স্টাফ রিপোর্টার ::
শ্যামনগর কেন্দ্রীয় দারুল উলুম কামিল (স্নাতকোত্তর) মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা এ এ এম ওজায়েরুল ইসলামের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, রাষ্ট্রদ্রোহী কর্মকাণ্ড,আর্থিক অনিয়ম সহ ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে ।ইতিপূর্বে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি গ্রীন লাইফ মেডিকেল কলেজ এন্ড হসপিটাল লিমিটেডের ডিরেক্টর ডাক্তার এম. এ জলিল মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার পরেও তিনি এ সবের তোয়াক্কা না করে দিনের পর দিন নানান অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছেন। সরকার বিরোধী বক্তব্যে চার্জশিটভুক্ত এই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন সহ একাধিক দপ্তরে অভিযোগ ও ডজন খানেক মামলা চলমান থাকার পরেও তিনি কেন এত বেপরোয়া হচ্ছেন এ নিয়ে সরব হয়েছেন এলাকাবাসী।
অভিযোগ উঠেছে,
কেন্দ্রীয় মাদ্রাসার চারজন কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। বারবার জানতে চাওয়ায় দুই বছর পর ১৬ লাখ টাকা কমিটির কাছে স্বীকার করেছেন। কিন্তু কার থেকে কত টাকা নিয়েছেন সে হিসাব ম্যানেজিং কমিটির মিটিংয়ে উপস্থাপন করতে পারেননি।
সাবেক ম্যানেজিং কমিটির উপদেষ্টা হাজী মুজিবুর রহমানের ভাইকে চাকরি দেওয়ার আশ্বাসে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা নিয়ে চাকরি না দিয়ে টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
প্রতিবেশী মাওলানা জাহাঙ্গীরের থেকে চাকরি দেওয়ার আশ্বাসে ১০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন ।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মাদ্রাসা শিক্ষকের কন্যাকে চাকরি দেওয়ার আশায় ১১ লাখ টাকা গ্রহণ করেছেন। টাকা গ্রহণ করার সময় অধ্যক্ষ বলেন, মাদ্রাসায় কামিল (স্নাতকোত্তর) হাদিস বিভাগের জন্য ১৬ লাখ টাকা ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরের অফিসে দিতে হবে।
মাওলানা মোঃ শফিকুল ইসলামকে অবৈধ ও জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে শ্যামনগর কেন্দ্রীয় মাদ্রাসায় প্রভাষক পদে নিয়োগ দিয়ে বিপুল অংকের টাকা আত্মসাৎ করেছেন ।
বর্তমানে বিতর্কিত শফিকুল ইসলামকে ভাইস প্রিন্সিপাল পদে পদোন্নতির আশ্বাস দিয়ে মোটা অংকের টাকা উৎকোচ গ্রহণ করায় এটিকে কেন্দ্র করেই এই মাদ্রাসার কমিটির সাথে ব্যাপক মতপার্থক্য সৃষ্টি করেছেন।
মাওলানা শফিকুল ইসলামকে অনৈতিকভাবে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগ দিয়ে
ভাইস প্রিন্সিপাল পদে পদোন্নতির অপচেষ্টা
