ডেস্ক রিপোর্ট ::
বাণিজ্যিক কুল চাষে আগ্রহ বাড়ছে সাতক্ষীরার চাষিদের। চার বছরের ব্যবধানে এবার জেলার ৩০ শতাংশ জমিতে কুলের আবাদ বেড়েছে। কম খরচে লাভ বেশি হওয়ায় কুল চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন এ অঞ্চলের চাষিরা।
বর্তমানে জেলার উৎপাদিত কুল ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলার মাটি কুল চাষের জন্য উপযোগী হওয়ায় ২০০০ সালের পর এ জেলায় বাণিজ্যিকভাবে কুল চাষ শুরু হয়। ফসলটি লাভজনক হওয়ায় অন্যান্য ফসলের উৎপাদন কমিয়ে জেলার কৃষকরা তাদের জমিতে বল সুন্দরী, ভারত সুন্দরী, থাই আপেল, বাউ কুল, আপেল কুল, তাইওয়ান কুল, নারিকেলি, ঢাকা নাইনটিসহ বিভিন্ন জাতের কুল চাষ করে আসছেন।
২০১৯ সালে জেলার ৫৫০ হেক্টর জমিতে কুলের আবাদ হয়। তবে চার বছরে ব্যবধানে ৩০ শতাংশ জমিতে আবাদ বেড়েছে। এবার জেলার ৮৩০ হেক্টর জমিতে কুল চাষ করা হয়েছে। যা থেকে ১০ হাজার টন কুল উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। যার বাজারমূল্য হবে ১০০ কোটি টাকার ওপরে।
সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বেশির ভাগ অনাবাদি জমি এখন সারি সারি কুল গাছে ছেয়ে গেছে। গাছগুলোতে শোভা পাচ্ছে নানা জাতের কুল। আর কুলের ভারে নুইয়ে পড়ছে ডাল। কিছু বাগান থেকে আগাম জাতের কুল সংগ্রহ শুরু করেছেন কৃষকরা। বর্তমানে জেলার স্থানীয় বাজারগুলোতে মিষ্টি কুল ১২০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর টক কুল বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা থেকে ৮০ টাকা দরে।
কয়েকজন কুল চাষি জানান, প্রতি বিঘা জমিতে কুল চাষ করতে খরচ হয়েছে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। সেখানে বিক্রি করতে পারবেন ৬০ থেকে ৮০ হাজার টাকা। আর এ বছর ফলন ও বাজার দর ভালো হওয়াতে কুল চাষে ভালো লাভের আশায় রয়েছেন তারা।
কৃষকরা বলেন, সরকার যদি কৃষি অফিসের মাধ্যমে কৃষকদের কুল চাষে উদ্বুদ্ধকরণ সভা, সেমিনার এবং সুদমুক্ত ঋণ দিয়ে সহযোগিতা করে তাহলে সাতক্ষীরার কুল দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব। আর বিদেশে বিপণন করতে পারলে কুলের দাম দেশের বাজারে আরও বাড়বে। এতে করে এক দিকে যেমন দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে তেমনইভাবে কৃষকরাও স্বাবলম্বী হয়ে উঠবেন।
সাতক্ষীরা জেলার পাটকেলঘাটা থানার যুগিপুকুরিয়া গ্রামের পলাশ বিশ্বাস জানান, বিগত কয়েক বছর ধরে কুল চাষ করে আসছেন তিনি। তার সাত বিঘার একটি কুল বাগানে থাই আপেলকুল, বল সুন্দরীকুল, বিলাতি মিষ্টি, কাশ্মীর আপেল কুল, দেশি আপেল কুল, নারকেল কুল, ও টক বোম্বাইসহ বিভিন্ন প্রজাতির ৫০০টি কুল গাছ রয়েছে। এসব গাছে একনাগাড়ে গত কয়েক বছর ধরে কুল উৎপাদন হচ্ছে। প্রতি বছর কুলের মৌসুমে ১২ থেকে ১৩ লাখ টাকার কুল বিক্রি করেন।
তিনি আরও জানান, গত বছর সাত বিঘা বাগানের কুল বিক্রি হয়েছে ১২ লাখ টাকায়। এ সময় সেচ, গাছের পরিচর্যা, সার কীটনাশক, ভিটামিন ও শ্রমিকের মজুরি দিয়ে তার উৎপাদন খরচ হয় সাড়ে ৬ লাখ টাকা। বিক্রি শেষে তার লাভ হয়েছে ৫ লাখ টাকার ওপরে। তবে চলতি মৌসুমে গাছে যে পরিমাণ ফলন এসেছে তাতে ১৩ থেকে ১৪ লাখ টাকার কুল বিক্রি হবে।
জুজখোলা গ্রামের জামাল উদ্দীন নামে অপর এক কুল চাষি জানান, এবার তিন বিঘা জমিতে বল সুন্দরী, আপেল ও থাই কুল চাষ করেছেন। বর্তমানে প্রতিটি গাছে ৩ থেকে ৪ মণের বেশি কুল ধরেছে। যা ১১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে শুরু করেছেন। অল্প খরচ ও কম পরিশ্রমে কুল চাষ অধিক লাভজনক। যেকোনো পতিত জমিতে কুল চাষ করা সম্ভব। এজন্য আগামীতে তার বাগান আরও প্রসারিত করবেন।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সাইফুল ইসলাম জানান, জেলায় অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে সাতক্ষীরার কুল। এখানের মাটি ও আবহাওয়া কুল চাষের জন্য অনুকূল। অল্প সময়ে অধিক লাভজনক হওয়ায় প্রতি বছরই বাড়ছে কুলের আবাদ। আর কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে যেকোনো প্রয়োজনে কুল চাষিদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।
##