॥ শাহিনা আক্তার ॥
“শরীরকে ছোয়া যতো সহজ মনকে ছোয়া ততো নয়।”
ঠিক তেমনি শরীরের অসুখ যতো সহজে ধরা যায় মনের অসুখ ততো সহজে ধরা যায় না।আর এর মূল কারন হচ্ছে মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে আমাদের জানার অজ্ঞতা।।
শারীরিক ভাবে সক্ষমতা বা উর্বরতায় থেকেও আমরা হয়তো মানসিক ভাবে বিদ্ধস্ততার কারনে অনেক সময় জীবন যুদ্ধে হেরে যাই।
জীবনকে সফলতার চূড়ায় নিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদের শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের সুস্থতাও জরুরি।
মানসিক স্বাস্থ্য আসলে কী?
মানসিক স্বাস্থ্য হলো আমাদের মন, আচরণগত ও আবেগপূর্ণ স্বাস্থ্যের দিকটি। আমরা কি চিন্তা করি, কি অনুভব করি এবং জীবনকে সামলাতে কিরকম ব্যবহার করি এগুলোই আসলে আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য। একজন মানসিক ভাবে সুস্থ মানুষ নিজের সম্পর্কে ইতিবাচক ভাবনা ভাবে এবং কখনোই কিছু আবেগ যেমন রাগ, ভয়, হিংসা, অপরাধবোধ বা উদ্বেগ দ্বারা আবিষ্ট হবেনা।
জীবিকার তাগিদে অর্থের পেছনে ছুটতে ছুটতে আমরা সবাই যান্ত্রিক হয়ে পরছি।সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জীবিকার রসদ যোগানোর জন্য আমরা লাগামহীন ঘোড়ার মতো ছুটে চলছি।শরীর কিংবা মনের ক্লান্তির বিপরীতে তাদের শান্তি দেওয়ার যে প্রয়োজনীয়তা তা খেয়ে হারিয়ে ফেলছি।পারিপার্শ্বিকতার কারনে পরিবারকে সময় দিতে পারছিনা,আবার পরিবারকে সময় দিতে পারলেও নিজেকে সময় দিতে পারছিনা। দৈনন্দিন এই ক্লান্তিচক্রের কারনে আমাদের মন-মানসিকতা বিষাদতায় রুপ নেয়।মানসিক অবসাদ আমাদেরকে ঘিরে ফেলে চারপাশ থেকে।যার ফলে নিদ্রাহীন রাত,খাওয়ার প্রতি অনীহা,মেজাজ খিটখিটে, নেশায় আসক্ততা,কাজ করার অক্ষমতা, শারীরিক ভয়ানক অসুস্থতা ইত্যাদি বিষয়গুলো আমাদের সঙ্গী হয়ে যায়।
আসলে শারীরিক এবং মানসিক সুস্থতা একটি আরেকটির পরিপূরক হিসেবে কাজ করে।একটি ছাড়া অন্যটি কখনোই পরিপূর্ণ না।
এই আধুনিক যুগে এসেও শারীরিক স্বাস্থ্য নিয়ে আমরা যতটা সচেতন মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে তা না।মানসিক স্বাস্থ্য বলতে মানসিক অসুস্থতাকেই শুধু এখনো বিবেচনা করি।
আর এর জন্য দ্বায়ী হচ্ছে আমাদের অসচেতনতা, অজ্ঞতা,সচেতনামূলক প্রচার প্রসারের অভাব,প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এই বিষয়ে শিক্ষাদানের ঘাটতি,পারিবারিক বা সামাজিকভাবে সহায়তা না পাওয়া,নিজস্ব খামখেয়ালীপনা ইত্যাদি।
আমাদের এখন সময় এসেছে নিজেকে মেলে ধরবার।দেশের স্বার্থে নিজেকে নিয়োজিত করার।শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের সুস্থতা নিশ্চিত করার।
মানসিক স্বাস্থ্য সুস্থ রাখার জন্য নিয়মতান্ত্রিক ভাবে চলতে হবে।মনের স্থিরতা, নিয়ন্ত্রিত ইতিবাচক চিন্তাভাবনা,সঠিক সময়ে ঘুমানো এবং ঘুম থেকে উঠা,সুষম খাদ্যবাস মেনে চলা,প্রতিদিন কিছুটা সময় ব্যয়াম করা,ধুমপান কিংবা নেশা জাতীয় অন্যান্য উপাদান এড়িয়ে চলা,শত ব্যস্ততার মাঝেও নিজেকে এবং পরিবারকে সময় দেওয়া।আমাদের মনে রাখতে হবে,শরীর এবং মন দুটো সুস্থ থাকলেই আমরা আমাদের সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছোতে পারবো।
সর্বোপরি যে বিষয়টা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তা হলো মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
এখন সময় এসেছে মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষাকে মানবিক অধিকারে রুপ দেওয়া।
শাহিনা আক্তার
সেক্টর স্পেশালিষ্ট সাইকোসোশ্যাল কাউন্সেলর
ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম