ডেস্ক রিপোর্ট ::
উপকুলীয় জেলা সাতক্ষীরাতে অর্থকরি ফসল হিসেবে সুপারী উৎপাদন বাড়ছে। অন্যান্য ফসলের তুলনায় উৎপাদনে তেমন খরচ না থাকায় জেলায় বাগান বাড়ছে সুপারী। বছরের সাড়ে ৪শ’ টন সুপারী উৎপাদন হয় সাতক্ষীরাতে। যার বাজার মুল্য ২০ কোটি টাকার উপরে।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, পান উৎপাদনের পাশাাপাশি বছরে উল্লেখযোগ্য পরিমানে সুপারী উৎপাদন সাতক্ষীরা জেলায়। তবে ফসলটি ক্রমান্বয়ে উৎপাদন বাড়ছে বলে জানায় সূত্রটি। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেয়া তথ্যানুযায়ী চলতি মৌসুমে জেলায় সুপারী আবাদ হয়েছে ১ হাজার ৩৫০ বিঘা জমিতে। যা উৎপাদন হয়েছে ৪৫০টন। কেজি প্রতি শুকনা সুপারীর বাজার দর ৪৫০টাকা। এ হিসাবে ৪৫০টন সুপারীর বাজার মুল্য ২০ কোটি ২৫ লাখ টাকা। সুত্রটি আরো জানায়, গত তিন বছরের ব্যবধানে জেলায় সুপারী আবাদ বেড়েছে প্রায় ২০০ বিঘা পরিমানে। সুত্রটি জানান, ২০২০-২১ অর্থবছরে জেলায় মোট সুপারী আবাদ ছিলো ১ হাজার ১৫০ বিঘা পরিমান। যা বর্তমান ১ হাজার ৩৫০ বিঘা হয়েছে।
সাতক্ষীরার তালা উপজেলা কুমিরা গ্রামের কৃষক অরবিন্দু কুমার জানান, তার তিন বিঘা পরিমান জমিতে সুপারী বাগান রয়েছে। নারকেল বা অন্যান্য ফসলী গাছগাছালীর সাথেই মুলত সুপারী গাছ লাগানো রয়েছে। তিনি বলেন, এসব সুপারী গাছে প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ বছর যাবত ফল দিচ্ছে। তিনি বলেন, বছরে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা সুপারী বিক্রি হয়। এসব সুপারী স্থানীয় ব্যাপারীরা বাগান থেকে পাইকারী মুল্যে পেড়ে নিয়ে যায়। অরবিন্দু কুমার আরো বলেন, তার গ্রামে প্রচুর পরিমান পান বরজের পাশাপাশি সুপারী বাগান রয়েছে কৃষকদের।
সাতক্ষীরা জেলার পাইকারী সুপারী বিক্রয় মোকাম পাটকেলঘাটা বাজারে সপ্তাহে দুই দিন মঙ্গল ও শুক্রবার পাইকারী সুপারী হাট বসে। জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রচুর পরিমান সুপারী উঠে এই হাটে। স্থানীয় ছাড়াও পাশ্ববর্তী যশোর ও খুলনা থেকে পাইকারী ব্যাপারী সুপারী সংগ্রহ করেন পাটকেলঘাটা থেকে। এ বাজারের সুপারী বিক্রয় আড়তদার হযরত আলী জানান, প্রতি সপ্তাহে দুই দিন মঙ্গল ও শুক্রবার তার আড়তে ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকার সুপারী ক্রয়-বিক্রয় হয়। জেলার বিভিন্ন এলাকার পাইকারী ব্যবসায়ীরা পাটকেলঘাটা থেকে সুপারী ও পান কিনতে আসেন।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলা রাজার বাগান এলাকার সুপারী ব্যবসায়ী প্রণব চ্যাটার্জি বলেন, সুপারী কাঁচা বা শুকনা দুটোই ব্যাপক চাহিদা। প্রতিদিন প্রচুর পরিমান পান ও সুপারী বিক্রি করেন তিনি। তিনি বলেন, প্রতি মঙ্গল ও শুক্রবার জেলার পাটকেলঘাটা থেকে পান ও সুপারী পাইকারী ক্রয় করেন। কাঁচা সুপারী প্রতি হাজার ৪ থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা দরে কিনতে হয়। এছাড়া শুকনা সুপারী পাইকারী দর যাচ্ছে ৪৫০ টাকা কেজি দর।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম জানান, পান ও সুপারী আমাদের দেশের খুবই অর্থকরি ফসল। তবে পাশ্ববর্তী খুলনা বা বাগেরহাট জেলার তুলনায় এ জেলায় সুপারী বা পান উৎপাদন কম। তার পরও বছরে উল্লেখযোগ্য পরিমানে সুপারী উৎপাদন হচ্ছে সাতক্ষীরাতে। এখন অনেকে বাড়ির বসতভিটার সাথেই সুপারী বাগান করছেন আবার কোনো কোনো কৃষক সাথী ফসল হিসেবেও সুপারীর সাথে বিভিন্ন ফসল করছেন। তবে পান এবং সুপারী খুবই লাভজনক ফসল।