
নাজমুল হক :
সাতক্ষীরা শহরের পলাশপোলস্থ নাফ ক্লিনিকে ডাঃ দেবদুলালের হাতে স্কুল ছাত্রী রোক্সনা খাতুনের (১৪) মৃত্যুর ঘটনার দুই দিন অতিবাহিত হলেও ডাক্তারের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি সাতক্ষীরা জেলা সিভিল সার্জন অফিস। নাফ ক্লিনিকে মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও সোমবার তড়িঘড়ি করে সিভিল সার্জন গত ৮ এপ্রিল তারিখে স্বাক্ষর করে পলাশপোলস্থ অস্তিত্বহীন ‘নোভা ক্লিনিক’ বন্ধ করার আদেশ দিয়েছেন। অন্যদিকে ডাঃ দেবদুলাল ও নেভা ক্লিনিক নিয়ে স্থানীয় একাধিক পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হওয়ায় সোমবার জেলাজুড়ে আলোচিত ঘটনা ছিলো এটি। সিভিল সার্জন ডাঃ সালেহ আহমেদ জানান, রোগী মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে আমার কাছে কেউ অভিযোগ করেনি। তবে অনুমোদন না থাকায় শহরের পলাশপোলস্থ ‘নোভা ক্লিনিক’ গত ৮ এপ্রিল বন্ধ করে দিয়েছি।
সূত্র জানায়, ২৩ জুন পেটে ব্যথার কারণে আশাশুনি উপজেলার গদাইপুর গ্রামের নুরুল শেখের মেয়ে ও গদাইপুর জেহের আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী রোক্সনা খাতুনকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থায় ক্লিনিকের দালাল আশাশুনি উপজেলার খাজরার বোরহান উদ্দীন বুলু কম খরচে উন্নত চিকিৎসার প্রলোভন দেখিয়ে অনুমোদনহীন শফিকুল ইসলাম ও শাহাজান হোসেনের মালিকানাধীন নাফ ক্লিনিকে ২৪ জুন ভর্তি করে। ক্লিনিকের মালিক শফিকুল ইসলাম পরদিন ক্লিনিকের নিচে নোভা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ডাক্তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বলে রেক্সোনার পেটের নাড়ী উল্টে আছে, পেটের নাড়ীতে ছিদ্র হয়েছে। ফলে দ্রুত অপারেশন করতে হবে। এই বলে ২৬ জুন ডাঃ দেবদুলালকে ডেকে রেক্সনার অপারেশন করায় ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। আর এ জন্য খরচ দিতে হয় প্রায় ৮০ হাজার টাকা। এসময় তিনি তড়িঘড়ি করে অপারেশন করায় অপারেশন অসম্পূর্ণ থেকে যায়। ফলে পেটের ব্যথা কমেনি রেক্সোনার। অপারেশনে ত্রুটি হওয়ায় ২৯ জুন একই ক্লিনিকে পুনরায় অপারেশন করেন দেবদুলাল। কিন্তু সেখানে অপচিকিৎসা হওয়ায় প্রচন্ড রক্ত ক্ষরণ হতে থাকে। গত শনিবার রাতে প্রচন্ড খিচুনি হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে রেক্সোনা। খবর পেয়ে রাতেই পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে ক্লিনিকের মালিক, ডাক্তার-নার্সরা পালিয়ে যায়।
সূত্র জানায়, ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের সাথে সিভিল সার্জন অফিসের কতিপয় কর্মকর্তার নিয়মিত মাসোহারা সিস্টেম থাকায় এতোদিন মৌখিক অনুমোদনে চলত ক্লিনিকটি। কিন্তু শনিবার ভুল চিকিৎসায় রোগি মারা যাওয়ায় বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ায় সিভিল সার্জন অফিস গতকাল সিএস/সাত/শা-১/২০১৫/৬৭৮/১(৩) নং স্মারকে গত ৮ এপ্রিল তারিখে স্বাক্ষর দেখিয়ে ম্যানেজার ‘নোভা ক্লিনিক’ পলাশপোলকে ক্লিনিকের যাবতীয় কার্যক্রম বদ্ধ করার নির্দেশ দেন। সেখানে বলা হয় চলতি বছরের ৬ এপ্রিল সিভিল সার্জন অফিসের ক্লিনিক পরিদর্শন টিম পরিদর্শন করে ক্লিনিকের কোন কার্যক্রম না পাওয়ায় ক্লিনিকের কার্যক্রম বন্ধ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, সিভিল সার্জনের অফিসের কোন কর্মকর্তা কোন দিন নাফ ক্লিনিক পরিদর্শনে আসেনি। ক্লিনিকের মালিক শফিকুল ইসলাম ও শাহাজান হোসেন নিয়মিত অফিসের কতিপয় কর্মকর্তাকে মাসোহারা দিত। সিভিল সার্জন অফিসের প্রধান অফিস সহকারী এম কে আশেক নেওয়াজ জানান, ওটা নাফ ক্লিনিক নয় নোভা ক্লিনিক। এটা ৮ এপ্রিল বন্ধ করা হয়েছে। তবে নাফ ক্লিনিকের স্বপক্ষে কাগজ দেখালে তিনি সিভিল সার্জনের সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন। সাতক্ষীরা জেলা সিভিল সার্জন ডা. সালেহ আহমেদ গতকাল দুপুরে জানান, এ বিষয়ে পত্রিকায় সংবাদ দেখে আমি তদন্ত কমিটি গঠন করতে পারি। পত্রিকা আনতে বলেছি। পত্রিকায় সংবাদ পড়ে পরে ব্যবস্থা নেব। রোক্সনার পিতা মামলা বা অন্য কেউ অভিযোগ না দিলে আমি তেমন কিছুই করতে পারব না। তবে জেলা সুশীল সমাজ ডা. দেবদুলালের বিএমডিসি’র সনদ বাতিলে জোর দাবী জানান। তারা এ বিষয়ে জেলা প্রশাসককে উদ্যোগী হওয়ার আহবান জানান।