আর.কে.বাপ্পা, দেবহাটা ::
সনাতম ধর্মের যেকোনো পূজার ক্ষেত্রে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে সংস্কৃত মন্ত্রগুলো। দুর্গাপূজার মন্ত্রগুলো সাধারণত শ্রী শ্রী চণ্ডি থেকে পাঠ করা হয়। ঢাক-ঢোল, খোল করতাল, সুগন্ধি আগরবাতি আর এগুলোর সাথে সংস্কৃতমন্ত্র সুন্দর এক পরিবেশের জন্ম দেয়। তাই শারদীয় দুর্গোৎসবের ৬ষ্ট দিনে মুখ বরণ দিয়েই শুরু হয় ঘট বসা। সপ্তম ও অষ্টম দিনেই শুরু হয় সন্ধি পূজা আর চন্দ্রের নবমী তিথিতে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা পালন করেন মহা নবমী কল্পারম্ভ ও বিহিত পূজা। নবমীর দিন মন ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে সকলের। এত আনন্দ, এত দিনের তোরজোড় সবই তো শেষের পথে। যেহেতু পুজোর শেষ দিন তাই যতটা আনন্দে থাকা যায় ততই ভাল। এই দিনে পুজো করা হয় দেবীর সিদ্ধিদাত্রী রূপের।
তথ্য মতে, রামায়ণ যুগের অবতার শ্রীরামচন্দ্র লঙ্কা অধিপতি রাবণ বধের পর নবমী তিথীতে দুর্গার পূজা করেছিলেন ১০৮টি নীলপদ্মে। তাই দুর্গোৎসবের মহানবমীতে ষোড়শ উপাচারের সঙ্গে ১০৮টি নীলপদ্মে পূজিত হন দেবী দুর্গা। আরেকটি সূত্র মতে, নীলকণ্ঠ, নীল অপরাজিতা ফুল ও যজ্ঞের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয় নবমী বিহিত পূজা। নবমী পূজায় যজ্ঞের মাধ্যমে দেবী দুর্গার কাছে আহুতি দেওয়া হয়।
জানা যায়, মহা অষ্টমীতে কুমারী পূজার পর নবমী সন্ধিক্ষণে অনুষ্ঠিত হয়েছে সন্ধিপূজা। মহিষাসুর নিধনের সময় দেবী দুর্গা প্রচন্ড ক্রোধে কৃষ্ণবর্ণ রূপ ধারণ করেছিলেন। তাই পূজার এই আচারের সময় দেবীকে চামুন্ডা রূপে পূজা করা হয়েছে, অর্থাৎ যিনি চন্ড ও মুণ্ডের বিনাশিনী। তবে বিজয়া দশমীর দিনেও বেশকিছু আনুষ্ঠানিকতা থাকে। মঙ্গলবার বিজয়া দশমীতে দুর্গাদেবীর দশমী বিহিত পূজা সমাপন ও দর্পণ বিসর্জন অনুষ্ঠিত হবে। এদিনই প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে শেষ হবে শারদীয় দুর্গোৎসব। এদিকে সোমবার নবমির দিনে দেবহাটা উপজেলার বিভিন্ন মন্দির পরিদর্শন করেন সাতক্ষীরা ০৩ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডাঃ আ ফ ম রুহুল হক। এসময় তিনি মন্দির পরিদর্শনের সাথে সাথে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন দেবহাটা উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনি, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান সবুজ, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান জি.এম স্পর্শ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফারুক হোসেন রতন, সখিপুর ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম, নওয়াপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান সাহেব আলী, সাংগঠনিক সম্পাদক আরশাদ আলী, সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুল ইসলাম মনি, উপজেলা আওয়ামীলীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক রাশিদুল ইসলাম, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান মিন্নুর, সাধারন সম্পাদক বিজয় ঘোষসহ বহু নেতাকর্মী। এসময় রুহুল হক সকলকে সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে শারদীয়া দুর্গাপূজা উৎসব পালনে আহবান জানান। তিনি বলেন, আমাদের দেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এবার বিজয়া দশমীতে সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার বাংলাদেশ-ভারত আন্তঃসীমান্ত নদী ইছামতিতে ভাসবে না মিলন মেলার তরী। হবেনা কোন মিলনমেলা। বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনকে সামনে রেখে বিজিবি-বিএসএফ সরকারি কর্মকর্তাদের বৈঠকে উভয় দেশের নিরাপত্তার বিষয়টিকে সামনে রেখে এবং অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা এড়াতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে, উভয় দেশের মানুষ নিজ নিজ সীমারেখার মধ্যে অবস্থান করে ইচ্ছামতি নদীতে প্রতিমা বিসর্জন দিতে পারবে বলে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।