সহ- সুপারকে অধ্যক্ষের পদে সমন্বয়ের ব্যাপারে তিনবার অধিদপ্তর থেকে পরিপত্র থাকা সত্বেও বিপুল অঙ্কের বিনিময়ে প্রভাষক শফিকুলকে উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন অধ্যক্ষ ওজায়ের । তিনি কমিটিকে অবজ্ঞা করে গোপনীয়ভাবে যাবতীয় কাগজপত্র জালজালিয়াতি করে অসংগতি ও বিধি বর্হিভূত ভাবে মাওলানা শফিকুল ইসলামকে ভাইস প্রিন্সিপাল পদে নিয়োগের কাগজপত্র অধিদপ্তরে প্রেরণ করেছিলেন। বিষয়টি ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ডাক্তার এম. এ জলিল জানতে পেরে তিনি মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ জানিয়ে তদন্ত দাবি করেন ।
অধিদপ্তর থেকে অধ্যক্ষ ওজায়েরের বিরুদ্ধে শোকজ নোটিস দেন। ডকেট নং-১৬৩৫৩ তারিখ ২২/১১/২০২৩ । যার কপি অধিদপ্তর অধ্যক্ষকে প্রেরণ করেন কিন্তু সভাপতির চিঠিটি গোপন করেন অধ্যক্ষ। শুনানির দিন ডিজি দপ্তর থেকে সভাপতিকে ফোন করলে সভাপতি জানান যে, চিঠির অনুলিপি তিনি পাননি, তাকে চিঠির ব্যাপারে অবহিত করা হয়নি। বিষয়টি অধিদপ্তর গুরুত্ব সহকারে নিয়ে পরবর্তীতে শুনানির তারিখ হবে মর্মে সভাপতিকে টেলিফোনে জানিয়েছিলেন। কথা ছিল তাদের বেতন বন্ধ থাকবে।
সভাপতির অনুমতি ব্যতিরেকে অধ্যক্ষ কর্মস্থল ত্যাগ করে প্রায়ই ঢাকায় এবং ভারতে যান। তিনি শ্যামনগরের বিভিন্ন মাদ্রাসার কাজে তদবিরকারক হিসাবে মাদ্রাসা বোর্ড, ডিজি অফিস ও ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় যান। তাতে করে কেন্দ্রীয় মাদ্রাসার প্রশাসনিক কর্মকান্ড এবং ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়ায় ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।
মাওলানা ওজায়ের ম্যানেজিং কমিটিকে তোয়াক্কা করেন না। মাদ্রাসার বিভিন্ন কর্মকাণ্ড সভাপতি এবং সমিটির সদস্যদের অবহিত করেন না বা পরামর্শ গ্রহন করেন না।
পেশাগত কারণে সভাপতি ঢাকায় থাকেন। সেহেতু সহ-সভাপতি, জমি দাতা সদস্যের মাধ্যমে ঘনঘন কমিটির মিটিং করার কথা থাকলেও এবং সভাপতি নির্দেশ দিলেও মিটিং কল করেন না। সভাপতির চাপে মিটিং দিলেও নিজের সুবিধামতো এজেন্ডা দেন। সভাপতি পেশাগত কর্মব্যস্ততার মাঝেও প্রায়ই এলাকায় আসেন নিজ গ্রামে তার হাতে প্রতিষ্ঠিত জনকল্যানমূলক প্রকল্পগুলো দেখাশুনা করতে। আসার আগে মাদ্রাসার অধ্যক্ষকে অবহিত করেন। যাতে কমিটির মিটিং ও শিক্ষকদের সাথে মতবিনিময় সভার ব্যবস্থা করা হয় কিন্তু অধ্যক্ষ কর্ণপাত করেন না। কারণ মিটিং এ বসলে অধ্যক্ষের নানান অনিয়ম সহ দোষ ত্রুটি আলাপ হবে।
ডজন মামলা :
অধ্যক্ষ ওজায়েরের নামে নাশকতা , রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা সহ ডজন খানেক অন্যান্য মামলার আসামি। তিনি চারটি মামলার ওয়ারেন্টে জামিন প্রাপ্ত ও চার্জসীটভুক্ত আসামী। আদালতে বিচার চলমান। লোকমুখে প্রচলিত তিনি জামাত শিবিরের অর্থ যোগানদাতা ।
গৃহ পরিচারিকা ধর্ষণ ও হত্যা মামলার আসামি।
তিনি নিজ গৃহে পরিচারিকাকে ধর্ষণ করেন। নাবালিকা মেয়েটি তার বাবাকে বলে দিতে চাইলে মেয়েটিকে হত্যা করে দীর্ঘদিন জেলে থাকেন। চেষ্টা তদবীর করে জেল থেকে মুক্তি পান এবং মেয়েটির বাবাকে অর্থ দিয়ে ভারতে পাঠিয়ে দেন।
