
অনলাইন ডেস্ক ::
নিখোঁজের পাঁচ দিন পর রংপুরের বিশেষ জজ আদালতের পিপি ও আওয়ামী লীগ নেতা রথীশ চন্দ্র ভৌমিক বাবু সোনার লাশ উদ্ধার করেছে র্যাব। পুলিশ বলছে, স্ত্রীর পরকীয়ার কারণেই খুন করা হয় পিপি রথীশ চন্দ্র ভৌমিককে। তার লাশটি যেখান থেকে উদ্ধার করা হয় সেটি তার স্ত্রীর প্রেমিকের ভাইয়ের নির্মাণাধীন বাড়ি।
বুধবার রাত সোয়া ১টার দিকে রংপুর নগরীর মোল্লাপাড়া এলাকায় একটি নির্মাণাধীন বাড়ির মেঝে থেকে তার গলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ওই আইনজীবীর স্ত্রী এবং তার প্রেমিকসহ ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
রংপুরের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, স্ত্রীর পরকীয়ার কারণে রথীশ চন্দ্র ভৌমিককে খুন হতে হলো। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আরো যারা জড়িত তাদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।
র্যাব-১৩ রংপুরের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেজর আরমিন রাব্বি জানান, রথীশ চন্দ্র ভৌমিকের স্ত্রী স্নিগ্ধা ভৌমিকের দেয়া তথ্য মতে তার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
র্যাব ও পুলিশ জানায়, জাপানি নাগরিক হত্যা ও মাজারের খাদেম হত্যা মামলার পিপি ছিলেন রথীশ চন্দ্র ভৌমিক বাবু সোনা। গত শুক্রবার (৩০ মার্চ) বাবু সোনার পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয় বাবু সোনা নিখোঁজ হয়েছেন। তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এরপর বিভিন্ন সংগঠন তাকে উদ্ধারে মানববন্ধন, সমাবেশ, অনশনসহ নানা কর্মসূচি পালন করে। এরপরই মাঠে নামে র্যাব, পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তারা প্রথমেই পরকীয়ার বিষয়টি মাথায় রেখে তদন্তে নামেন। এরপর পুলিশ বাবু সোনার স্ত্রী তাজহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা স্নিগ্ধা ভৌমিক ও তার প্রেমিক একই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক কামরুল ইসলামের মোবাইল ফোনের কললিস্ট বের করে। কললিস্ট দেখে আঁতকে উঠেন পুলিশ। প্রতিদিন প্রেমিক-প্রেমিকা জুটি ৩০ থেকে ৩৫ বার মোবাইলে কথা বলতেন। ওই কললিস্ট দেখে সন্দেহ হলে শনিবার রাতে নগরীর রাধাবল্লভের বাড়ি থেকে প্রথমে গ্রেফতার করা হয় কামরুল ইসলামকে। তাকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। এরপর হত্যাকাণ্ডের তথ্য জানায় কামরুল।
মঙ্গলবার রাতে র্যাব বাবু পাড়ার বাড়ি থেকে স্নিগ্ধা ভৌমিককে গ্রেফতার করে। তাদের দেয়া তথ্য পেয়ে র্যাব মঙ্গলবার রাতে সোয়া একটার দিকে বাবু সোনার বাবুপাড়ার বাড়ি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে মোল্লাপাড়ায় খাদেমুল ইসলাম জাফরীর নির্মাণাধীন বাড়ির মেঝে থেকে লাশটি উদ্ধার করে।
এরপর রথীশ চন্দ্র ভৌমিকের ছোট ভাই সুশান্ত ভৌমিক, রংপুর আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক, রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রাজু এবং অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসেন তুহিনকে ঘটনাস্থলে নিয়ে যান লাশ শনাক্তের জন্য। লাশটি ফুলে ফেঁপে যাওয়ায় চিনতে পারছিলেন না। দুর্গন্ধে ওই এলাকায় যাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়ে। খবর পেয়ে সাংবাদিকরাও ছুটে যান সেখানে। এরপর সুশান্ত ভৌমিক ও জাহাঙ্গীর হোসেন তুহিন খুন হওয়া রথীশ চন্দ্র ভৌমিকের পায়ের জুতা দেখে লাশ শনাক্ত করেন। পরে বুধবার ভোরে লাশটি উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
রথীশ চন্দ্র ভৌমিকের পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়, রংপুর তাজহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ছিলেন রথীশ চন্দ্র ভৌমিক। ওই বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে চাকরি করতেন বাবু সোনার স্ত্রী স্নিগ্ধা ভৌমিক ও কামরুল ইসলাম। দীর্ঘদিন ধরে তাদের মধ্যে পরকীয়ার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এ নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে বাবু সোনার মাঝে মাঝে ঝগড়া হতো। পরকীয়ার কারণে অশান্তি ছিল পরিবারের মধ্যে। বিষয়টি নিয়ে অনেকবার ঘরোয়াভাবে বিচারও হয়। কিন্তু তারপরও পরকীয়া থেকে ফেরাতে পারেনি স্ত্রীকে। বাবু সোনার এক ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলে ঢাকায় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেন। বাড়িতে তেমন একটা লোকজন থাকতো না। বাবু সোনাও বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে গভীর রাতে বাড়িতে ফিরতেন।
রংপুর আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক বলেন, আমার সহকর্মী বাবু সোনার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের আমি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। যেন কেউ আর এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে সাহস না পায়। রথীশ চন্দ্র ভৌমিক হিন্দু বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক ছাড়াও হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি এবং বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এ ঘটনায় বাবু সোনার ছোট ভাই সুশান্ত ভৌমিক বাদী হয়ে কোতয়ালি থানায় একটি মামলা করেছেন।
নারী ও শিশু নির্যাতন আদালতের পিপি জাহাঙ্গীর হোসেন তুহিন বলেন, আমি বাবু সোনার জুতা দেখে চিনতে পারি। বাবু সোনা একজন ভাল মানুষ ছিলেন। তার এ ধরনের হত্যাকাণ্ড মেনে নেওয়া যায় না।
রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রাজু বলেন, বাবু সোনা জেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। আমরা আইন শৃংখলা বাহিনীর কাছে দাবি জানাই এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সবাইকে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
খুন হওয়া রথিশ চন্দ্র ভৌমিকের ছোট ভাই সুশান্ত ভৌমিক বলেন, আমি দাদার লাশ দেখে তাকে শনাক্ত করি। আমি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি চাই।