ডেস্ক রিপোর্ট ::
সাতক্ষীরা জেলার ৯টি সড়কের দুই পাশের বড় বড় ২০৭৮টি গাছ শুকিয়ে মরে গেছে। পথচারীরা সড়কের এসব মরা গাছের জন্য আতঙ্কের মধ্য দিয়ে চলাচল করছেন। কর্তৃপক্ষ গাছগুলো অপসারণ না করায় প্রায়ই ঘটছে ছোট-খাটো দুর্ঘটনা। বর্তমানে মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে জেলার ৯টি সড়ক।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সাতক্ষীরা-আশাশুনি, সাতক্ষীরা-কালীগঞ্জ, শ্যামনগর-নওয়াবেঁকি, নজিমগঞ্জ-নূরনগরসহ বিভিন্ন সড়কের দুই ধারে সারি সারি মরা গাছের কঙ্কালসার দাঁড়িয়ে আছে। যা ক্রমেই ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছে প্রকৃতির নিয়মে। এসব মরা গাছের ডাল আকস্মিকভাবেই ভেঙে পড়ে সড়কের ওপর। ভুক্তভোগী বাসিন্দাদের অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট বিভাগসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের একাধিকবার জানানোর পরেও শুকনা গাছগুলো কেটে নেওয়া হচ্ছে না। ফলে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন সেখানকার জনপদের বাসিন্দারা।
সাতক্ষীরা-আশাশুনি সড়কের ভ্যানচালক আব্দুস সাত্তার জানান, জীবন ও জীবিকার তাগিদে দিনে অনেকবার এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করতে হয়, তবে শুকনো গাছের ডাল ভেঙ্গে পড়ার ভয়ে থাকতে হয় সব সময়। প্রতিদিন ডাল ভেঙে কেউ না কেউ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। বিকল্প কোন রাস্তা না থাকায় বাধ্য হয়ে জীবনে ঝুঁকি নিয়ে পথযাত্রীসহ যানবাহন এই রাস্তা দিয়ে যেতে হয়।
আশাশুনি সড়কের ধুলিহর এলাকার বাসিন্দা আনোয়ারা বেগম বলেন, তার বসত ভিটার উপর দিয়ে রাস্তার দু’পাশের গাছের শুকনো ডাল রয়েছে। ঝড় বৃষ্টির সময় বড় ধরণের দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে তারপরেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করতে হচ্ছে। যদি শুকনো গাছ কিংবা ডাল ভেঙে পড়ে সেক্ষেত্রে তার গোয়ালে থাকা প্রায় ৩ থেকে ৪ লাখ টাকার গবাদি পশু ক্ষতিগ্রস্থ হবে একই সাথে বাড়িতে থাকা ছোট বাচ্চারাসহ অন্যান্যরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
তিনি আরও বলেন, শুকনো গাছের ডাল কেটে ফেলার জন্য স্থানীয় চেয়ারম্যান, নায়েবসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অনেকবার হাটাহাটি করেও কোন সমাধান মেলেনি। তাই বাধ্য হয়ে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করতে হচ্ছে।
সাতক্ষীরা-কালীগঞ্জ সড়কের একাধিক বাইক চালক জানান, মোটরসাইকেল একটি নির্দিষ্ট গতিতে রাস্তাতে চলে, যদি হঠাৎ করে উপর থেকে শুকনো বড় ডাল এসে মোটরসাইকেলের উপর পড়ে সেক্ষেত্রে নির্ঘাত মৃত্যু কিংবা অনেক বড় ধরনের কোন দুর্ঘটনা ঘটে যাবে। এমন ভয় মনের মধ্য নিয়ে এই সড়কে চলাচল করতে হয়। তবে কর্তৃপক্ষের অনেক আগেই উচিত ছিল শুকনো গাছগুলো নিধন করে নতুন গাছ রোপন করা।
সাতক্ষীরা জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ২০ বছর আগে জেলা পরিষদ ও স্থানীয় জনগণ সড়কের দুই পাশে রেইন্ট্রি গাছ রোপন করেন। দুই বছর আগে জেলার গুরুত্বপূর্ণ সড়ক গুলোর দুই ধারে থাকা রেইন্ট্রি গাছগুলো শুকিয়ে যায়। শুকিয়া যাওয়া গাছগুলোর মধ্যে, সাতক্ষীরা-চাঁদপুর সড়কের দুই পাশে ৩০৭টি, কদমতলা-বৈকারি সড়কের দুই পাশে ২২৭টি, কুল্যা-রমনগর সড়কের দুই পাশে ২০০টি, পাটকেলঘাটা-দোলুয়া সড়কের দুই পাশে ১৪৭টি, ঝাউডাঙ্গা-বালিয়াডাঙ্গা সড়কের দুই পাশে ২৭টি, নজিমগঞ্জ-নূরনগর সড়কের দুই পাশে ৪৫০টি, শ্যামনগর-কাশিমাড়ি সড়কের দুই পাশে ২৫০, শ্যামনগর-নওয়াবেঁকি সড়কের দুই পাশে ২০০, সাতক্ষীরা-কালীগঞ্জ সড়কের দুই পাশের ২৭০টি গাছ মরে গেছে।
সাতক্ষীরা সামাজিক বন বিভাগের সহকারি বন সংরক্ষক অমিতা মন্ডল বলেন, বন বিভাগের আওতাধিন শুকনা গাছ গুলো ইতিমধ্যে টেন্ডার হয়েছে। অতি দ্রত সেগুলো কেটে নেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম বলেন, জেলার বেশ কিছু সড়কের দুইপাশে থাকা রেইন্ট্রি গাছ শুকিয়ে চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ইতোমধ্যে বন বিভাগের মাধ্যমে জরিপ করে মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। দরপত্রের মাধ্যমে শুকনো গাছগুলো অতিদ্রæত অপসারণ করা হবে।