ডেস্ক রিপোর্ট ::
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাতক্ষীরার চারটি আসনে ৩৭জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। প্রার্থীদের মধ্যে দলীয় প্রতীক নৌকা না পেয়ে স্বতন্ত্র পদে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন একজন সংসদ সদস্যসহ আওয়ামী লীগের অন্তত ৬জন।
বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) সকাল থেকে উৎসবমুখর পরিবেশে প্রার্থীরা সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক ও জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা হুমায়ুন কবিরের কাছে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন।
জেলা প্রশাসক ও জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাতক্ষীরার চারটি আসনে ৩৭জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। এর মধ্যে সাতক্ষীরা-১ (তালা-কলারোয়া) আসনে ১২জন, সাতক্ষীরা-২ (সদর) আসনে ১১জন, সাতক্ষীরা-৩ (দেবহাটা-আশাশুনি-কালিগঞ্জ আংশিক) আসনে ৬জন এবং সাতক্ষীরা-৪ (শ্যামনগর-কালিগঞ্জ আংশিক) আসনে ৮জন জন প্রার্থী হয়েছেন। সূত্রমতে, জেলার চারটি আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছেন অন্তত ১০জন। এদের মধ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক পেয়েছেন চারজন। দলীয় প্রতীক চেয়ে না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন ৬জন। সাতক্ষীরা-১ আসনে দলীয় প্রতীক না পেয়ে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন ৩জন। সাতক্ষীরা-২ আসনে দলীয় প্রতীক না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান এমপিসহ দুজন। সাতক্ষীরা-৩ আসনে আওয়ামী লীগের কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হননি। যদিও এ আসনে আওয়ামী লীগের কয়েকজন মনোনয়ন চেয়েছিলেন। সাতক্ষীরা-৪ আসনে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন একজন।
সূত্রে জানা গেছে, সাতক্ষীরা-১ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ফিরোজ আহমেদ স্বপন, স্বতন্ত্র পদে প্রার্থী হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার শেখ মুজিবুর রহমান, তালা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ নুরুল ইসলাম এবং জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এসএম মুজিবুর রহমান মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। তবে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এসএম মুজিবুর রহমান দলীয় মনোনয়ন ফরম ক্রয় করেননি।
সাতক্ষীরা-২ (সদর) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আসাদুজ্জামান বাবু। দলীয় মনোনয়ন চেয়ে না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মীর মোস্তাক আহমেদ রবি এবং স্বতন্ত্র এনছান বাহার বুলবুল।
সাতক্ষীরা-৩ দেবহাটা-আশাশুনি-কালিগঞ্জ আংশিক) আসনে দলীয় কোন স্বতন্ত্র প্রার্থী ছাড়াই মনোনয়ন দাখিল করেছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আ ফ ম রুহুল হক।
সাতক্ষীরা-৪ (শ্যামনগর-কালিগঞ্জ আংশিক) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এসএম আতাউল হক মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেত্রী মাসুদা খানম।
এদিকে, বিএনপি ও তাদের মিত্ররা ভোটে না আসার সিদ্ধান্তে অনড়। এ কারণে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতা এড়াতে এবং ভোটের আমেজ ধরে রাখতে নির্বাচনে কৌশলী অবস্থানে আওয়ামী লীগ। ইতোমধ্যে দলটি প্রতি আসনে ডামি প্রার্থী রাখার বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাবের কথা জানিয়েছে। দলের হাইকমান্ডের এমন অবস্থানের কারণে এবার ভোটের মাঠ ছাড়তে নারাজ মনোনয়ন বঞ্চিতরা। ইতোমধ্যে দলের মনোনয়নবঞ্চিত একজন বর্তমান এমপি স্বতন্ত্র লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়েছেন। এছাড়া জেলার চারটি আসনের একটি বাদে তিনটিতে রয়েছেন কমপক্ষে ৬জন স্বতন্ত্র (আওয়ামী লীগের) প্রার্থী।
সূত্রমতে, প্রধান প্রতিপক্ষ মাঠে না থাকায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও এবার নৌকার মূল প্রতিদ্বন্দ্বী ঘরের প্রার্থীরাই। এ নিয়ে টেনশনে আছেন দলের অনেক প্রার্থী।
এছাড়া আওয়ামী লীগ যে ২৯৮ জন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে, তাদের সবাই যে শেষ পর্যন্ত নৌকা নিয়ে নির্বাচন করতে পারবেন এমন নয়। কারণ, জোট শরিক ও অন্য দলের সঙ্গে আসন সমঝোতা ও ছাড় দেওয়ার বিষয়টি এখনো ফয়সালা হয়নি। তবে আওয়ামী লীগ আগেই ঘোষণা দিয়ে রেখেছে, তারা ১৪ দলীয় জোটগতভাবেই নির্বাচন করবে। এর সঙ্গে রয়েছে তাদের রাজনৈতিক মিত্র জাতীয় পার্টি। ভোটে আনার সমীকরণে নতুন ও ছোট কয়েকটি দলকেও আওয়ামী লীগ আসন ছাড়তে পারে বলে আলোচনা রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে শিগগিরই আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আসন ভাগাভাগির বিষয়টি ফয়সালা করবেন। শরিক ও মিত্রদের সঙ্গে আসন ছাড়ের এই অঙ্কেও ছাড় দিতে হবে অনেককেই। সব মিলিয়ে দলীয় মনোনয়ন পেয়েও টেনশন কাটছে না আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের। তারা যত সহজে নির্বাচনে পাশের চিন্তা করেছিলেন বাস্তবে ততটা সহজ হবে না বলে অনেকেই মনে করছেন।