ডেস্ক রিপোর্ট ::
শ্যামনগর উপজেলা ও কালিগঞ্জ (আংশিক) নিয়ে গঠিত সাতক্ষীরা-৪ আসনে সাত প্রার্থীর মধ্যে ভোটের মাঠে পাঁচজনের খোঁজ মিলছে না। জাতীয় পার্টি (এ) ও তৃণমুল বিএনপি মনোনীত প্রার্থীসহ অন্যদের অনুপস্থিতিতে প্রচার-প্রচারণায় রয়েছে কেবলই আওয়ামী লীগ ও বিএনএম। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের অধিকাংশের নির্লিপ্ততার পাশাপাশি কয়েকটি বড় দলের বর্জন ঘটনার প্রভাব পড়ছে স্থানীয় নির্বাচনী পরিবেশে। ফলে সপ্তাহকালের বেশি বাকি থাকা সত্ত্বেও নির্বাচনী এলাকার সাধারণ ভোটারদের মধ্যে কোন উচ্ছ্বাস ও উম্মাদনা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। তবে মাঠে সক্রিয় আওয়ামী লীগ ও বিএনএম দলীয় দুই প্রার্থীর মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বীতার সম্ভাবনা দেখছেন স্থানীয় ভোটাররা।
সাতক্ষীরা-৪ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য এসএম জগলুল হায়দার এবার দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় ভোটের মাঠ থেকে দূরে সরে গেছেন। তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন শ্যামনগরের দুইবারের উপজেলা চেয়ারম্যান, তরুণ আওয়ামী লীগ নেতা এসএম আতাউল হক দোলন। দোলন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তার পিতা একে ফজলুল হক সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি। তিনি ১৯৭০ এর নির্বাচিত প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য। এছাড়া স্বাধীনতা পরবর্তীকালে তিনি এই আসন থেকে দুইবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। শ্যামনগরের ঐতিহ্যবাহি এই পরিবারটির আত্মীয়-স্বজন ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়। ফলে দলের ভোটের বাইরেও পারিবারিক ভোট ব্যাংক রয়েছে দোলনের পক্ষে। তাছাড়া দোলনের রয়েছে ক্লিন ইমেজ।
অপরদিকে তার শক্ত প্রতিপক্ষ ১০ বছর পূর্বে এই আসনের সংসদ সদস্য এইচএম গোলাম রেজা। সংসদ সদস্য থাকার সময় এলাকায় তার উল্লেখযোগ্য কোন বদনাম ছিল না। ছিল না নিয়োগ বানিজ্য, দলবাজী, টেন্ডারবাজী, চাঁদাবজি, কমিশন বানিজ্যের অভিযোগ। কোন মানুষ অযথা পুলিশী হয়রানীসহ অন্য কোনভাবে হয়রানীর শিকার হননি। এইচএম গোলাম রেজা সংসদ সদস্য থাকার সময় জাতীয় সংসদে জাতীয় পার্টির হুইপ ছিলেন। ছিলেন জাতীয় পাটির কেন্দ্রীয় নেতা। পরবর্তীতে বিকল্প ধারার প্রার্থী হিসেবে ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। এবার এসেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন-বিএনএম এর নোঙ্গর প্রতীকের প্রার্থী হিসেবে। এলাকায় দল ও দলীয় নেতা কর্মী না থাকায় তাদের কারনে তার ভাবমুর্তি সংকটেরও কোন কারন ঘটেনি।
ব্যক্তিগতভাবে জনপ্রিয় এই দুই প্রার্থীর একজনের পক্ষে আছে দলের রিজার্ভ ভোট এবং পারিবারিক আত্মীয় স্বজন। অপর প্রার্থীর পক্ষে আছেন দলীয় রিভার্জ ভোটের গোপন অংশ। যারা দোলনকে ফেল করাতে চান। এছাড়া আম জনতার কিছু ভোটও রয়েছে তার পক্ষে। সবমিলিয়ে ভোটার উপস্থিতির উপর নির্ভর করছে এই আসনে জয় পরাজয়। অনেকের মতে ভোটার উপস্থিতি ৫০ শতাংশের মধ্যে থাকলে নৌকার প্রার্থী এমএম আতাউল হক দোলনের জয় অনেকটা নিশ্চিত। তবে উপস্থিতি বাড়লে এইএম গোলাম রেজার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠতে পারে।
