বদিউজ্জামান ::
সাতক্ষীরা জেলা লিগ্যাল এইড অফিস গত এক বছরে ৪১৪টি আবেদন নিষ্পত্তি করেছে। এছাড়া পারিবারিক বিরোধ আপোস-মীমাংসার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করে আদায় করা হয়েছে সাড়ে ৩১লক্ষ টাকা। আদায়কৃত অর্থ আবেদনকারী পক্ষকে প্রদান করা হয়েছে। এসব আবেদনকারীর বেশির ভাগই দরিদ্র এবং অসহায় নারী। ২০২৩ সালে প্রায় ৬০০ উপকারভোগী বিনা খরচে একজন বিচারকের মধ্যস্থতায় তাদের পারিবারিক বিরোধ সফল নিষ্পত্তির সুযোগ পাওয়ায় দিন দিন অফিসটির কদর বাড়ছে জেলার সাধারণ মানুষের মধ্যে।
জেলা লিগ্যাল এইড অফিস সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ২০২৩ সালের জানুয়ারি হতে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত মোট ৭৪৪জন আবেদনকারী এই অফিসে আবেদন করেন। এর মধ্যে মামলা দায়ের করা হয় ৪২১টি, এডিআর দায়ের করা হয় ৩২৩টি। উক্ত সময়ে ১৫৭টি মামলা নিষ্পত্তি এবং এডিআর নিষ্পত্তি করা হয় ২৫৭টি। এছাড়া আইনি পরামর্শ দেওয়া হয় ৩০৬জন নারী ও ১৪৫জন পুরুষকে। গত এক বছরে মোট উপকারভোগীর সংখ্যা ছিল ৫৯৮ জন।
২০২৩ সালে অফিসটির উল্লেখযোগ্য সাফল্য ছিল নগদ অর্থ আদায়। ওই বছর পারিবারিক বিরোধ সফল নিষ্পত্তির মাধ্যমে আপসে ৩১লক্ষ ৫৫ হাজার ৪০১টাকা আদায় করা হয় এবং আদায়কৃত অর্থ আবেদনকারি পক্ষকে প্রদান করা হয়। এসব আবেদনকারীর বেশিরভাগই ছিলেন অসহায়, দরিদ্র এবং সুবিধাবঞ্চিত নারী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন নারী আদালতে মামলা না করে স্বল্প সময়ের মধ্যে তাদের দেনমোহর- খোরপোষের অর্থ বিনা খরচে আদায় করতে পেরে অফিসটির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
জেলা লিগ্যাল এইড কমিটি, সাতক্ষীরার চেয়ারম্যান সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ চাঁদ মোহাম্মদ আব্দুল আলিম আল রাজী’র পরামর্শক্রমে জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার (সিনিয়র সহকারী জজ) মুহাম্মদ নাছির উদদীন ফরাজী নিজ দায়িত্ব পালন করছেন অতি দক্ষতার সাথে। যে কারনে অল্প সময়ের ব্যবধানে অফিসটি জেলাবাসির কাছে আস্থার জায়গা করে নিয়েছে।
জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার মোহাম্মদ নাছির উদদীন ফরাজী জানান, সাধারণ মানুষ যাতে আইনি অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয় সেজন্য সরকার এই অফিসের মাধ্যমে সকল আইনগত সেবা অব্যাহত রেখেছেন। তিনি আরও জানান, সরকার গরিব মানুষের মামলা পরিচালনার খরচসহ বিনামূল্যে আইনগত পরামর্শ দিচ্ছেন সমাজের সকল শ্রেণীপেশার মানুষকে। এছাড়াও এ অফিসের সহযোগিতায় আপোস মীমাংসার মাধ্যমে মানুষের পারিবারিক ও সামাজিক বিরোধ নিষ্পত্তিতে সহযোগিতা করা হচ্ছে। যেটি ইতিমধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছ।
স্বাভাবিক এসব আইনি কার্যক্রমের পাশাপাশি বিচারপ্রার্থী দরিদ্র অসহায় মানুষের জন্য বিশেষ উদ্যোগে একটি তহবিল চালু রয়েছে। এ তহবিলের অর্থ থেকে জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল হতে আশা দরিদ্র বিচারপ্রার্থী মানুষের যাতায়াত খরচ এবং দুপুরে এক বেলা খাবার খরচ দেয়া হয়ে থাকে, যেটি বাংলাদেশের মধ্যে একটি ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগ বলেও তিনি জানান।
এ অফিস হতে মানুষ যাতে আরো বেশি বেশি সেবা পেতে পারে সেজন্য সারা বছরব্যাপী বিভিন্ন উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে জনসচেতনতা মূলক অনুষ্ঠান, সভা, সেমিনার, উঠান বৈঠক ও সামন্বয় সভা অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান তিনি।