জমি-জমা সংক্রান্ত মারামারি, খুনাখুনি, জখমের কারণে ওয়ারেন্ট ভুক্ত আসামি জামিনে আছেন। মসজিদে দাড়িয়ে ষষ্ঠ শ্রেণীর পাঠ্যপুস্তকে ভুল ও আপত্তিকর তথ্য দিয়ে জোরালো ভাষায় সরকার বিরোধী প্রচারনা ও জনগণ/মুসুল্লিগনের মধ্যে বিতর্কের সৃষ্টি করেন। এ কারণে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা হয়। এ মামলায় তিনি চার্জশিট ভুক্ত আসামি।
অবৈধ সম্পদ :
প্রাইভেট কার,কয়েকটি মোটরসাইকেল ,৩০/৪০ বিঘা জমি ক্রয় , এয়ার কন্ডিশন বিলাসবহুল বাড়ি,ইটের ভাটা ও বিভিন্ন সমিতিতে মুনাফায় টাকা খাটিয়ে ব্যবসা। প্রাইভেট মাদ্রাসা যা এলাকার মানুষকে হতভাগ করেছে ।
মাদ্রাসার সময় দেন কম :
অধ্যক্ষ ওজায়ের মাদ্রাসায় নিয়মিত সময় দেন না। তিনি বেশি সময় দেন মাওলানা শফিকুল ইসলামের প্রতিষ্ঠিত আল-মারজান ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট মাদ্রাসায়। এই মাদ্রাসার সঙ্গে তিনি ব্যবসায়িক পার্টনার। সেখানেও নিয়োগ বাণিজ্য চালাচ্ছেন। তার অবৈধ নিয়োগকৃত শফিকুল মাদ্রাসায় হাজিরা স্বাক্ষর করে চলে যান ব্যক্তিগত মাদ্রাসা আল মারজানে। তিনি কেন্দ্রীয় মাদ্রাসায় নিয়মিত পাঠদান করান না।মাদ্রাসার শিক্ষকরা এ তথ্য জানিয়েছেন । শিক্ষকরা আরো জানান, অধ্যক্ষের ভয়ে তারা মুখ খুলতে পারেন না।
মাদ্রাসার সহ: সুপার প্রভাষক মোস্তফা শাহজাহান সিরাজ, এ বিষয়ে বলেন মাদ্রাসাটি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। অধ্যক্ষ সরকার বিরোধী কর্মকাণ্ডের কারণে রাষ্ট্রদ্রোহী মামলার আসামী।শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে তিনি লাখ লাখ টাকার দুর্নীতি করেছেন। তিনি জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে প্রতিষ্ঠানে আরবি প্রভাষক হিসেবে মোঃ শফিকুল ইসলামকে নিয়োগ দিয়েছেন।
প্রতিষ্ঠানের সভাপতির স্বাক্ষরও জাল করেছেন।
মাদ্রাসার নিকটবর্তী হায়বাতপুর ও মাজাট গ্রামের অধিবাসীরা জানান , অধ্যক্ষ ওজায়েরুল ইসলাম আপাদমস্তক দুর্নীতিগ্রস্ত। তিনি ম্যানেজিং কমিটিকে মূল্যায়ন করেন না। রাষ্ট্রদ্রোহী কর্মকান্ডের চার্জশিট ভুক্ত আসামি। প্রতিষ্ঠান নিয়ে লাখ লাখ টাকার বাণিজ্য করেছেন।এর একটা বিহিত হওয়া প্রয়োজন।
মাদ্রাসার ভূমি দাতা সদস্য সরকারি অধ্যাপক শহিদুল ইসলাম জানান, আমাদের দানকৃত পারিবারিক সম্পত্তির ওপর প্রতিষ্ঠানটি গড়ে উঠেছে। শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক চলছে। লাখ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে শুনেছি।
ম্যানেজিং কমিটির সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মাস্টার নজরুল ইসলাম বলেন,সভাপতি সাহেবের সাথে মাদ্রাসা অধ্যক্ষের ভাইস প্রিন্সিপাল নিয়োগ নিয়ে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়েছে। সভাপতির অভিযোগ রেজুলেশনে তার স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে। এ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে কথা হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির যাতে ক্ষতি না হয় সেভাবে রিপোর্ট করো।