সরেজমিনে সংসদীয় আসন-১০৮ তথা সাতক্ষীরা-৪(শ্যামনগর ও কালিগঞ্জ (আংশিক) ঘুরে ও স্থানীয় ভোটার ও সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলে এমন চিত্রের দেখা মিলেছে। ভোটারদের অভিমত সকল দল অংশগ্রহণ না করায় এবারের ভোটকে ঘিরে মানুষের মধ্যে আগ্রহ কম। তাছাড়া অংশগ্রহণকারী সব প্রার্থী মাঠে না থাকায় নির্বাচনী উত্তাপ সেভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে না। যদিও এসব ভোটারের দাবি মহাজোট থেকে নির্বাচিত জাতীয় পার্টি(এ) এর সাবেক এমপি এইচএম গোলাম রেজা এবং আওয়ামী লীগের প্রার্থী এসএম আতাউল হক দোলনের মধ্যে তুমুল লড়াইয়ের সম্ভাবনা দেখছেন তারা। ভোটার উপস্থিতি বেশি হলে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে বিএনএম প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীতাকারী গোলাম রেজার ভাগ্যে সিঁকে ছিড়তে পারে। বিপরীতে কেন্দ্রে যদি ভোটারদের উপস্থিতি তুলনামুলকভাবে কম হয় সেক্ষেত্রে পিতার পর আতাউল হক দোলন প্রথমবারের মতো জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হতে পারেন।
মুন্সিগঞ্জের উত্তর কদমতলা গ্রামের আব্দুর রশিদ বলেন, সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত না হওয়ায় ভোটকে ঘিরে এলাকাবাসীর মধ্যে কোন আগ্রহ নেই। মাত্র দু’জন প্রার্থী নির্বাচনী তৎপরতায় চালাচ্ছেন জানিয়ে তিনি আরও বলেন, সংসদীয় আসনটিতে আরও পাঁচ প্রার্থী থাকলেও জাতীয় পার্টি কিংবা তৃণমুল বিএনপিসহ কারও পোষ্টার কিংবা প্রচারনা গত ১০ দিনেও চোখে পড়েনি।
পোড়াকাটলা গ্রামের পরীক্ষিত মন্ডল বলেন, অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে কেন্দ্রগুলোতে ভোটার উপস্থিতি পর্যাপ্ত নাও হতে পারে। তবে মুল প্রতিদ্বন্দ্বীতায় থাকা দুই প্রার্থী শেষ মুহূর্তে ভোটারদের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি করতে পারলে পরিস্থিতির উন্নতির সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, ভোটার উপস্থিতি যতবেশি হবে নোঙর প্রতীকের প্রার্থী গোলাম রেজার জন্য তা মঙ্গলজনক হবে। তবে অপেক্ষাকৃত কম ভোট পড়লে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নৌকা প্রতীকের আতাউল হকের বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা বহুগুনে বেশি।
জানা যায়, শামনগর ও কালিগঞ্জ(আংশিক) আসনে মোট মোট ০৮জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিলেও আওয়ামী লীগের জেলা কমিটির সদস্য মাসুদা খানম মেধা শেষ মুহূর্তে তা প্রত্যাহার করেন। শেষপর্যন্ত ০৭জন প্রার্থী ভোটের লড়াইয়ে টিকে থাকলেও জাতীয় পার্টির(এ) মাহবুবর রহমান, তৃণমুল বিএনপির আসলাম আল মেহেদী, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মো: সফিকুল ইসলাম, এনপিপির শেখ একরামুল ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মিজানুর রহমানের দেখা নেই নির্বাচনী মাঠে। প্রচার প্রচারণা দুরের কথা পোস্টারও দেখা যাচ্ছে না তাদের।
নির্বাচনে অবতীর্ন হয়ে প্রচারণায় না থাকার বিষয়ে জাতীয় পার্টি(এ) প্রার্থী মাহবুবর রহমান বলেন, কিছু স্থানে সমঝোতা হওয়ায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। পরিবেশ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন দাবি করে তিনি আরও বলেন, উঠান বৈঠক করে ভোটারদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করছেন তিনি।
তৃণমূল বিএনপির আসলাম আল মেহেদী বলেন, সভা-সমাবেশ না হলেও বিভিন্ন এলাকায় যেয়ে ভোটারদের কেন্দ্রে যাওয়ার আগ্রহ সৃষ্টিসহ সমর্থন লাভের চেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি।
এনপিপির প্রার্থী শেখ একরামুল বলেন, দু’এক দিনের মধ্যে পোস্টারসহ প্রচারযন্ত্রে প্রচারণার কাজ শুরু হবে।
উল্লেখ্য শামনগর ও কালিগঞ্জ (আংশিক) আসনে মোট ভোটার সংখ্যা চার লাখ ৪২ হাজার ১৯৩জন। যার মধ্যে শ্যামনগর উপজেলার ১২ ইউনিয়নে ভোটার দুই লাখ ৮৪ হাজার ৩৫৮ এবং কালিগঞ্জের আট ইউনিয়নে ভোটার এক লাখ ৫৭ হাজার ৮৩৫ জন। সংসদীয় আসেনর ১৪২টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে বলে নির্বাচন অফিস সূত্র জানায়।
##