বি. এম. জুলফিকার রায়হান ::
তালা শহীদ আলী আহম্মদ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক মো. গওছল কবির’র বিরুদ্ধে ছাত্রীদের কুপ্রস্তাব প্রদান, শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দিয়ে যৌন হয়রানী ও অশ্লিল আচরনের অভিযোগ উঠেছে। বিদ্যালয়ের একাধিক অভিভাবক ন্যাক্কার জনক এই ঘটনার তদন্ত পূর্বক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহনের দাবীতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট অভিযোগ করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে, গঠিত তদন্ত কমিটি রোববার (১৫ অক্টোবর) ঘটনার বিষয়ে তদন্ত করেন। এদিকে, তদন্তচলাকালে ভুক্তভোগী শিশু শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের দফায় দফায় হুমকি প্রদান সহ নানানভাবে চাঁপ প্রয়োগ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগকারী অভিভাবক এবং ভুক্তভোগী শিশু শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক গওছল কবির ক্লাসে যেনতেন পাঠ দিয়ে তিনি প্রাইেেভট কোচিং পরিচালনা করেন। এখানে ছাত্রীদের পড়ার জন্য তিনি চাপ দিয়ে প্রাইভেট না পড়লে পরীক্ষায় নাম্বার কম দেবার হুমকি দেন। তাঁর কাছে প্রাইভেট না পড়ায় ইতোপূর্বে একাধিক মেধাবী ছাত্রীকে ইচ্ছাকৃতভাবে পরীক্ষায় কম নাম্বার দিয়েছেন। এছাড়া নতুন কারিকুলাম অনুযায়ী পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়ণ করার সময় “যারা তার কাছে প্রাইভেট পড়েনা, তারা মেধাবী শিক্ষার্থী হলেও ইচ্ছাকৃত ভাবে তাদেরকে ত্রিভূজ না দিয়ে বৃত্ত দিয়ে দেন” বলে জোরালো অভিযোগ রয়েছে। এরসাথে বিভিন্ন সময়ে তিনি একাধিক ছাত্রীকে নানান অযুহাতে শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দিয়ে যৌন হযরানী করা সহ ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে উত্ত্যাক্ত করা সহ নানাভাবে কুপ্রস্তাব দিয়েছেন। সম্প্রতি এক ছাত্রী কিডনি বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষক গওছল কবির অশ্লিল ভঙ্গিতে বলেন- কাছে আয়, কিডনি শরীরের কোথায় থাকে তা শিখিয়ে দিই। বিষয়টি ওই ছাত্রীর কাছে আপত্তিকর মনে হলে তিনি তা’ বিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষক এবং অভিভাবকদের নিকট জানান। প্রাইভেট পড়াকালে ওই শিক্ষকের আচরন ও অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে সম্প্রতি বিদ্যালয়ের এক ছাত্রীর অপমৃত্যু হয় বলে চারিদিকে গুঞ্জন ছাড়াচ্ছে। শিক্ষক গওছল কবির বিদ্যালয়ে এবং প্রাইভেট কোচিং-এ ধারাবাহিক ভাবে শিশু ছাত্রীদের যৌন হয়রানী এবং তাঁর নিকটে প্রাইভেট পড়তে বাধ্য করার ঘটনায় অভিভাবকরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। ক্ষুব্ধ অভিভাভকরা ঘটনার তদন্ত সহ শিক্ষক গওছল কবিরের শাস্তির দাবীতে তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে স্বাক্ষরকারী এবং স্বাক্ষর করার বাইরে অভিযোগ করা অভিভাবকদের মধ্যে কলেজ ও স্কুলের শিক্ষক, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, ব্যাংকার, ব্যবসায়ী এবং কৃষক সহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ রয়েছেন।
এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আফিয়া শারমীন ঘটনার তদন্তে উপজেলা মহিলা বিষয়ক অফিসার, সমাজ সেবা অফিসার এবং জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলীর সমন্বয়ে ৩সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করেন। গঠিত কমিটির উদ্যোগে রোববার (১৫ অক্টোবর) সকাল থেকে উপজেলা মহিলা বিষয়ক অফিসারের কার্যলয়ে তদন্ত শুনানী করেন। তদন্ত শেষে অভিভাবকরা ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে নানাভাবে হুমকি প্রদানের অভিযোগ করেন।
এব্যপারে শিক্ষক গওছল কবির তাঁর বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ মিথ্যা ও হয়রানীকর বলে দাবী করে বলেন, তালা শহীদ আলী আহম্মদ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে সীমাহীন দূর্নীতি, অনিয়ম, স্বজনপ্রিতি চলছে। শিক্ষকদের কোচিং বানিজ্য, বিদ্যালয়ের উন্নয়নে সরকারের বরাদ্দ প্রদান লুটপাট সহ নানান অনিয়ম এখানে স্বাভাবিক নিয়ম! তাদের অবৈধ কাজের প্রতিবাদ করা সহ দূর্নীতিতে সমর্থন না দেয়ায় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অলোক তরফদার সহ কয়েকজন শিক্ষক আমার বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে নানান ষড়যন্ত্র ও বদলি করাতে অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মূলতঃ তারায় ছাত্রীদের দিয়ে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা এবং হয়রানীকর অভিযোগ করিয়েছে। তিনি বলেন, আমি ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম এবং ছাত্রলীগের নেতা ছিলাম। প্রশাসনের বড় বড় পর্যায়ে আমার নিজস্ব লোক রয়েছে, আমাকে এঁরা কিছুই করতে পারবেনা। আমিও এমন শতাধিক ছাত্রী দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করাতে পারি। অথচ, এই শিক্ষক প্রতিনিয়ত আওয়ামীলীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অশ্লিল গালিগালাজ ও হুমকি প্রদান করেন বলে বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক জানিয়েছেন।
এবিষয়ে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অলোক তরফদার তাঁর বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ওই অভিযোগের বিষয়ে অফিসিয়ালী বা অভিভাবকদের মাধ্যমে আমি কিছুই জানিনা। আজ সকালে শিক্ষক গওছল কবির’র ছুটির আবেদন এবং পরবর্তীতে সাংবাদিকদের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পারি। তিনি বলেন, অভিযোগকারীরা উচ্চ শিক্ষিত এবং সচেতন অভিভাবক। তাঁদের অপব্যবহার করে কোনও শিক্ষকের বিরুদ্ধে স্পর্শকাতর অভিযোগ করানোর কোনও সুযোগ নেই।
এবিষয়ে তদন্ত কমিটির আহবায়ক উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নাজমুন নাহার জানান, দুই পক্ষের উপস্থিতিতে তদন্ত হয়েছে। প্রয়োজনে এবিষয়ে আরও তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে সঠিক রিপোর্ট প্রদান করা হবে।
##