ডেস্ক রিপোর্ট ::
পণ্যে ভরা বাজার, তবুও স্বস্তি নেই মানুষের। সরকারি নির্দেশনা থাকার পরও দিন দিন বৃদ্ধি পেয়েছে দ্রব্যমূল্য। বাজারে পণ্যের সমাহার যথেষ্ট মজুদ রয়েছে। তবুও সবজি, মাছ, মাংস, মসলা জাতীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। নিম্ম আয়ের মানুষের ক্রয় ক্ষমতা নাগালের বাইরে। সংকট নেই, তবুও কেন দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে সে প্রশ্ন সাধারণ জনগণের। দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতিতে নাভিশ্বাস ফেলছে জনগণ। কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে অতিরিক্ত মুনাফালাভের আশায় সিন্ডিকেট করে দাম বাড়াচ্ছে একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশনা দেওয়ার পরও মানছে না অসাধু ব্যবসায়ীরা। ভোক্তা অধিকারের তৎপরতা তেমন না থাকায় আরো চেপে বসেছে সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা। ইচ্ছামত সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে দাম বৃদ্ধি করে চলেছে।
সাতক্ষীরা বাজারে দফায় দফায় বেড়ে চলেছে ব্রয়লার মাংসের দাম। সাধারণ মানুষের মাংসের চাহিদা পূরণের জন্য একমাত্র ব্রয়লার ও সোনালী মুরগি ভরসা। কিন্তু দাম বৃদ্ধি করে চলেছে অসাধু চক্র। মাংসের মূল্য বৃদ্ধিতে বিপাকে পড়েছে নিম্ম আয়ের মানুষ।
শুক্রবার সাতক্ষীরা বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, ব্রয়লার গত ১ সপ্তাহে আগে কেজি প্রতি ১৬০টাকা দরে বিক্রি হলেও অল্প কয়েক দিনের ব্যববধানে বিক্রি হচ্ছে ২১০টাকায়। সোনালী মুরগি ২৭০টাকা বিক্রি করা হয়েছে কিন্তু শুক্রবার দাম বৃদ্ধি করে আস্ত ৩৩০ টাকা আর কাটা ৫০০টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে। দেশে অনেক জায়গায় গরুর মাংস কেজি প্রতি ৬০০ টাকা বিক্রি হলে সাতক্ষীরা বাজারে ৭০০ টাকা আর খাসির মাংস ৯০০টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহের দামে মাছ, সবজি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় চাল, ডাল, তেল দাম স্থিতিশীল রয়েছে। মাছের দাম কিছুটা কমলে মাঝে মাঝে বাড়ছে তেলাপিয়ার দাম। গত সপ্তাহে তেলাপিয়া কেজি প্রতি ৯০ টাকা, বর্তমান ১২০ টাকা, নাইলোটিকা গত সপ্তাহে ১২০ টাকা, বর্তমান ১৩০ টাকা। কই গত সপ্তাহে ২২০ টাকা, বর্তমান ২৫০ টাকা, রুই ২০০ টাকা, বর্তমান ২২০ টাকা, পাঙ্গাস গত সপ্তাহে ১৩০ টাকা, বর্তমান ১২০ টাকা। সিলভার কার্প গত সপ্তাহে ১০০ টাকা, বর্তমান ১০০টাকা, পুঁটি গত সপ্তাহে ১২০ টাকা, বর্তমান ১৪০ টাকা, পারশে গত সপ্তাহে ৪০০ টাকা, বর্তমান ৪০০ টাকা, ভেটকি ৬০০ টাকা, বর্তমান ৬০০ টাকা, ভাঙ্গান ৫৬০ টাকা, বর্তমান ৬৫০ টাকা, পায়রা ৫০০ টাকা, ছাটি ৬০০ টাকা থেকে ১২০০ টাকা, টেংরা ৩০০ টাকা, পাবদা ২৫০ টাকা, বোতল ১৮০ টাকা, হরিনা চিংড়ী ৫০০টাকা, মিরগেল ১৪০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে।
