গোলাম সরোয়ার ::
এতিম ও প্রতিবন্ধি ছেলে-মেয়েদের কারিগরি শিক্ষা গ্রহনের খুলনা বিভাগীয় প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটির সমস্যার অন্ত নেই। দেড় যুগেও নিয়োগ দেয়া হয়নি জনবল নিয়োগ। প্রশিক্ষকের অভাবে নষ্ট হচ্ছে মুল্যবান মেশিনারীজ, কম্পিটার, এমব্রয়ডারীসহ অন্যান্য সব সরকারী সম্পদ।
২০০৬ সালে নির্মান করা হয় সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলা সদরে খুলনা বিভাগীয় সরকারী প্রশিক্ষন কেন্দ্র। এখানে যে সব কারিগরি প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা রয়েছে তা হলো গার্মেন্টস্ , এমব্রয়ডারী, টেইলারিং, উডনিটিং, জুট ওয়ার্কাস, বাটিক্স প্রিন্টিং, বিউটিফিকেশন, ক্রিষ্টামাল ওয়ার্কাস, উড ওয়ার্কাস, উড কার্ভিং, এ্যানিমেল হাসবেন্ড্রী এন্ড পোল্ট্রি, কম্পিউটার অফিস অ্যাল্পিকেশন, মবিলিটি শারীরিক, মেশিনারী ওয়ার্কসপ, অটোমোবাইল, ইলেকট্রিক্যাল এবং ইলেকট্রনিক্স।
কিন্ত এই সরকারী প্রতিষ্ঠানটি শুরু থেকেই নানা সমস্যায় জর্জরিত। গেল দেড় যুগেও নিয়োগ দেয়া হয়নি জনবল। জনবলের অভাবে নষ্ট হচ্ছে মুল্যবান বিভিন্ন প্রকার মেশিনারীজ, কম্পিটার, এমব্রয়ডারীসহ অন্যান্য সব সরকারী সম্পদ। তাছাড়া আবাসিক প্রশিক্ষনার্থীদের তিন বেলা যে খাওয়ার বরাদ্ব রয়েছে তা খুবই অপ্রতুল। লবণাক্ত এলাকার কারনে রয়েছে সুপেয় পানির সংকট।
সংশ্লিষ্টদের জানান, জনবল চেয়ে অসংখ্যবার সমাজ কল্যান মন্ত্রনালয়ে পত্র প্রেরণ করেও অদ্যবধি কোনো লাভ হয়নি। সংশ্লিষ্টরা আরো জানান, শুধু জনবলই নানা ধরনের সংকট নিয়ে চলছে এ সরকারী প্রতিষ্ঠানটি।
স্থানীয় আশাশুনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এস.এম হোসেনুজ্জামান বলেন, খুলনা বিভাগের মধ্যে একমাত্র এতিম ও প্রতিবন্ধি ছেলে-মেয়েদের কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি নির্মিত হয়েছে আশাশুনি উপজেলা সদরে। এটি সাতক্ষীরাবাসির জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি। কিন্ত অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি নির্মিত হওয়ার পর অদ্যবধি চাহিদা অনুযায়ী কোনো জনবল নিয়োগ দেয়া হয়নি। এখানে দক্ষ প্রশিক্ষক নিয়োগ দেয়া হলে তার সুফল পাবে প্রশিক্ষনার্থীরা। তিনি জরুরী ভাবে জনবল নিয়োগ দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ঠদের প্রতি আহবান জানান।
এব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে আশাশুনি এতিম প্রতিবন্ধি ও ছেলে-মেয়েদের কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সহকারী পরিচালক ফারুক হোসেন জানান, খুলনা বিভাগের জন্য এতিম ও প্রতিবন্ধি ছেলেমেয়েদের কারিগরি প্রশিক্ষণের জন্য সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলা সদরে সাড়ে ৬ বিঘা জমির উপর ২০০৬ সালে নির্মান হয় এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি। যার মধ্যে একটি প্রশাসনিক ভবন, হোষ্টেল ভবন একটি, একাডেমিক ভবন একটি, কোয়ার্টার ভবন একটি, ব্যাচেলর কোয়ার্টার ভবন একটি, ৪র্থ শ্রেণীর কোয়ার্টার ভবন একটি এবং ওয়ার্কসপ টিন শেড একটি। এসব প্রতিষ্ঠানের অনুকুলে এখানে পদ রয়েছে ২৬ টি। তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানটির নির্মান সাল ২০০৬ হলেও কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৩ সালে। ২৬ টি জনবলের বিপরিতে ছয়জন জনবল দিয়ে এই বিশাল প্রতিষ্ঠানটি চালু করা হয়। এই ছয়টি পদ হচ্ছে সহকারী পরিচালক একজন, স্টোর কিপার একজন, হাঁসমুরগী প্রশিক্ষক একজন, ফার্নিচার প্রশিক্ষক একজন এবং কেয়ারটেকার একজন। বাকি ২০টি শুন্য পদে আজও জনবল নিয়োগ দেয়া হয়নি। জনবল চেয়ে সমাজ কল্যান মন্ত্রনালয়ে একাধিকবার পত্র প্রেরণ করেও কোনো লাভ হয়নি। তবে মাঝে মধ্যে আউটসোর্সিং জনবল নিয়ে কিছু কার্যক্রম চালালো হয়। এছাড়া আবাসিক প্রশিক্ষনার্থদের তিন বেলা খাওয়ার জন্য দৈনিক ১০০ টাকা হারে বরাদ্ধ থাকলেও ভ্যাট ও অন্যান্য খরচ বাবদ সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ২০ টাকা কর্তন করে অবশিষ্ট ৮০ টাকা খাওয়ার বাবদ পাওয়া যায়। তিনি বলেন, বর্তমান বাজার মুল্যে ৮০ টাকায় একজন ছেলেকে তিন বার খাওয়ানো সম্ভব হয় না। লবণাক্ত এলাকার কারনে রয়েছে সুপেয় পানির সংকট। তিনি আরো বলেন, প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি ছেলে-মেয়েদের হলেও এখন কেবল ছেলেদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। ১০০টি আসনের বিপরিতে ৭০ জন প্রশিক্ষণ নিচ্ছে বলে জানান তিনি। তিনি জনবলসহ অন্যান্য বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট অনুরোধ জানান।
এব্যাপারে সাতক্ষীরা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সন্তোষ কুমার নাথ বলেন, আশাশুনি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের জন্য জনবল চেয়ে একাধিকবার মন্ত্রনালয়ে পত্র প্রেরণ করা হয়েছে। কিছুদিন আগেও আরেক দফা পত্র দেয়া হয়েছে। জনবল নিয়োগ হলে বিদ্যমান সমস্যা দুর হবে বলে জানান তিনি।
##