গোলাম সরোয়ার ::
সাতক্ষীরার গোপিনাথপুর গ্রামের নারীদের হাতে বুনন খড় আর খেজুর পাতার বিভিন্ন প্রকার দৃষ্টিনন্দন পন্য সামগ্রী রপ্তানি হচ্ছে ইউরোপের জামার্ন, ইতালী, স্পেন, সুইডেন, অষ্ট্রেলিয়া, কানাডা ও আমেরিকায়।
এসব পন্য সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে শপিং বাস্কেট, রাউন্ড বাস্কেট, শ্রাবনী ঢাকনা বাস্কেট, স্কয়ার বাস্কেট, মিনি বাস্কেট, বালতি, সোর্ড, ওয়েষ্ট বাস্কেট, মিরা, ডালি, টেবিলম্যাট ও রাউন্ডম্যাট।
সাতক্ষীরার একটি রপ্তানিকারক প্রতিষ্টান এসব নারীদের নিকট থেকে অন্তত দুই দশক ধরে ওই পন্য সামগ্রী সংগ্রহ করে তা ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করছেন।
এতে করে জেলার অন্তত ৬০০ থেকে ৭০০ নারী আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বি হয়েছেন।
সরেজমিনে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার গোপিনাথপুর গ্রামে যেয়ে দেখা যায় এ গ্রামের প্রায় ৫০ শতাংশ নারী তারা সংসারের কাজের পাশাাপাশি খড় আর খেজুর পাতার দিয়ে বিভিন্ন প্রকার দৃষ্টিনন্দন সব পন্য সামগ্রী তৈরী করছে। কথা হয় ওই গ্রামের গৃহবধু রিক্তা সরকার, সন্ধ্যা রানী সরকার ও মিনতি রানী সরকারের সাথে। তারা জানালো প্রায় ১৫ থেকে ১৬ বছর ধরে খড় এবং খেজুর পাতা দিয়ে দৃষ্টিনন্দন বিভিন্ন প্রকার পন্য সামগ্রী তৈরী করেন। সাংসারিক কাজ করেও প্রতি মাসে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা উপার্জন হয়। তাদের উৎপাদিত এসব পন্য সাতক্ষীরার একটি রপ্তানিকারক প্রতিষ্টানে সরবরাহ করেন।
রপ্তানিকারক প্রতিষ্টান ঋশিল্পী ইন্টারন্যাশনালের প্রডাক্ট ম্যানেজার ও গ্রুপ-কোডিনেটর সাগরিকা মন্ডল জানান, সাতক্ষীরার প্রায় ৬০০ শত নারী খড় ও খেজুর পাতার বিভিন্ন প্রকার পন্য সামগ্রী তৈরী করে তার প্রতিষ্টানে সরবরাহ করে। এরপর এসব পন্য সামগ্রী ইউরোপ আমেরিকার বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়। এ কাজে নিয়জিত একেকজন নারী সাংসারিক কার্জকর্ম সামলেও মাসে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা উপার্জন করেন। তিনি বলেন, বছরে ২৮ থেকে ৩০ কন্টেইনার খড় ও খেজুর পাতার পন্য রপ্তানি করা হয়ে থাকে। যার আনুমানিক রপ্তানি মুল্য ২৫ থেকে ২৬ কোটি টাকা।
সাতক্ষীরার রপ্তানিকারক প্রতিষ্টান ঋশিল্পী ইন্টারন্যাশনালের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মুন্সি খায়রুল ইসলাম জানান, খড় ও খেজুর পাতার তৈরী বিভিন্ন পন্য সামগ্রী প্রায় দ্ইু দশক ধরে রপ্তানি করে আসছে তার প্রতিষ্টানটি। তিনি বলেন, সাতক্ষীরার নারীদের হাতে বুনন এসব পন্য সামগ্রী ইউরোপের জামার্ন, ইতালী, স্পেন, সুইডেন, অষ্ট্রেলিয়া, কানাডা ও আমেরিকায় ব্যাপক চাহিদা। বছরে একটি উল্লেখযোগ্য পরিমানে রপ্তানি করা হয়ে থাকে।
সাতক্ষীরা জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক একে.এম শফিউল আযম
জানান, প্রান্তিক পর্যায়ের নারীদের স্বাবলম্বি করে তুলতে সরকার বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প হাতে নিয়েছে। তার পাশাপাশি বেসরকারী ভাবে অনেক নারী উদ্যোক্ত তৈরী হচ্ছে। এসব নারী হস্তশিল্পের কাজ করে আর্থিক ভাবে স্বচ্ছল হচ্ছেন। তবে সাতক্ষীরার গোপিনাথপুরের নারীদের হাতে তৈরী খড় খেজুর পাতার পন্য সামগ্রী বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে এটি অবশ্যই জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখছে। এসব পন্য সামগ্রী রপ্তানি করে বৈদেশীক মুদ্রা অর্জিত হচ্ছে দেশে।
সাতক্ষীরা জেলা প্রসাশক মোহাম্মাদ হুমায়ুন কবির জানান, সাতক্ষীরা জেলায় নারী উদ্যোক্তা বাড়ছে। এখানে হস্তশিল্পের অনেক মানসম্পন্ন পন্য উৎপাদন করছেন নারীরা। সরকারের পক্ষ থেকেও নারীদের স্বাবলিম্ব করে তুলতে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহন করা হয়ে থাকে। তাছাড়া সাতক্ষীরা জেলা থেকে চিংড়ি, কাঁকড়া, মধু, আম, মাটির টালিসহ অন্যান্য পন্য রপ্তানি হয়ে থাকে। যা আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য ভুমিকা রাখে।
##