বি. এম. জুলফিকার রায়হান ::
তালার মাগুরা প্রগতী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৩টি পদে অর্ধকোটি টাকা নিয়োগ বানিজ্য হালাল করার জন্য বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মন্ডল সন্তোষ কুমার দফায় দফায় অনিয়ম ও অপতৎপরতা শুরু করেছেন। অভিযোগ উঠেছে, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার উপজেলার শীর্ষ দূর্নীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তা ফিরোজ আহমেদের সাথে যোগসাজস করে প্রধান শিক্ষক অনুগত সভাপতি নির্বাচিত করে ম্যানেজিং কমিটি গঠনের চেষ্টা করছেন। এবিষয়ে ইতোমধ্যে এলাকার সচেতন অভিভাবক এবং জনপ্রতিনিধি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দায়ের করেছেন।
মাগুরা ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ময়নুল ইসলাম বলেন, মাগুরা প্রগতী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মন্ডল সন্তোষ কুমার অত্র বিদ্যালয়ে যোগদান করার পর থেকে বিদ্যালয়টি দূর্নীতি এবং অনিয়মের আখড়ায় পরিনত করেছেন। বিভিন্ন সময়ে এই বিদ্যালয় থেকে নিয়োগ বানিজ্য করে কৌশলে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তার বিরুদ্ধে ইতোপূর্বে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি ও এলাকার সচেতন মানুষ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেন। দুদক সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তর এবং বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি প্রধান শিক্ষক সন্তোষ কুমারের নিয়োগ বানিজ্য এবং অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে আইনী ব্যবস্থা গ্রহনের প্রক্রিয়া শুরু করলে ২০০৭ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারী তিনি বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির কাছে লিখিত মুচলেকা দিয়ে পরে আপোষ মিমাংসা করে রক্ষা পান।
ময়নুল ইসলাম বলেন, সেবার মুচলেকা দিয়ে তিনি ভাল হয়ে যাবেন বললেও এখনও ভাল হননি। এই বিদ্যালয়ে ৩টি পদ শূন্য রয়েছে এবং পদগুলোতে নিয়োগ দিয়ে অর্ধ কোটি টাকার হাতিয়ে নেবার পরিকল্পনা তাঁর দীর্ঘদিনের। এরইমধ্যে বিদ্যালয়ের সভাপতি মারা গেলে প্রধান শিক্ষকের কপাল খুলে যায়! তিনি এবার তার একান্ত অনুগত ব্যক্তিকে সভাপতি বানিয়ে টাকা হাতানোর পায়তারা করছে। এজন্য তিনি নানান অনিয়ম ও প্রতারনার আশ্রয় নিয়ে ম্যানেজিং কমিটিতে বিতর্কীত সদস্য বানিয়েছেন। বিদ্যলয়ের জমি দাতাদের মধ্যে যোগ্য ব্যক্তিকে বাদ দিয়ে দিলিপ কুমার বসুকে দাতা সদস্য বানানো হয়েছে। এই দিলিপ বসুর বিরুদ্ধে তথ্য গোপন করে প্রতারনার মাধ্যমে দেবোত্তর সম্পত্তি অবৈধ ভাবে বিদ্যালয়ের নামে লিখে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া ওই জমির একাধিক শরিক থাকলেও তিনি একাই বিদ্যালয়ের নামে লিখে দিয়েছেন। এবিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহনের নিমিত্তে এলাকার মানুষ সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক, যশোর শিক্ষা বোর্ড ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সহ বিজ্ঞ আদালতের শরনাপন্ন হয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার একাধিক ব্যক্তি জানান, প্রধান শিক্ষক সন্তোষ কুমার ৩টি পদের বিপরীতে অর্ধ কোটি টাকার নিয়োগ বানিজ্য করতে এবার অনুগত সভাপতি নির্বাচিত করার জন্য নানান প্রতারনা করছেন, এমনকি বিভিন্ন মহলে হাজার হাজার টাকা ছড়াচ্ছেন। ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি পদের এই নির্বাচনকে কেন্দ্র এলাকায় আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটনার আশংকায় দায়ের করা অভিযোগের কারনে গত ২২/১১/২০২৩ তারিখে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আফিয়া শারমিন সভাপতি নির্বাচন স্থগিত করলে সেভাবে দীর্ঘদিন কমিটি গঠন বন্ধ রয়েছে।
প্যানেল চেয়ারম্যান মো. ময়নুল ইসলাম বলেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার আফিয়া শারমীন ছুটিতে দেশের বাইরে রয়েছেন। এই সুযোগে ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মহোদয়কে ব্যবহার করে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ফিরোজ আহম্মেদ ও প্রধান শিক্ষক সন্তোষ কুমার রোববার (১১ ফেব্রুয়ারী) সভাপতি নির্বাচনের তারিখ নির্ধারন করেছেন। নির্বাচনে একান্ত অনুগত ব্যক্তিকে সভাপতি বানানো নিশ্চিত করতে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ৯সদস্য বিশিষ্ট ম্যানেজিং কমিটির ৪জন সদস্যকে নির্বাচনের বিষয় অবহিত করা হয়নি। প্রধান শিক্ষকের নিয়োগ বানিজ্য, দূর্নীতি, অনিয়ম এবং গোপনে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নির্বাচন ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় আবারও উত্তেজনা বিরাজ করছে। এঘটনার প্রতিকার সহ নিরপেক্ষভাবে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নির্বাচনের তারিখ নির্ধারনের জন্য সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসী সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এবং তালা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
###