ডেস্ক রিপোর্ট ::
প্রায় দেড় হাজার বছর আগে আজকের দিনে মহানবী হযরত মুহম্মদ (সা.) এর জন্মগ্রহণ করেন। আজ বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) নানা আয়োজনে সাতক্ষীরাসহ সারা দেশে দিবসটি পালিত হচ্ছে।
হিজরি ৫৭০ সালের এই দিনে (১২ রবিউল আউয়াল) আরবের মক্কা নগরীর সভ্রান্ত কুরাইশ বংশে মা আমিনার কোল আলো করে জন্ম নিয়েছিলেন বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)।
মহানবী (সা.) অতি অল্প বয়সেই আল্লাহর প্রেমে অনুরক্ত হয়ে পড়েন এবং প্রায়ই তিনি হেরা পর্বতের গুহায় ধ্যানমগ্ন থাকতেন। ২৫ বছর বয়সে মহানবী বিবি খাদিজার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। মাত্র ৪০ বছর বয়সে তিনি নব্যুয়ত লাভ বা মহান রাব্বুর আলামিনের নৈকট্য লাভ করেন।
পবিত্র কোরআন শরীফে বর্ণিত আছে, ‘মহানবীকে সৃষ্টি না করলে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পৃথিবীই সৃষ্টি করতেন না’। এসব কারণে এবং তৎকালীন আরব জাহানের বাস্তবতায় এ দিনের (পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবীর) গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনেক বেশি। বাংলাদেশসহ বিশ্ব মুসলিম সম্প্রদায় এ দিনটি ঈদে মিলাদুন্নবী হিসেবে পালন করে থাকে।
ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তাঁরা মহানবী (সা.)-এর জীবনাদর্শ অনুসরণ করে ভ্রাতৃত্ববোধ ও মানবকল্যাণে ব্রতী হওয়ার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে যথাযথ মর্যাদায় পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী পালনের জন্য সরকার, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন নানা কর্মসূচি পালন করছে। এ সকল কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে মহানবী (সা.)-এর জীবনের ওপর আলোচনা, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল।
এ উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে পক্ষকালব্যাপী বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে। গতকাল বাদ মাগরিব বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পূর্ব সাহানে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এই অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন করবেন। এর আগে বাদ আসর তিনি বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ চত্ত্বরে মাসব্যাপী ইসলামী বইমেলার উদ্বোধন করবেন।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন আয়োজিত অনুষ্ঠানমালার মধ্যে রয়েছে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার সমাধিসৌধে পবিত্র কোরআনখানি, দোয়া মাহফিল, ১৫ দিনব্যাপী ওয়াজ, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, বাংলাদেশ বেতারের সঙ্গে যৌথ প্রযোজনায় সেমিনার, ইসলামী সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, আরবি খুতবা লিখন প্রতিযোগিতা, ক্বিরাত মাহফিল, হামদ-না’ত, স্বরচিত কবিতা পাঠের মাহফিল, ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্কুলে নৈতিকতা ও চরিত্র গঠন বিষয়ক সেমিনার, বিশেষ স্মরণিকা ও ক্রোড়পত্র প্রকাশ।
এছাড়াও পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) ১৪৪৪ হিজরি উদযাপন উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সকল বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়, ৫০টি ইসলামিক মিশন ও ৭টি ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমীতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে।
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উদযাপন উপলক্ষে দেশের সব হাসপাতাল, কারাগার, সরকারি শিশুসদন, বৃদ্ধ নিবাস, মাদকাসক্তি নিরাময়কেন্দ্রে উন্নত খাবার পরিবেশনেরও ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
ঈদে মিলাদুন্নবী (স.) স্থলবন্দরে আমদানী-রপ্তানী বন্ধ
