॥ এম কামরুজ্জামান ॥
সাতক্ষীরা-১ (তালা-কলারোয়া) আসনে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ বিরোধের কারনে ভাগ্য খুলতে পারে জাতীয় পার্টির প্রার্থী, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ দিদার বখতের। নৌকার প্রর্থীসহ এই আসনে আওয়ামী লীগের চার জন প্রার্থী হয়েছেন। নির্বাচন যতোই ঘনিয়ে আসছে ততোই আওয়ামী লীগের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে রুপ নিচ্ছে। আওয়ামী লীগ প্রার্থীরদের মধ্যে ভাগাভাগি হচ্ছে নৌকার ভোট । আর সুযোগটা কাজে লাগাচ্ছে জাতীয় পার্টি, দিন দিন বাড়ছে লাঙ্গলের ভোট। ফলে শেষ হাঁসিটা কে হাঁসবে, লাঙ্গল না নৌকার প্রার্থী ভোটারদের মধ্যে তানিয়ে চলছে এখন চুলচেরা বিশ্লেষন।
তালা ও কলারোয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত সাতক্ষীরা-১ নির্বাচনী আসন। আসনটিতে মোট ভোটার ৪ লাখ ৭২ হাজার ৪৩ জন। আর দুইটি উপজেলা মিলে ভোট কেন্দ্র ১৬৮টি।
এই আসনে ১৪ ও ১৮ সালের নির্বাচনে মহাজোটের শরীক বাংলাদেশের ওয়ার্কস পার্টির প্রার্থী এড. মুস্তফা লুৎফুল্লাহ’র হাতে নৌকা প্রতীক তুলে দেয়া হয়। তিনি পরপর দুই বার নৌকা প্রতীক নিয়ে এমপি নির্বাচিত হন। এতে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা ও কর্মীদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
এবার আওয়ামী লীগের দলীয় নেতা-কর্মীদের শান্ত করতে এই আসনে নৌকার প্রার্থীকে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। কলারোয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফিরোজ আহমেদ স্বপন হয়েছেন নৌকার মাঝি। এতেও খুশি নয় দলের অনেকেই। চরম ক্ষুব্ধ দলের একাংশের নেতা-কর্মীরা। এই আসনের সাবেক এমপি, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার শেখ মুজিবুর রহমান, তালা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ নূরুল ইসলাম ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এস এম মুজিবর রহমান (সরদার মুজিব) প্রার্থী হয়েছেন। যদিও প্রার্থীতা প্রত্যাহারের দু’দিন পর ইঞ্জিনিয়ার শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা দিয়েছেন তিনি অসুস্থ্যতার কারনে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। বাকী দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী মাঠে আছেন বেশ কোমর বেঁধে।
এদিকে, এড. মুস্তফা লুৎফুল্লাহ এই আসন থেকে এবার ওয়ার্কস পাটির দলীয় প্রার্থী হওয়ার পর তিনিও ঘোষনা দিয়েছেন নির্বাচন মাঠে থাকবেন না। দলীয় সিদ্ধান্ত ও কৌশলগত কারনে তিনি ভোটের মাঠ ছেড়েছেন আগেই। এখনও প্রকাশ্যে দেননি কাউকে সমর্থন।
আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী মাঠে থাকায় দলের মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা পড়েছে বিপাকে। তারা কোন প্রার্থীকে ভোট দেবে বা বেঁছে নেবে তানিয়ে ভূগছে সিদ্ধান্তহীনতায়।
তালার ধানদিয়ার ভোটার বিশ^নাথ মন্ডল বলেন, জাতীয় পার্টির একটি ভোটব্যাংক রয়েছে আসনটিতে। এলাকায় যথেষ্ট সুনাম , জনপ্রিয়তাও রয়েছে দিদারের। এরশাদ সরকারের আমলে এই আসন থেকে সৈয়দ দিদার বখত এমপি হয়ে এলাকার দৃশ্যমান উন্নয়নের কিছু স্বাক্ষি রেখেগেছেন। যার ফলে অনেকেই দল-বেদল না দেখেই ব্যক্তি দিদারকে পছন্দ করছেন। জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মী ছাড়াও অন্যান্য দলের ভোটাররা তাকে ভোট দেবেন বলে মনে হচ্ছে। দিদার বখত তালার ছেলে। আঞ্চলিকতার কারনে তালার মানুষ তাকে কোন দল না দেখে ভোট দেবে।
কলারোয়ার বাটরা গ্রামের আজিবর রহমান বলেন, কলারোয়ায় আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ বিরোধ চরমে। সেখানেও জাতীয় পার্টির একটি রিজার্ভ ভোট রয়েছে সীমান্তজুড়ে । এছাড়া আওয়ামী লীগের সরদার মুজিব গত বারও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ভালোই ভোট পেয়েছল। তারও একটি ভোটব্যাংক রয়েছে আসনটিতে। তালা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ নূরুল ইসলাম ১৮ সালে নৌকার মনোনয়র পাওয়ার পর মহাজোটের কারনে শেষ-মেষ তাকে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। তারও একটি শক্ত অবস্থান রয়েছে তালা এলাকায়। সব মিলিয়ে এবার লাঙ্গলের প্রার্থী সৈয়দ দিদারের ভাগ্য খুলতে পারে বলে তার ধারনা।
কলোরোয়ার যুগিখালীর আওয়ামী লীগ নেতা অশোক কুমার বলেন, কলোরোয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক, কলারোয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম লাল্টুর সাথে আগে থেকেই চরম বিরোধ নৌকার প্রার্থী স্বপনের। লাল্টুর সমর্থকদের অনেকেই ইতোমধ্যে নৌকার বিপক্ষে মাঠে নামতে দেখা গেছে। ফলে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে জয়লাভ করা কঠিন হতে পারে। নৌকার প্রার্থী স্বপনের বাড়ি কলারোয়াতে। সেখানেই যদি স্বপন ভোটের মাঠ ঠিক না করতে পারে তাহলে তার জন্য জয়ী হওয়া কঠিন।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মী জাফরউল্লাহ বলেন, কলারোয়া ও তালায় নৌকার যে ভোটব্যাংক রয়েছে তাদিয়ে একক নৌকার প্রার্থীকে জয়ী করা সম্ভব। কিন্তু নৌকার ভোট আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে ভাগাভাগি হলে নৌকার প্রার্থীকে জয়ী করে আনা বেশ কঠিন হবে।
এদিকে, এই আসনে বিভিন্ন দল ও স্বতন্ত্র মিলে ১০ জন প্রার্থী নির্বাচনী মাঠে থাকলেও মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে নৌকার প্রার্থী ফিরোজ আহমেদ স্বপন ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী সৈয়দ দিদার বখতের মধ্যেই, এমনটি ধারনা সাধারন মানুষের।
নৌকার প্রার্থী ফিরোজ আহমেদ স্বপন বলেন, আমার দলের নেতা-কর্মীরা বিপক্ষে যারা অবস্থান নিয়েছে তাদের নিয়ে আমি শংকীত নই। তাদের কর্মকান্ড দেখে আমার হাঁসি পাই। এসব বিরোধীতা নদীর স্রোতের সাথে ভেসে যাবে। জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী।
জাতীয় পার্টির প্রার্থী সৈয়দ দিদার বখত বলেন, শুধু জাতীয় পার্টি নয়, সব দলের ভোট আমি পাবো। এমনকি আওয়ামী লীগের অংসখ্য ভোটার আমার জন্য মাঠে কাজ করছে। আমি ইনশাল্লাহ জয়ী হবো।
###