॥ শাহিদুর রহমান ॥
সাতক্ষীরা জেলার ৯টি প্রধান সড়কের পাশে রয়েছে সারি সারি রেইনট্রি গাছ। গাছগুলো শুকিয়ে গেছে অনেক আগে। শুকনো গাছের ডাল ও কাঠ ভেঙে প্রতিদিনই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। সামান্য বাতাস কিংবা ঝড়-বৃষ্টি হলেই আহত হচ্ছেন পথচারী ও স্থানীয় মানুষজন। বাধ্য হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলছে পথচারী ও যানবাহন। শুকনো গাছগুলো নিয়ে কর্তৃপক্ষের যথাযথ হস্তক্ষেপ না থাকায় এখন তা সৃষ্টি হয়েছে মরণ ফাঁদে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট বিভাগ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বারবার জানানোর পরেও শুকনা গাছগুলো কেটে নেওয়া হচ্ছে না। এতে করে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করতে হচ্ছে তাদের।
সাতক্ষীরা জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ২০ বছর আগে জেলা পরিষদ ও স্থানীয় জনগণ সড়কের দুই পাশে রেইন্ট্রি গাছ রোপণ করেন। দুই বছর আগে জেলার গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর দুই ধারে থাকা রেইন্ট্রি গাছগুলো শুকিয়ে যায়।
শুকিয়ে যাওয়া গাছগুলোর মধ্যে সাতক্ষীরা-চাঁদপুর সড়কের দুই পাশে ৩০৭, কদমতলা-বৈকারি সড়কের দুই পাশে ২২৭, কুল্যা-রমনগর সড়কের দুই পাশে ২০০, পাটকেলঘাটা-দোলুয়া সড়কের দুই পাশে ১৪৭, ঝাউডাঙ্গা-বালিয়াডাঙ্গা সড়কের দুই পাশে ২৭, নজিমগঞ্জ-নূরনগর সড়কের দুই পাশে ৪৫০, শ্যামনগর-কাশিমাড়ি সড়কের দুই পাশে ২৫০, শ্যামনগর-নওয়াবেঁকি সড়কের দুই পাশে ২০০, সাতক্ষীরা-কালীগঞ্জ সড়কের দুই পাশের ২৭০টি গাছ মরে গেছে।
সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী আল-আমিন হোসেন বলেন, কলেজে যাওয়ার জন্য প্রতিদিন সাতক্ষীরা-আশাশুনি সড়কে যাতায়াত করতে হয়। তবে সড়কের দুই পাশের প্রায় পাঁচ শতাধিক শুকনো গাছের ডাল ভেঙে প্রতিদিন ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ভ্যানচালক, অন্যান্য যানবাহন ও যাত্রীরা। তাই কলেজে যাওয়া-আসার পথে সব সময় মনে ভয় কাজ করে, ডাল ভেঙে বড় কোনো দুর্ঘটনার কবলে পড়ি কিনা।
তিনি আরও বলেন, এক প্রকার জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমাদের যাতায়াত করতে হয় এই রাস্তা দিয়ে। কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানাচ্ছি দ্রুত শুকনো গাছগুলো অপসারণ করা হোক।
আশাশুনি সড়কের ভ্যানচালক আব্দুস সাত্তার বলেন, জীবন ও জীবিকার তাগিদে দিনে কয়েকবার এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। সব সময় শুকনো গাছের ডাল ভেঙে পড়ার ভয়ে থাকি।
সাতক্ষীরার আশাশুনি সড়কের একাধিক মোটরসাইকেল চালক জানান, রাস্তার যে অবস্থা মনে আতঙ্ক কাজ করে। যেকোনো সময় উপর থেকে শুকনো ডাল পড়ে মৃত্যু বা বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। কর্তৃপক্ষের অনেক আগেই শুকনো গাছগুলো নিধন করে নতুন গাছ রোপণ করা উচিত ছিল।
ধুলিহর সড়কের পাশের স্থানীয় বাসিন্দা আনোয়ারা বেগম জানান, তার বসতবাড়ির উপর দিয়ে রাস্তার দুই পাশে গাছের শুকনো ডাল রয়েছে। ঝড়-বৃষ্টির সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। তারপরও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করতে হচ্ছে। কখনো শুকনো গাছ বা ডাল ভেঙে পড়লে তার গোয়ালে থাকা প্রায় তিন থেকে চার লাখ টাকার গবাদিপশু ক্ষতিগ্রস্ত হবে, বাড়িতে থাকা ছোট শিশুরাও ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, শুকনো গাছ ও ডাল কেটে ফেলার জন্য স্থানীয় চেয়ারম্যান, নায়েবসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অনেকবার বলাবলি করেও কোনো সমাধান মেলেনি। তাই বাধ্য হয়ে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করতে হচ্ছে।
স্থানীয় আরেক বাসিন্দা কুদ্দুস আলী বলেন, শুকনো গাছের ডাল ঘরের উপর পড়ে ঘরের আসবাবপত্র ও অন্যান্য জিনিসের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। অনেক দিন ধরে গাছগুলো শুকিয়ে থাকলেও কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। এতে ভোগান্তিতে বাড়ছে সাধারণ মানুষ ও পথযাত্রীদের। দ্রুত গাছগুলো কেটে নেওয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি।
সাতক্ষীরা সামাজিক বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক অমিতা মন্ডল বলেন, বন বিভাগের আওতাধীন শুকনো গাছগুলো ইতোমধ্যে টেন্ডার হয়েছে। দ্রুতই সেগুলো কেটে নেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম বলেন, জেলার বেশকিছু সড়কের দুই পাশে থাকা রেইন্ট্রি গাছ শুকিয়ে চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে বন বিভাগের মাধ্যমে জরিপ করে মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। দরপত্রের মাধ্যমে শুকনো গাছগুলো দ্রুত নিধন করা হবে।
##