পবীত্র ঈদে মিলাদু নবী উপলক্ষে সরকারি ছুটিতে দেশের সকল স্থল বন্দরগুলোর মত সসাতক্ষীরার ভোমরা-ঘোজাডঙ্গা ও যশোরের বেনাপোল-পেট্টাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পন্য আমদানি রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। ফলে বেনাপোলের দু’পারের বন্দর সড়কে আটকা পড়েছে সহ¯্রাধিক পন্যবাহি ট্রাক।
বেনাপোল বন্দরের পরিচালক আব্দুল জলিল জানান, সরকারি ছুটি থাকায় বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বন্দর দিয়ে আমদানি রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। তবে বন্দর দিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে পাসপোর্ট যাত্রী যাতায়াত রয়েছে স্বাভাবিক। রবিবার সকাল থেকে সচল হয়ে পোর্ট। অন্যদিকে সকালে ১৩১টি খালি ট্রাক ফিরে গেছে ভারতে।
ধুলিহর-ব্রহ্মরাজপুর গার্লস স্কুলে ঈদে মিলাদুন্নবী (স.) পালন
মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) এর জন্ম ও ওফাত দিবস উপলক্ষ্যে বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ধুলিহর-ব্রহ্মরাজপুর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে আয়োজন করা হয় নানা অনুষ্ঠানের। অনুষ্ঠানের মধ্যে ছিলো হামদ্-নাত, আলোচনা সভা, দোয়া-দুরুদ ও মোনাজাত।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ এমাদুল ইসলামের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন সহকারী শিক্ষক মোঃ নজিবুল ইসলাম, মোঃ হাফিজ্লু ইসলাম, শামীমা আক্কার, খালেদা খাতুন, হারুন অর রশিদ প্রমুখ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সহকারী প্রধান শিক্ষক অনুজিৎ কুমার মন্ডল, সহকারী শিক্ষক কনক কুমার ঘোষ, অরুণ কুমার ঘোষ, দেবব্রত ঘোষ, ভানুবতী সরকার, গীতা রানী সাহা, মৃনাল কুমার বিশ্বাস প্রমুখ।
আলোচনা সভায় বক্তারা মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) এর জীবন ও আদর্শ তুলে ধরে বলেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম। মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, নৈরাজ্য ও নাশকতার বিরুদ্ধে ইসলাম ধর্মের অবস্থান। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় মহানবীর বিদায় হজ্জ্বের ভাষণ ও হুদাইবিয়ার সন্ধির কথা তুলে ধরে বক্তারা বলেন নবীজী বিশ্ব মানবতার মুক্তির দিশারী। বক্তারা মহানবীর জীবন ও আদর্শকে ধারণ করে জীবন গড়ার আহ্বান জানান। দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন সিনিয়র শিক্ষক মাওঃ মোঃ নজিবুল ইসলাম।
সাতক্ষীরা পৌরসভার সাত নম্বর ওয়ার্ডের রইছপুর গ্রামবাসীর জশনে জুলুছ র্যালী
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে রইচপুর গ্রামবাসী পায়ে হেঁটে র্যালী আয়োজন করে। সকালে ফজরের নামাজের পর রইচপুর ব্রিজ এলাকা থেকে র্যালী টি উদ্বোধন করা হয়। পরে দোয়া ও মোনাজাত করেন রইচপুর পশ্চিমপাড়া মসজিদের ইমাম হাফেজ আব্দুল্লাহ।
হাফেজ আব্দুল্লাহ তাঁর বক্তব্যে বলেন, ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) সারা বিশ্বের মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত পবিত্র ও মহিমান্বিত দিন। মহান আল্লাহ তাআলা হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে সমগ্র বিশ্বজগতের রহমত হিসেবে প্রেরণ করেন। হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর আদর্শ, প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণতা বর্তমান বিশ্বে জাতিতে জাতিতে সংঘাত-সংঘর্ষ নিরসনে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে।
মাহবুব আলম বলেন মহানবী (সা.)-এর সুমহান আদর্শ ও সুন্নাহ অনুসরণের মধ্যেই মুসলমানদের অফুরন্ত কল্যাণ, সফলতা ও শান্তি নিহীত রয়েছে।
সাতক্ষীরা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে পবিত্র ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী (সা.) পালিত