মুদি বাজারে গত সপ্তাহে চাল সর্বনি¤œ আটাশ ৫৮ টাকা, বর্তমান ৫৮ টাকা, সর্বোচ্চ মিনিকেট ৬২ টাকা, বর্তমান ৬২ টাকা, মসুর ডাল মোটা কেজি প্রতি গত সপ্তাহে ১০৫ টাকা, বর্তমান ১১০ টাকা, চিকন ১৪০ টাকা, বর্তমান ১৪০ টাকা, বুট ডাল ৬৮ টাকা, বর্তমান ৭০ টাকা, মুগ ডাল চিকন ১৬৩ টাকা, বর্তমান ১৬২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সয়াবিন তেল ভালোটা গত সপ্তাহে কেজি প্রতি ১৬৬ টাকা, বর্তমান ১৬৬ টাকা, নরমাল ১৪০ টাকা, বর্তমান ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সরিষা তেল কেজি প্রতি ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে গত সপ্তাহের দামে। মসলা জাতীয় খাদ্যর দাম গত সপ্তাহের চেয়ে কিছুটা কমেছে। পেঁয়াজ গত সপ্তাহে কেজি প্রতি ৭৫ টাকা, বর্তমান ৮০ টাকা, রসুন দেশি কেজি প্রতি ১৪০ টাকা, বর্তমান ১৪০ টাকা, চায়না ১৩০ টাকা, বর্তমান ১৩০ টাকা, আদা ১৯০ টাকা, বর্তমান ১৯০ টাকা, শুকনা ঝাল গত সপ্তাহে ৫০ টাকা বর্তমান ৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সবচেয়ে চাহিদা শীতকালীন সবজি। গত সপ্তাহের তূলনায় দামই রয়েছে কিছু সবজির। বাজারে গত সপ্তাহে ফুলকপি কেজি প্রতি ৩৫ টাকা, বর্তমান ৪০ টাকা, বেগুন ৫০ টাকা, বর্তমান ৫০ টাকা, শিম ৪০ টাকা, বর্তমান ৪০ টাকা, ওলকপি ২৫ টাকা, বর্তমান ২৫ টাকা, বাঁধাকপি ৩০ টাকা, বর্তমান ৩৫ টাকা, লালশাক আটি ৫ টাকা, বর্তমান ৫ টাকা, কলা ৩০টাকা, বর্তমান ৩৫ টাকা, মেটেআলু ৪৫ টাকা, বর্তমান ৬০ টাকা, বরবটি ১৫ টাকা, বর্তমান ১৫ টাকা, পালংশাক ৭ টাকা, বর্তমান ৭ টাকা, ঢেড়স ৩০ টাকা, বর্তমান ৩০ টাকা, নতুন আলু ৫০ টাকা, বর্তমান ৬০ টাকা, কাঁচা ঝাল ৬০ টাকা, বর্তমান ৬০ টাকা, টমোটো ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ক্রেতা মোজাম্মেল হক জানান, পণ্যের দাম বদ্ধি পেয়েছে কিন্তু মানুষের আয় বৃদ্ধি পায়নি। দ্রব্যমূল্য উর্দ্ধগতিতে নি¤œ আয়ের মানুষ খুবই বিপাকে পড়েছে। এই উর্দ্ধগতির বাজারে লোকাল সিন্ডিকেট করে একধরনের অসাধু সিন্ডিকেট দাম বাড়াচ্ছে। এই অসাধু সিন্ডিকেট জানে নি¤œ আয়ের মানুষ গরুর মাংস, খাসির মাংস ক্রয় করার ক্ষমতা নেই, তারা অবশ্যই ব্রয়লার ও সোনালী মুরগির মাংসের দিকে ঝুঁকবে। এজন্য এই অসাধু লোকাল সিন্ডিকেট কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে ব্রয়লার ও সোনালী মুরগির মাংসের দাম বৃদ্ধি করেছে। সঠিক মনিটরিং যদি থাকত নিম্ম আয়ের মানুষের ভোগান্তিতে পড়তে হতো না।
ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের সাতক্ষীরা উপপরিচালক নাজমুল হাসান জানান, আমরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা পাওয়ার পর ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান অব্যাহত রেখেছি। রবিবার কর্মকর্তার সাথে বাজার নিয়ন্ত্রণের বৈঠক রয়েছে। আমরা জেলা প্রশাসকের নির্দেশনার অপেক্ষায় আছি।
এব্যাপারে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সরকারি নাম্বারে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু ফোন রিসিভ না করায় তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।