
জড়িতরা এখনো ধরা ছোঁয়ার বাইরে
পলাশ কর্মকার, কপিলমুনি ::
কপিলমুনির পার্শ্ববর্তী হরিঢালী ইউনিয়নে সামাজিক বনায়নের মূল্যবান বৃক্ষ কেটে হরিলুট হওয়ার সংবাদ বিভিন্ন প্রিন্টিং ও অনলাইন সংবাদপত্রে প্রকাশিত হলে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে পুরো কপিলমুনি ও হরিঢালী জনপদে। তথ্যবহুল অনুসন্ধানী সংবাদ প্রকাশ হওয়ায় বৃক্ষ নিধন ও বিকিকিনিতে যারা সম্পৃক্ত সেই দুষ্ট চক্রের মাথাব্যাথা শুরু হয়েছে। নিজেদের অপরাধ ও দুর্নীতি ঢাকতে তারা উপকার ভোগীদের নানান প্রলোভন দেখিয়ে বশে আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে বলে একটি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
প্রায় ২৪ বছর আগে হরিঢালী ইউনিয়নে ৮টি গ্রামে সরকারী রাস্তার দু’ধারে উত্তরণ নামের একটি এনজিও প্রায় ৭ হাজার বিভিন্ন প্রকার ফলজ ও বনজ চারা রোপন করে। এলাকার সুবিধা বঞ্চিত জনগোষ্ঠির অর্থনৈতিক সহায়তা প্রদান ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য বৃক্ষ রোপন করাই ছিল এনজিওটির প্রধান উদ্দেশ্য। এনজিও কর্মিদের নিবিড় পরিচর্যা ও রক্ষনাবেক্ষনে গাছগুলো যখন বেড়ে ওঠে তখন এ অঞ্চল সবুজ ও নান্দনিক দৃশ্যের রুপ নেয়, আর তখনই হরিঢালী কৃষক সমবায় সমিতি লিঃ নামে একটি সংগঠনের আত্ম প্রকাশ ঘটে। এ সংগঠনটি ওই উত্তরণ’র লাগানো গাছগুলোর ফাঁকে ফাঁকে নাম মাত্র কিছু সংখ্যক গাছ লাগিয়ে পুরো গাছগুলোর মাকিকানা দাবী করে। এতে গাছের মালিকনা নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে বিতর্ক সৃস্টি হয়। শুরু হয় মামলা মোকদ্দমা যা আজও চলমান। আর মালিকনায় জড়িয়ে পড়লেও হরিঢালী কৃষক সমবায় সমিতি লিঃ এর পক্ষে থেকে গত ৫/৬ বছর যাবৎ দফায় দফায় নির্বিচারে গাছ কেটে সাবাড় করতে ভুল করেনি তারা। মোট গাছের প্রায় ৬৫ শতাংশ কেটে কেটি টাকা বিক্রি করে হাতে গোনা কয়েক ব্যক্তি হরিলুট করলেও জবাব দিতে হয়নি কোথাও। এমনটাই বলছেন এলাকার বাসিন্দারা, তবে এরা প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ প্রতিবাদ করতেও সাহস পায়নি। প্রতিবাদের সুর সামান্য উঠলেই তাদেরকে মামলার ভয় দেখিয়ে স্তব্দ করা হয়।
বনায়নের এই গাছ কাটার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নকারী হিসাবে এ সমিতির সাধারন সম্পাদক শেখ লিটনের নাম জোরেশোরে প্রচার হচ্ছে। গাছ কাটার এত বড় মিশন সফল হওয়ায় শেখ লিটনের কারিশমায় সুধি মহল অবাক হয়েছেন। তবে মিমন সফল হলেও গাছ বিক্রির কাড়ি কাড়ি টাকা কোথায় গেল? কারা গিলে ফেললো উপকার ভোগীদের বৃহদাংশ ভাগের টাকা? এমন প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। এ সমিতির দলিলে উপকারভোগীদের ৬৫ শতাংশ, ইউনিয়ন পরিষদ ২০ শতাংশ, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ৫ শতাংশ, বি আর ডি বি ১০ শতাংশ উল্লেখ রয়েছে। কর্তন হওয়া শেষ দফায় ৩৫ টি মূল্যবান গাছ যার বাজার মূল্য প্রায় ৭ লক্ষ টাকা। আর ৬৫ শতাংশ মালিক এই এলাকার গরীব ও সুবিধা বঞ্চিত ৩১৩ জন উপকার ভোগী সদস্য। কিন্তু তাদেরকে মাথাপিছু দেয়া হয়েছে ১৮০ টাকা মাত্র । যদিও সব সদস্য এ টাকা এখন পাইনি। চেয়ারম্যান ৪০ শতাংশ ও উপকার ভোগীদের নামে মাত্র টাকা দেওযা হয়। অবশিষ্ট টাকা কোথায় গেল? যদিও বন বিভাগশেষ দফায় গাছ কাটার অনুমতি দেননি।
এলাকাবাসীর প্রশ্ন কেন চেয়ারম্যানকে ২০ শতাংশ বেশি দেয়া হলো। কেন সমিতির সদস্যদের মাত্র ১৮০ টাকা দিয়ে তাদেরকে বঞ্চিত করা হলো ? অবশিষ্ট টাকা কোথায় গেলে? তথ্যানুসন্ধানে জানাযায়, হরিঢালী কৃষক সমবায় সমিতি লিঃ এর সাইনবোর্ড ব্যবহার করে ৪/৫ জন ব্যক্তি ৫/৬ বছর যাবৎ গাছ কেটে বিক্রি করে হরিলুট করছে। লুটেরা প্রভাবশালী হওয়ায় তারা অধরায় থেকে যাচ্ছে। তবে গাছ কাটার সংবাদ সম্প্রতি বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হল নিয়মবর্হিভূতভাবে বৃক্ষ নিধন ও গাছ বিক্রির টাকার হরিলুটে কারা জড়িত তা খতিয়ে দেখতে সরকারি একটি তদন্ত টিম শ্রীঘ্রই মাঠে নামছে বলে একটি সূত্র জানায়।
ইউপি চেয়ারম্যানকে ৪০ শতাংশ কেন দেয়া হলো এমন প্রশ্নের উত্তরে হরিঢালী কৃষক সমবায় সমিতি সাধারণ সম্পাদক শেখ লিটন জানান, নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে দেয়া হয়েছে।
চেয়ারম্যান আবু জাফর সিদ্দিকী রাজু বলেন, গাছ বিক্রির ৪০ শতাংশ টাকা আমি গ্রহন করেছি। পরবর্তী প্রশ্ন করতে গেলে দেড় ঘন্টা পর ফোন দিবেন বলে ফোনটি কেটে দেন।