ম্যানেজিং কমিটির সদস্য শ্যামনগর সরকারি মহসিন কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আবুল হোসেন বলেন, অধ্যক্ষ ওজায়েরুল ইসলাম হরকতুল জেহাদের লোক বলে শুনেছি। আচার আচরণ পীর সাহেবের মত হলেও ভেতরটা কয়লার মত। তিনি ইতিপূর্বে শ্যামনগরের আবাদ চন্ডিপুর মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ছিলেন। সে মাদ্রাসাটি ধ্বংস করে এখন এই মাদ্রাসায় তিনি অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পেয়েছেন। ম্যানেজিং কমিটির মিটিংয়ে আমাদেরকে ডাকেন না। যাদের দানকৃত সম্পত্তির ওপর প্রতিষ্ঠান দাঁড়িয়ে আছে তাদেরকেও মূল্যায়ন করেন না। স্বেচ্ছাচারিতা,অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি ধ্বংসের মুখোমুখি নিয়ে এসেছেন।
যাকে নিয়ে বিতর্কের শুরু সেই প্রভাষক শফিকুল ইসলাম বলেন, আমি প্রতিষ্ঠানে বিধিসম্মত ভাবে প্রভাষক পদে নিয়োগকৃত। আমাকে নিয়ে যেসব বিতর্ক হচ্ছে এটি সঠিক নয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মিনিস্ট্রি অডিটে আমার নিয়োগ বৈধ বলে বিবেচিত হয়েছে। ইতিপূর্বে আমার বিরুদ্ধে ভাইস প্রিন্সিপাল পদে ডিজি বরাবর যে অভিযোগ হয়েছিল সেটির সত্যতা প্রমাণিত হয়নি। একটি মহল আমার এবং অধ্যক্ষ সাহেবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।
মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এএএম ওজায়েরুল ইসলাম বলেন,আমার বিরুদ্ধে সকল আনীত অভিযোগ ভিত্তিহীন।আমার নামে যেসব মামলা ছিল সকল মামলা থেকে আমি খালাস পেয়েছি। সরকার বিরোধী বক্তব্যের অভিযোগে আমার নামে যে রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা ও পরবর্তীতে চার্জশিট হয়েছিল সে মামলা থেকেও আমি নিষ্কৃতি পেয়েছি বলে জানান তিনি।
মাদ্রাসা সভাপতি ডাক্তার এম. এ জলিল বলেন, আমাদের পারিবারিক সম্পত্তিতে মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠিত। দীর্ঘকাল আমরা প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্ব পালন করছি। বিগত সময়ে এই প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ ছিলেন মাওলানা ইসমাইল হোসেন। তাকে নিয়ে কখনো বিতর্ক সৃষ্টি হয়নি। কিন্তু বর্তমান অধ্যক্ষ দুর্নীতিতে সিদ্ধহস্ত এবং চরম মিথ্যাবাদী। মাদ্রাসা নিয়ে তিনি লুটপাট শুরু করেছেন। লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। আমার স্বাক্ষর জাল করে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে অবৈধভাবে নিয়োগকৃত ভাইস প্রিন্সিপাল শফিকুল ইসলামের বেতন ছাড়াতে গিয়ে ধরা খেয়েছেন। এ ব্যাপারে আমি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর অভিযোগ করেছি।