের
মৃত: নুর আলী সরদারের ছেলে আব্দুল গফুর সরদার (৬০), এবং শ্রীরামপুর গ্রামের মৃত: তাছের আলী মোল্লার ছেলে মো. জোনাব আলী (৬৫) মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যক্ষভাবে অংশ গ্রহন করেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তারা ভারতের ২৪ পরগনা জেলাধীন থুবা
(তকিপুর) ক্যাম্পে সব ধরণের প্রশিক্ষণ গ্রহন করেন এবং পরে যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ গ্রহণ করেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রশিক্ষণের সনদ অনুযায়ী এদের ২ জন বাংলাদেশ পুলিশ বিভাগে চাকুরীও পায়। অন্যরা দিনমজুর খেটে জীবন যাপন
করলেও বর্তমানে অসহায় বৃদ্ধ। সেসময় মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই সংক্রান্ত তথ্যগুলো তাদেরকে সঠিক সময়ে জানানো হয়নি। বিধায় যথাসময়ে তারাও আবেদন করতে পারেনি বলে জানান তারা।
পরবর্তিতে ২০০৯ সালে যাচাই-বাছাইয়ের আদেশ হলে তাঁরা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং প্রধান মন্ত্রীর কাছে আবেদন জানান। সে অনুযায়ী তাদের নাম মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে স্থানীয় অফিসে প্রেরণ করা হলেও স্থানীয়ভাবে তা কোন
কার্যকর করা হয়নি। শেষ পর্যন্ত ১৪ সালের মার্চ মাসে বঞ্চিতরা স্বশরীরে মন্ত্রণালয়ে হাজির হয়ে কাগজপত্র উপস্থাপন করেন। যার ডি,জি নং-১৭৮৫৬, ১৪০৭০৭ ও ১৭৮৫৭। কিন্তু তাদের অভিযোগ স্থানীয়ভাবে গাফিলতির কারণে তাদের সেই
অপরিসীম অবদানের কোন মূল্যায়ন হচ্ছে না। বরং রণাঙ্গনের সেই স্মৃতি বুকে নিয়ে দুঃখে-ক্ষোভে দিন কাটাতে হচ্ছে তাদের। এবিষয়ে বর্তমান সরকার বদ্ধপরিকর থাকলেও মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে তারা সকল সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। তাই জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান এই মুক্তিযোদ্ধাদের মর্যাদা রক্ষার্থে দ্রুত তাদের কাগজপত্র অনুযায়ী গেজেটভুক্ত করার প্রয়োজন বলে মনে করেন মুক্তিযোদ্ধাসহ সচেতন মহল।