সাতক্ষীরা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে পবিত্র ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী (সা.) উদদযাপন ২০২৩, সীরাতুন-নবী (সা.) শীর্ষক আলোচনা ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টায় বিদ্যালয়ের হলরুমে প্রধান শিক্ষক এসএম আব্দুল্লাহ আল মামুনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভা, দুরুদ পাঠ ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনা সভায় প্রধান শিক্ষক এস. এম আব্দুল্লাহ আল-মামুন বলেন, ‘মানবতার মুক্তির দূত মহানবী (সা.)কে আল্লাহ পাক বিশ্ব জগতের জন্য রহমত হিসেবে পাঠিয়েছেন। বিশ্ব নবীর শুভাগমন মানবজাতির জন্য রহমত স্বরূপ। পবিত্র মহাগ্রন্থ আল-কোরআন ও নবীর রেখে যাওয়া হাদিস মেনে জীবন যাপন করলে ইহকাল ও পরকালে মুক্তি পাওয়া যাবে।
মহানবীর জীবনীর সব কিছু মেনে চলে শিক্ষার্থীদের সুন্দর জীবন গড়ার পরামর্শ দেন।’ এসময় শিক্ষার্থীদের মাঝে ঈদে মিলাদুন্নবীর তাৎপর্য তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন সাতক্ষীরা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক উম্মে হাবিবা, আবু সাঈদ, আমিনুর রহমান, শফিউল ইসলাম, মোস্তফা মনিরুজ্জামান, খোরশেদ আলম, মমতাজ হোসেন, আসাদুজ্জামান প্রমুখ।
আলোচনা সভা শেষে নবীর জীবনীর উপরে কুইজ প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন ইভেন্টের বিজয়ী প্রতিযোগিদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। পরে মুসলিম উন্মার শান্তি কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করেন সিনিয়র শিক্ষক মো. আবুল খায়ের। অনুষ্ঠানে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সমগ্র অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক মো. হাবিবুল্লাহ।
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জে জশনে জুলুসে অনুষ্ঠিত
মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সা:) এর পবিত্র জন্মদিন ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষ্যে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জে জশনে জুলুসে শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে স্থানীয় ধর্মপ্রাণ মুসুল্লিরা জশনে জুলুসের শোভাযাত্রা শেষে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে ধর্মীয় সভায় মিলিত হন।
কালিগঞ্জ থানা মসজিদের খতিব মাওলানা আশরাফুল ইসলাম আজিজীর সঞ্চালনায়, উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি ও কালিগঞ্জ উপজেলা জুলুস কমিটির সভাপতি মাহবুবুর রহমানের সভাপতিত্বে।
অতিথি ছিলেন কালিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাঈদ মেহেদী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও তারালী ইউপি চেয়ারম্যান এনামুল হোসেন ছোট, জেলা পরিষদ সদস্য ও জুলুস কমিটির সহ-সভাপতি ফিরোজ কবীর কাজল, কুশুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মেহেদী হাসান সুমন। ইটালী আওয়ামী লীগে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রনি আহম্মেদ। উপজেলা পরিষদের মসজিদের ইমাম মাওলানা আকরাম হোসেন।
দিনব্যাপী আলোচনায় বক্তারা বলেন, রাসূল (সা.) এই ধরাধামে রহমত হিসেবে আগমন করেছেন। এটা শুধু মুসলমান নয় বরং মহাবিশ্বের সকল মাখলুকাতের জন্য মুক্তির দূত হিসেবে আগমন করেন প্রিয় নবী।
রাসূলপাকের আগমনে সমস্ত মাখলুকাত খুশি, আনন্দিত। তাদের জন্য এরচেয়ে আর বড় নিয়ামত কী হতে পারে! আর নিয়ামত লাভের পর আনন্দিত হওয়া, খুশি প্রকাশ করা তো স্বাভাবিক। সে কারণে আজ বিশ্ব মুসলিম উম্মাহ আনন্দে আত্মহারা।
মহানবীর আগমনকে কেন্দ্র করে তাঁর আগমনের মাসে তাঁর জীবন বৃত্তান্ত আলোচনা, রবের দেয়া শ্রেষ্ঠ নিয়ামতের শুকরিয়া আদায়ের নিমিত্তে খুশি জাহির করা, শরিয়তসম্মত বিভিন্ন কার্যাবলী সম্পাদন করাই হলো ঈদ-ই মিলাদুন্নবী। এই মিলাদুন্নবী সারাদেশের শহরে, গ্রামে পালিত হয়ে থাকে। নবীকে ভালোবাসাই ঈমান। ঈমানের দাবি হলো প্রিয় নবী (সা.)’র জীবনী আলোচনার মাধ্যমে তাকে জানা, তার আনুগত্য করা। প্রায় ১৫০০ বছর পূর্বে ১২ রবিউল আউয়াল পবিত্র মক্কা নগরীতে মা আমিনার কোল আলোকিত করে বিশ্বনবীর জন্ম হয়।