॥ সামিউল মনির ॥
বাবার কোলে চেপে মায়ের সাথে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা হয় তিন বছরের সাবিহা আক্তার রুহি। বাসা থেকে পায়ে হেঁটে কিছুদুর এগুতেই সড়কের পাশে থাকা মসজিদের দিকে চোখ পড়ে তার। ‘আব্বু এটা কি’ বলে পিতার উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুড়ে দেয় সে। উত্তর মিলতেই ছোট্র রুহি বায়না ধরে মসজিদে যাওয়ার। তবে হাসপাতাল পৌছানো জরুরী বিধায় পরবর্তীতে মসজিদে নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সিএনজির খোঁজে দ্রুত হাঁটতে থাকেন তারা।
এসময় রুহি জিদ ধরে পিতার উদ্দেশ্যে বলে, আব্বু তুমি আমাকে মসজিদে নিলে না। মেয়ের অভিমানী অনুযোগ উপেক্ষা করতে না পেরে স্ত্রীকে বাইরে রেখে বাবা ও মেয়ে ঢুকে যায় মসজিদে। ওজু করার আবদার জানিয়ে পিতার দৃষ্টি আকর্ষণের পর সে ইচ্ছাও পুরণ হয় তার। একপর্যায়ে পানি খাইতে চাওয়ায় বাইরে যেয়ে দোকান থেকে কিনে খাওয়ানোর কথা জানানো হয় তাকে। তবে নাছোড়বান্দা রুহির ইচ্ছায় মসিজদের ট্যাপ থেকে পানি খাওয়ার পর আবারও বাবার কোলে চেপে বসে সে।
পুনরায় হাসপাতাল অভিমুখে রওনা দিয়ে পিতার মুখে সে জানতে চায় প্রতিদিন সকালে তাকে কি পড়ানো হয় তাকে। পিতার মুখ থেকে আরবী হরফগুলো ও কলেমা শাহাদাৎ শুনে আপন মনে রুহি তা আওড়াতে থাকে। এসময় সিএনজিতে বসা পিতার দু’গালে চুমু দিয়ে ঘুমিয়ে যায় সে। ইতিমধ্যে হাসপাতালে পৌছালে পরীক্ষা করতে আসা চিকিৎসক জানায় দুনিয়ার জীবন শেষ করে পরপারে পাড়ি জমিয়েছে ছোট্র এ শিশু। পথিমধ্যে ‘আম্মু’ ‘আম্মু’ শব্দে একাধিকবার ডাকা হলেও মৃদু সাড়া দেয়ার বাইরে ছোট্র রুহি আর কোন কথা বলেনি।
হৃদয় বিদারক ঘটনার শিকার সাবিহা আক্তার রুহি আমির সোহেল ও ফাহিমা খাতুন দম্পতির একমাত্র সন্তান। শ্যামনগর উপজেলা সদরের নকিপুর গ্রামের আবুল হোসেনের মেয়ে ফাহিমা ও বরিশালের রাজাপুর গ্রামের আমির কর্মসুত্রে চট্রগ্রামের আগ্রাবাদে বসবাসরত।
রুহির মামা সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আলম মাসুদ জানান তিন বছর এক মাস বয়সী রুহি ২৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় না ফেরার দেশে পাড়ি দেয়। স্থানীয় একটি গার্মেন্টসে কর্মরত হওয়ার সুবাদে তারা চট্রগ্রামের আগ্রাবাদে বসবাস করতেন। রুহিকে দাদার বাড়ি রাজাপুরে দাফন করা হয়েছে।
মাসুদ জানান ছয়দিন ধরে জ্বরাক্রান্ত ছিল রুহি। শুরুতে পরপর দু’জন চিকিৎসকের কাছে নেয়া হলেও তারা পরীক্ষার পরামর্শ না দিয়ে ঔষধ দিয়েছিল।
তিনি আরও জানান মৃত্যুর একদিন আগে ভাগ্নির চিকিৎসার প্রয়োজনে মাত্র পাঁচশ টাকা দাবি করেছিল তার বোন ফাহিমা। ইতিমধ্যে মেয়ের অসুস্থতার জন্য প্রায় চার পাঁচ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে- উল্লেখ করে হাত শুন্য থাকায় ঐ টাকা চেয়েছিল বলেও জানায় সে। দিতে না পারার আক্ষেপে পুড়তে থাকা এ তরুণ ক্রন্দনরত কন্ঠে জানায় শুরুতে পরীক্ষা করলে হয়তবা এমন পরিণতি এড়ানো যেত। বিষয়টি হালকাভাবে নেয়ার চড়া মাশুল দিতে হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ডেঙ্গুর ভয়াবহতায় এখনও চারপাশে শত শত রুহি রয়েছে। তাদের চিকিৎসায় যেন একই ধরনের গাফিলতি না হয় সে ব্যাপারে চিকিৎসক ও পরিবারকে সতর্ক হওয়ার অনুরোধ করেন তিনি।
##