দক্ষিণাঞ্চলে সুপেয় পানির নিশ্চয়তার দাবিতে বিশ্ব পানি দিবস উপলক্ষে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে বিভিন্ন সংগঠন ও শ্রেণী পেশার মানুষ। ২২ মার্চ একযোগে সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাটের বিভিন্ন জায়গায় এই পানি দিবস উদযাপন করার লক্ষ্যে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলাতে একযোগে লিডার্স ও উপজেলা জলবায়ু অধিপরামর্শ ফোরামের উদ্যোগে শ্যামনগর মাইক্রো স্ট্যান্ডে মানববন্ধন ও সমাবেশের আয়োজন করা হয়। মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন মাষ্টার নজরুল ইসলাম, দেবীরঞ্জন মন্ডল, উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান খালেদা আইয়ুব ডলি, শিক্ষক ও সাংবাদিক রণজিৎ কুমার বর্মন, শিক্ষক মানবেন্দ্র দেবনাথ, আবু সাইদ, বিভিন্ন সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ আরো অনেকে। মানববন্ধনে উপস্থিত সকলে খালি কলস নিয়ে দাঁড়িয়ে সুপেয় পানির নিশ্চয়তার দাবিতে প্রতীকী প্রতিবাদ জানায়।
আশাশুনি উপজেলাতে একত্রে লিডার্স ও উপজেলা জলবায়ু অধিপরামর্শ ফোরামের উদ্যোগে পানি দিবস ২০২৪ উপলক্ষে মানববন্ধন ও সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন মো: আব্দুল হান্নান, জনাব বিকাশ চন্দ্র সানা, ইউপি সদস্য জনাব মারুফা বেগম, মিনতি রাণী সরকারসহ আরো অনেকে। তারা সরকারের কাছে উপকূলের সুপেয় পানির সংকট নিরসনের দাবি জানান।
খুলনা জেলার পাইকগাছাতে সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলন ও লিডার্সের যৌথ উদ্যোগে অনির্বান লাইব্রেরিতে পানি দিবস উপলক্ষে শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন খুলনা-৬ আসনের সংসদ সদস্য মো: রশীদুজ্জামান। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন প্রফেসর রেজাউল করিম, বিভিন্ন সুধী সমাজের নেতৃবৃন্দ। খুলনা-৬ আসনের সংসদ সদস্য মো. রশীদুজ্জামান বলেন, পরিবেশে পানির ভারসাম্য ধরে রাখতে হবে। আর তার জন্য আমাদের পানির সঠিক ব্যবহার এর উপর গুরুত্ব দিতে হবে। প্রকৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।
অনুরূপভাবে বাগেরহাট প্রেসক্লাবের সামনে লিডার্স ও জেলা জলবায়ু অধিপরামর্শ ফোরামের যৌথ উদ্যোগে সুপেয় পানির নিশ্চয়তার দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ এর আয়োজন করা হয়। বাগেরহাটের মোংলাতে পশুর রিভার ওয়াটারকিপার ও লিডার্সের আয়োজনে র্যালি, মানব বন্ধন ও গোল টেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়। গোলটেবিল বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার নারায়ন চন্দ্র পাল।
পানি দিবসের বিভিন্ন কর্মসুচীতে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের উপকূলবর্তী ১৯টি জেলায় প্রায় ৩ কোটি ৯০লক্ষ মানুষের বসবাস। আধারযোগ্য পানি সংগ্রহ করতে পারে না এদের প্রায় ৩ কোটি মানুষ এবং দেড় কোটি মানুষ ভুগর্ভস্থ লবণাক্ত পানি পানে বাধ্য হচ্ছেন। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের মতে যেখানে পানযোগ্য প্রতি লিটার পানিতে লবণের সহনীয় পরিমান ০ থেকে ১ হাজার মিলিগ্রাম সেখানে বাংলাদেশের উপকূলে প্রতিলিটার পানিতে রয়েছে ১ হাজার থেকে ১০ হাজার মিলিগ্রাম লবণের উপস্থিতি।
মানববন্ধন ও সমাবেশে বক্তারা আরও বলেন, নদীভাঙন জনিত বন্যা, চিংড়ি চাষ, ভুগর্ভস্থ পানির লবনাক্ততার কারনে গত কয়েক বছরে সুন্দরবন এলাকায় সুপেয় পানির সংকট বেড়েছে। সুন্দরবন উপকুলে ৭৩% পরিবার সুপেয় পানি থেকে বঞ্চিত বা খারাপ পানি খেতে বাধ্য হয়। উপকূলীয় অঞ্চলে গত ৩৫ বছরে লবণাক্ততা পূর্বের তুলনায় ২৬% বৃদ্ধি পেয়েছে এবং যার পরিমান ২ পিপিটি থেকে বেড়ে ৭ পিপিটি হয়েছে। বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে সমুদ্র থেকে ভূভাগের অনেক ভিতর পর্যন্ত লোনাপানি ঢুকে পড়েছে, ফলে লোকজনকে পানি ও খাবারের সাথে তুলনামূলক বেশি পরিমাণে লবণ গ্রহণ করতে হচ্ছে। এছাড়া লবাণাক্ততা বৃদ্ধি এ অঞ্চলের মানুষকে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতেও ফেলেছে। চিকিৎসাবিদদের মতে এ এলাকার বসবাসকারীদের উচ্চ রক্তচাপ রোগে ভোগার সম্ভাবনা বাড়ছে। গবেষণায় দেখা গেছে লবণাক্ততায় আক্রান্ত এলাকায় গর্ভবতী মায়েদের প্রি-একলেম্পশিয়া ও উচ্চরক্তচাপের হার ৬.৮%-৩৯.৫% বেড়েছে। লবণাক্ততার কারণে উপকূলের নারীদের জরায়ু সংক্রমন বেড়েছে আশঙ্কাজনকভাবে। মাইলের পর মাইল পাড়ি দিয়ে খাবার পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে নারীকেই। ফলে নষ্ট হচ্ছে নারীর শ্রমঘন্টা। শিশুদের অনিরাপদ অবস্থায় রেখে যেতে হচ্ছে ও নারীরা যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে। শিশুদের শিক্ষা ব্যাহত হচ্ছে। রোগব্যাধি বাড়ছে, সামগ্রিক জীবনের গুণগত মান হ্রাস পাচ্ছে।
দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলে সুপেয় পানির জন্য বক্তারা যে সকল দাবী তুলে ধরেন, বাংলাদেশ পানি আইনের ধারা-১৭ অনুযায়ী উপকূলীয় অঞ্চলকে পানি সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে ঘোষণা করতে হবে। নিরাপদ পানির সর্বজনীন, ন্যায্য ও সজলভ্যতা নিশ্চিত করতে বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি ও অগ্রাধিকার প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে এবং ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ দিতে হবে, উপকুলীয় সকল মানুষের খাবার পানির টেকসই ও স্থায়ী সমাধান করতে হবে, আন্তমন্ত্রণালয় সমন্বয় সাধনে উপকূল উন্নয়ন বোর্ড গঠন করতে হবে, পানীয় জলের উৎসের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে, উপকূলীয় অঞ্চলে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ এবং বাস্তবায়নের পূর্বে ওই এলাকার পানির চাহিদা যোগানের পরিকল্পনা নিশ্চিত করতে হবে।
প্রেসবিজ্ঞপ্তি