বি. এম. জুলফিকার রায়হান ::
তালার হাতবাস গ্রামে নোটবুকে চিরকুট লিখে মৃত্যুর জন্য প্রেমিককে দায়ী করে কলেজ ছাত্রীর আত্মহত্যার ঘটনায় এলাকায় তোলপাড় চলছে। ঘটনার পরপরই প্রেমিক রিপন বাড়ি থেকে পালিয়ে গেলেও এলাকার মানুষ তার গ্রেফতার পূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবীতে সোচ্ছার হচ্ছে। অপরদিকে তানায় আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা দায়ের হবার পর থেকে পুলিশ লম্পট প্রেমিক রিপন সরকার ও তার পিতা বিকাশ সরকারকে গ্রেফতারের জন্য পুলিশ অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে।
সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার হাতবাস গ্রামের দরিদ্র মিঠুন সরকারের মেয়ে প্রিয়াংকা সরকারের সাথে একই গ্রামের আর্থিক স্বচ্ছল খ্রিষ্টান ধর্মের হাউজ চার্চ পালক বিকাশ সরকারের ছেলে রিপন সরকারের দীর্ঘদিন প্রেম চলছিল। রিপন ও প্রিয়াংকা উভয়ে সাতক্ষীরায় অনার্স অধ্যয়নরত। এই প্রেমের বিয়েতে প্রিয়াংকার পরিবার রাজি হলও প্রেমিক রিপনের পিতা পালক বিকাশ সরকার আপত্তি তোলে। একপর্যায়ে রিপনও প্রেমকে অস্বীকার করতে থাকে। এনিয়ে সম্পর্কের দূরত্ব তৈরি হলে শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে প্রিয়াংকা সরকার নিজ ঘরের মধ্যে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। আত্মহত্যার আগে প্রিয়াংকা একটি নোটবুকে মৃত্যুর জন্য প্রেমিক রিপনকে দায়ী করে লিখে রেখে যায়। সেখানে লেখা ছিল- তুমি আমাকে কথা দিয়েছিলে চেড়ে যাবে না, তাই যায় হয়ে যাক। তুমি ঠকিয়েছো আমাকে। তুমি শেষ করে দিলে সবকিছু। আমার মৃত্যুর জন্য তুমি দায়ী রিপন। তুমি দায়ী রিপন। রিপন দায়ী। সেখানে আরও লেখা ছিল- তোমার মতো কেউ ভাল বাসবেনা আমাকে। আবার তোমার মতো ক্ষতি করবে না কেউ। বাই (ভাল থেকো) (রিপন প্রিয়াংকা)। নোটবুকের ওই একই পৃষ্ঠায় চিরকুটের উপরের অংশে রিপন নিজ হাতে প্রিয়াংকাকে কিছু নির্দেশনা লিখে দেয়। যেখানে রিপন প্রিয়াংকার উদ্দেশ্যে লেখে- ০১। যারা ব্যাড তাদের সাথে চলাফেরা করা যাবেনা, ০২। এমন কোনও বান্ধবী থাকবে না যে খারাপ, ০৩। ক্লাস টাইম শেষ হলে আমার ডিপার্টমেন্ট এর কাছে আসবা। লেখার শেষাংশে রিপনের স্বাক্ষর রয়েছে।
এদিকে অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রিয়াংকার সাথে সম্পর্ক খারাপ হওয়ায় রিপন ক্ষুব্ধ হয়ে ফেসবুকের একটি ফেক আইডির মাধ্যমে তাদের কিছু অনৈতিক এবং নগ্ন ছবি ও ভিডিও ফেসবুক সহ ম্যাসেঞ্জারে ছড়িয়ে দেয়। এতে ক্ষোভে, লজ্জায় প্রিয়াংকা আত্মহত্যা করে। আত্মহত্যা ঘটনার সংবাদ পেয়ে তালা থানা পুলিশ শুক্রবার বিকালে প্রিয়াংকার মৃতদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। ওইদিন রাতে প্রিয়াংকার পিতা বাদী হয়ে লম্পট প্রেমিক রিপন ও তার পিতা বিকাশ সরকারের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করেন।
এব্যপারে তালা থানার ওসি মো. মমিনুল ইসলাম জানান, আত্মহত্যার ঘটনায় মেয়ের পিতা মিঠুন সরকার বাদী হয়ে শুক্রবার রাতে তালা থানায় রিপন ও তার পিতা বিকাশ সরকারের বিরুদ্ধে আত্মহত্যার প্ররোচনার দায়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। আত্মহত্যার পরপরই রিপন ও তার পরিবারের সদস্যরা বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ায় কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। তবে, এজাহার নামীয় আসামীদের গ্রেফতারের অভিযান অব্যাহত আছে। শনিবার সকালে সাতক্ষীরা মর্গ থেকে কলেজ ছাত্রীর মৃতদেহের ময়না তদন্ত শেষে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
##